নিজস্ব প্রতিবেদক:
নতুন এক ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামীলীগ। যা দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে নতুন এক দৃষ্টান্তস্থাপন করবে। একেবারে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আদলে তৈরি করা হচ্ছে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কার্যালয়। ইতিমধ্যে নতুন ভবনের ৮০ শতাংশ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের নতুন ভবনটি ঘিরে দলটির সব পর্যায়ের নেতাকর্মিদের মধ্যে দারুণ এক উত্তেজনা কাজ করছেন। দলটির দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের নতুন ভবনটি উদ্বোধন হবে চলতি মার্চ মাসের শেষ দিকে। মামনীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়েই উদ্বোধনের ইচ্ছে রয়েছে। তিনি সময় ও ইচ্ছে ব্যক্ত করলে নতুন এক ইতিহাসের জন্মহবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, চুয়াডাঙ্গার জন্য তো বটেই, জেলাভিত্তিক রাজনীতিতে নতুন এক মাত্রা তৈরি করছে চুয়াডাঙ্গা আওয়ামী লীগ। যার পিছনে নিরলস শ্রম মেধা, আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন বর্ষিয়ান নেতা চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের টানা কয়েকবারের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি। তাদের মতে জন্মের পর থেকে ভাড়া ও নিজ বাড়িতে রাজনৈতিক অফিসের যে বৃত্ত তৈরি হয়েছিল সেই বৃত্ত ভেঙ্গে আপন ঠিকানা পেতে যাচ্ছে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগ। যা আওয়ামী লীগের জন্য ইতিহাস বটেই।
জেলা আওয়ামীলীগ সূত্র বলছে, অস্থায়ী কার্যালয়ের চাপরাস কাটিয়ে নতুন দৃষ্টিনন্দন ভবনে ঠাঁই পেতে যাচ্ছে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগ গঠন ও মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই জেলায় আওয়ামী লীগের স্থায়ী কোন কার্যালয় ছিলনা। তবে এবার জেলা আওয়ামী লীগের নীতিনির্র্ধারকদের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ভবনের আদলে গড়ে উঠছে নিজস্ব ভবন। ইতিমধ্যে ভবনটির কাজ প্রায় শেষ। এখন চলছে ফ্লোরিং ও রং তুলির আচড়ের কাজ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি মার্চ মাসের শেষাংশে উদ্বোধন করা হবে জেলার অত্যাধুনিক দলীয় এ কার্যালয়টি। দৃষ্টিনন্দন ভবনটি নির্মানের পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহন করেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন।
চুয়াডাঙ্গা শহরের শহীদ আবুল কাশেম সড়কের পৌরসভার মোড়ে প্রায় দুই শতক জায়গার উপর নির্মানাধীন এ ভবনে থাকছে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। পাঁচতলা ভবন বিশিষ্ট এ কার্যালয়ে কমন স্পেস, জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অফিস কক্ষ, কনফারেন্স রুমসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে ভবনটি।
দলটির প্রবীণ শীর্ষ নেতারা জানায়, মুক্তিযুদ্ধের আগে চুয়াডাঙ্গা শহরের শহীদ হাসান চত্বরের পুরাতন দোতালা ভবনে দলীয় কার্যক্রম চালানো হতো। যে যখন দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তার বসত বাড়িটিই দলীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হতো। তবে সেই বৃত্ত ভেঙে দীর্ঘদিন পর এবার জেলা আওয়ামী লীগ স্থায়ী ঠিকানা পেতে যাচ্ছে। স্থায়ী ঠিকানায় নতুন ভবন উদ্বোধনের পর আওয়ামী লীগের সব সাংগঠনিক কার্যক্রম চলবে এ কার্যালয় থেকেই।
গতকাল শনিবার বিকেলে ভবনটি ঘুরে দেখা যায়, পৌরসভা মোড়ের জেলা আওয়ামী লীগের নতুন পাঁচ তলা ভবনের কাজ প্রায় শেষ। দিনরাত চলছে শেষ মূহুর্তের ধোয়া মোছার কাজ।
ভবনটির অগ্রভাগেই রয়েছে ৮ ফুট উচ্চতা ও ৬ ফুট প্রস্থের বিশাল আকৃতির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। সিঁড়ি বেয়ে উঠতেই প্রথম তলার বেইজমেন্টে বিশাল জায়গাজুড়ে হলরুম। যা কমন স্পেস হিসেবে ব্যবহার করা হবে। সিঁড়ির পাশেই থাকছে একটি লিফট। ২য় তলায় নির্মিত হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারন সম্পাদক ও দপ্তর সম্পাদকের পৃথক অফিস কক্ষ। যার কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। ৩য় তলার পুরো কম্পাউন্ডজুড়ে থাকছে কনফারেন্স রুম। যেখানে আওয়ামী লীগের শতশত নেতাকর্মীরা একযোগে বৈঠকে মিলিত হতে পারবে। বাকি ৪র্থ ও ৫ম তলায় থাকছে জেলা আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, আওয়ামী মহিলা লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের জন্য ওপেন স্পেস। এসব তলায় নির্মান কাজ শেষ হওয়ার পর এখন আসবাবপত্র ও সাজগোজের কাজ চলছে।
ভবনটির নির্মাণশৈলী ও সাজসজ্জ্বাসহ নির্মানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের ইতিহাসে এটাই প্রথম স্থায়ী অফিস এবং জেলায় রাজনৈতিক দলের ইতিহাসে সর্বাধুনিক পার্টি অফিস।’
ভবনটির নির্মান ব্যয় সম্পর্কে জানতে চাইলে টোটন জোয়ার্দ্দার বলেন, ‘আমাদের দলের নিবেদিত কর্মীদের সহযোগীতায় গড়ে উঠেছে এ ভবন। সবাই যার যার জায়গা থেকে সুবিধামতো ভাবে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সে হিসেবে এখনো পর্যন্ত আনুমানিক ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে।’
রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন আরো বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের মাননীয় সাংসদ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ভাইয়ের সুপ্ত নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় এ ভবনের কাজ শুরু করা হয়। আমরা সকলে মিলে ভবন নির্মানে অংশ নিয়েছি। ভবনের কাজ ইতিমধ্যে শেষ পর্যায়ে। চলতি মার্চ মাসের শেষ দিকে ভবনের সকল কাজ শেষ করার পর উদ্বোধন করা হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের পদধারী নেতারা অভিন্ন ভাষায় জানান, আওয়ামী লীগের নতুন ভবন উদ্বোধন দলের নেতাকর্মীদের বাড়তি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। দীর্ঘদিন পরে নিজস্ব কার্যালয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই অফিস ব্যবহারের মধ্য দিয়ে পার্টির কার্যক্রম আরও বেগবান হবে।
২০১৯ সালের শেষের দিকে পাঁচতলা ভবনের এ নির্মান কাজ শুরু হয়।