প্রায় মাস তিনেক আগে থেকেই চুয়াডাঙ্গা সদর পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছিলো। তফসিল ঘোষনার পর মাঠ থেকে কেন্দ্র, সবজায়গায় ছিলো প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের সরব তৎপরতা। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো থেকে প্রার্থী চূড়ান্ত করে মনোনয়ন দেয়ার পর সেই আমেজে অনেকটা ভাটা পড়েছে। কেননা বড় রাজনৈতিক দল দুটি থেকেই বাদ পড়েছেন হেভিওয়েট প্রার্থীরা। আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থীরাই ছিলেন আলোচনার বাইরে। যার কারণে নির্বাচন এখন চায়ের কাপ ও এলাকার মোড়ের আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ। নির্বাচনী মাঠে গড়াইনি উত্তাপ।
এবারের পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী রদবদল ও চমক দেখা গেছে ক্ষণে ক্ষণে।
নির্বাচনের ডামাডোল শুরুর আগে থেকেই মাঠ চাঙ্গা করেন জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন। বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে আলোচনা-মতবিনিময় সভায় মিলিতও হন তিনি। সেখান থেকে তার পক্ষে সমর্থন পাওয়া যায়। সে হিসেবে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছিলেন তিনি। তৃণমূল থেকে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন ও শরীফ হোসেন দুদুর নাম উল্লেখ করে একটি তালিকা পাঠানো হয়। গত ২৮ নভেম্বর তালিকার প্রথমে থাকা রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটনকে প্রাথমিকভাবে নৌকা প্রতীক দেয়া হয়। পরবর্তীতে সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তালিকার দুই নম্বরে থাকা জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকনকে নৌকা প্রতীকের চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করে কেন্দ্র।
এদিকে পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহ্বায়ক ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু পক্ষের সমর্থকরাও নৌকা প্রতীকের জোড় দাবীদার ছিলো। বর্র্তমান সময়ের উন্নয়ন চিত্র ও জিপুর ক্লিন ইমজেকে পুজি করে মনোনয়ন দৌঁড়ে অংশ নিলেও তাকে দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হতে হয়। হেভিওয়েট দুই নেতার মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়া নিয়ে বেশ আলোচনা চলে। তবে তাদের দুজনের একজনও মনোনয়ন না পেলে আলোচনার ঝড় প্রশমিত হয়। উত্তাপ কমতে থাকে নির্বাচনের।
সকল আলোচনার টেবিলকে পাশ কাটিয়ে দলীয় প্রতীক বাগিয়ে নেয়া আওয়ামীলীগ থেকে মনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন ও বিএনপি থেকে মনোনীত প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম মনি দুজনই বর্তমান ওয়ার্ড কাউন্সিলর। মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই নানা নাটকীয়তার পর দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন নৌকা ও ধানের শীষের দুই প্রার্থী।
অন্যদিকে বিএনপি থেকেও অন্তত পাঁচজন প্রার্থীর মাঠে দেখা যায়। এদের সবাই মনোনয়ন দৌঁড়ে অংশ নেয়। তবে জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক মজিবুল হক মালিক মজু, খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা ও বিএনপি নেতা আক্তারুজ্জামানের নাম এগিয়ে সামনে ছিলো। এদের সবাইকে পাশ কাটিয়ে সিরাজুল ইসলাম মনি মনোনয়ন বাগিয়ে নেন। জেলা বিএনপির একাংশের নেতা শরীফুজ্জামান শিবিরের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ দেখা গেলেও বড় অন্য একটি অংশের নেতাকর্মিদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ উদ্দীপনায় ভাটা পড়েছে। শরীফুজ্জামান পক্ষের নেতাকর্মীরা ছাড়া বিএনপি প্রার্থীর মনির পক্ষে কাউকে নির্বাচনে অংশ নিতেও দেখা যাচ্ছেনা।
তফসিল অনুযায়ী, গত ১ডিসেম্বর ছিলো প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিন। সেদিনই নির্বাচনের অনেক প্রশ্নের উত্তর খুজে পাই পৌরবাসী। মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিনের তথ্য বলছে, মেয়র পদে দলীয় ৩জনসহ মোট ৮জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তারা হলেন চুয়াডাঙ্গা পৌর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন (আওয়ামী লীগ), জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সিরাজুল ইসলাম মনি (বিএনপি), তুষার ইমরান (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ), জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মজিবুল হক মালিক মজু (স্বতন্ত্র), জেলা যুবলীগের সদস্য শরীফ হোসেন দুদু (স্বতন্ত্র), ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সদস্য মনিবুল হাসান পলাশ (স্বতন্ত্র), সৈয়দ ফারুক আহমেদ (স্বতন্ত্র) ও তানভীর আহমেদ (স্বতন্ত্র)।
এছাড়াও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে তিনটি ওয়ার্ডের মধ্যে ১ নং ওয়ার্ডে ৪ জন, ২ নং ওয়ার্ডে ৩ জন ও ৩ নং ওয়ার্ডে ৬ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন।
এদের মধ্যে রয়েছেন, ১নং তথা ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডে শাহিনা আক্তার, নাসরিন পারভিন, চাঁদনী খাতুন ও সুফিয়া খাতুন। ২নং তথা ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডে বিলকিস নাহার, সুলতানা আঞ্জু ও হাসিমা খাতুন। ৩নং তথা ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডে শাহানা খাতুন, মোমেনা খাতুন, জাহানারা খাতুন, শেফালী খাতুন, জাহানারা বেগম ও আন্না খাতুন।
নয়টি ওয়ার্ডের মধ্যে সাধারণ কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন দাখিল করেছেন মোট ৬৬জন। ১নং ওয়ার্ডে ৮ জন, ২নং ওয়ার্ডে ৯ জন, ৩নং ওয়ার্ডে ৭ জন, ৪নং ওয়ার্ডে ৫ জন, ৫নং ওয়ার্ডে ৮ জন, ৬নং ওয়ার্ডে ৭ জন, ৭নং ওয়ার্ডে ৮ জন, ৮নং ওয়ার্ডে ৬ জন এবং ৯নং ওয়ার্ডে ৮ জন।
তাদের মধ্যে ১নং ওয়ার্ডে জাহাঙ্গীর আলম, বিল্লাল হোসেন বেল্টু, আব্দুল মালেক, আলমগীর হোসেন, মুনছুর আলী, জয়নাল আবেদীন, গোলজার হোসেন পিন্টু ও মোমিনুর রহমান। ২নং ওয়ার্ডে মুন্সী মো. রেজাউল করিম খোকন, কামরুজ্জামান বাবলু, মহিবুল ইসলাম, আলী হোসেন, খাইরুল হক, আব্দুল আজিজ জোয়ার্দ্দার, আবুল কালাম, আজিজুর রহমান ও আজম আলী মিলন। ৩নং ওয়ার্ডে নাজরিন পারভীন, আলমগীর হোসেন, জাহিদ হোসেন জুয়েল, জাহিদুল ইসলাম সোহেল, আমিরুল ইসলাম, মহলদার ইমরান ও শরিফ আহমেদ। ৪নং ওয়ার্ডে শেখ সেলিম, দেলোয়ার হোসেন দয়াল, ফজলে রাব্বি মুন্সী, তারিকুজ্জামান ও মাফিজুর রহমান। ৫নং ওয়ার্ডে নাজমুল হক মিন্টু, মুন্সী আলাউদ্দিন আহম্মেদ, গোলাম মস্তফা শেখ মাস্তার, সাইফুদ্দিন সবুর, আলম, আসাদুজ্জামান সবুজ, শাহীন উর রশিদ ও মিজানুর রহমান। ৬নং ওয়ার্ডে আব্দুল মান্নান জোয়ার্দ্দার, মোনাজাত শেখ, আজাদ আলী, আলামিন ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, ফরজ আলী শেখ ও রাশেদুল হাসান। ৭নং ওয়ার্ডে উজ্জ্বল হোসেন, মজনুল হক, আবুল হোসেন, সুমন হোসেন, সাইফুল আরিফ বিশ্বাস, আশাবুল হক, জয়নাল আবেদীন ও খালিদ মন্ডল। ৮নং ওয়ার্ডে ফিরোজ শেখ, মো. আহসান, শের আলী বিশ্বাস, টুটুল মোল্লা, সাইফুল ইসলাম ও আবু কাউসার বিশ্বাস। ৯নং ওয়ার্ডে সুমন আহমেদ, আলাউল ইসলাম, মফিজুর রহমান মনা, আমান উল্লাহ, ইব্রাহিম শেখ ইমরান, আতিয়ার রহমান জোয়ার্দ্দার, কামরুজ্জামান চাঁদ ও শহিদুল কদর জোয়ার্দ্দার।
এদের মধ্যে গত ৩ডিসেম্বর মনোনয়ন যাচাই বাছাইয়ে বাদ পড়েন দুইজন কাউন্সিলর প্রার্থী। ৫ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী আসাদুজ্জামান সবুজের ২৫ বছর পূর্ণ না হওয়ায় তার প্রার্থীতা বাতিল হয়। এছাড়া ৯নং ওয়ার্ডের সাধারন কাউন্সিলর কামরুজ্জামান চাঁদের প্রার্থীতা বাদ পড়েছে। ব্যাংকে ৫ হাজার ৬শ টাকা বকেয়া থাকায় প্রার্থীতা বাতিল হয়।
আগামী ১০ডিসেম্বরের মধ্যে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে। ১১ডিসেম্বর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। ২৮ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।