খন্দকার শাহ আলম মন্টু:
চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত সাংবাদিকদের অন্যতম অভিভাবক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক দৈনিক আকাশ খবর পত্রিকার প্রকাশক ও বিজ্ঞ আইনজীবী তছিরুল আলম মালিক ডিউকের সাথে আমার পরিচয় হয় ১৯৯২ সালে। তখন আমি ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক খবর পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতাম। তখন থেকেই তার সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ পাই। অ্যাডভোকেট তছিরুল আলম মালিক ডিউক একজন অভিজ্ঞ প্রকৃত সাংবাদিক ছিলেন, যিনি সবসময় দেশপ্রেমের কথা বলেছেন, স্বাধীনতার কথা বলেছেন, মানুষের অধিকার আদায় ও ন্যায্যতা নিশ্চিতের কথা বলেছেন, নিজ সম্প্রদায়ের মানুষের উন্নয়ন ও অগ্রগমনের কথা বলেছেন, কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার চর্চা করেননি কখনো। অ্যাডভোকেট তছিরুল আলম মালিক ডিউক ছিলেন একজন বহুমাত্রিক মানুষ। এক জীবনকে তিনি আগুনের পরশমনিসম করে তুলেছিলেন নানা কর্ম ও অবদানে। যে জীবন তিনি যাপন করে গেছেন, সময়ের নিরীখে তা যেমন ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়, তেমন কর্মাভিজ্ঞতাও ইতিবাচক মানুষ মাত্রই সকলের কাছে অমূল্য এক সম্পদ। সাংবাদিক-সম্পাদকের বাইরে রাজনৈতিক ও সাহিত্যিক হিসেবে ছিলেন প্রথিতযশা। বাংলা ভাষার স্যাটায়ার লিটারেচার বা ব্যঙ্গ সাহিত্যকে উচ্চকিত করেছেন ঈর্ষণীয় এক স্থানে।
ব্যক্তি-সমাজ ও প্রতিষ্ঠানকে দেখার ক্ষেত্রে ছিলেন আক্ষরিক অর্থেই বিরল প্রতিভার অধিকারী। এবং এসবের স্বরূপ নির্ণয় ও বিশ্লেষণে ছিলেন ক্ষুরধার, আপসহীন ও নির্মোহ এক সৃজনশিল্পী। রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি চুয়াডাঙ্গা আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত ছিলেন জীবনের নানান পর্বে। একজন রাজনীতিবিদের যে স্বপ্ন ও প্রত্যাশা থাকে ন্যায়সঙ্গত নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতা কাঠামোর শীর্ষে যাওয়ার, সেখানেও তিনি সফল হয়েছিলেন এবং সার্থকভাবে নিজের ধীশক্তি ও রাজনৈতিক প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিলেন।
তিনি আইন পেশায় যুক্ত ছিলেন জীবনের কয়েক পর্বে। আইন পেশার সঙ্গে ব্যবসা শব্দের গভীর যোগসূত্র থাকলেও এবং ‘আইন ব্যবসা’ রূপে এর সর্বজনীন পরিচিতি গড়ে উঠলেও তিনি আইন পেশাকে ব্যবসা হিসেবে নেননি। বরং এখানেও তিনি সুযোগ বঞ্চিত, অধিকার হারা, ন্যায্যতা থেকে উপেক্ষিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন। একজন প্রকৃত সাংবাদিকের সবকিছুকে দেখার, বিশ্লেষণ করার সর্বোপরি সবকিছুকে প্রশ্ন করার যে চোখ তৈরি হয় সেই বৈশিষ্ট্য সহজাতভাবেই তার ভেতরে বিদ্যমান ছিল। মুষ্টিমেয় কয়েকজন সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের বাইরে বর্তমানের সাংবাদিক সমাজ, সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্র দিয়ে তছিরুল আলম মালিক ডিউক সাংবাদিকতার স্বরূপ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে উপলব্ধি ও আবিস্কার করা কেবল দুরুহ নয়, অসম্ভবও বটে। বর্তমানের সাংবাদিকতা যেখানে নানা রকমের স্বার্থসিদ্ধির এবং ব্যক্তি ও সমষ্টির আখের গোছানোর হাতিয়ার, সেখানে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণত ভিন্ন মেরুর একজন বাসিন্দা। সেসবের দিকে দৃষ্টি ফেরালে আমাদের কেবলই মনে হবে এ যেন রূপকথার গল্প। কিন্তু না, সেটা কোনভাবেই কোন ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ থেকে সংগ্রহ করা উপকথা বিশেষ নয়। এ গল্প একজন রক্তমাংসের মানুষের গল্প, জীবনভর যিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন মানুষে মানুষে সাম্য, ন্যায্যতা ও সম উন্নয়নমুখী অধিকার প্রতিষ্ঠার।
সম্পাদকরূপে এবং পূর্ণ সম্পাদক হিসেব যখন যে সংবাদপত্রের হাল ধরেছেন সেটাকেই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। পাঠকপ্রিয়তার সকল উপকরণ ও উপাদান জোগানোর ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন ঈর্ষণীয় একজন সাংবাদিক-সম্পাদক। -সভাপতি, আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাব।