নিজস্ব প্রতিবেদক:
১৯৫৮ সালের ১২ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গা শহরের রেলপাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন তছিরুল আলম মালিক ডিউক। ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ওবেদুল আলম মালিক ও হাজী আনোয়ারা আলম দম্পতির দ্বিতীয় পুত্র ছিলেন তিনি। জন্মের পর থেকেই বিভিন্ন ভালো কাজের মধ্য দিয়ে নিজের যোগ্যতার স্বাক্ষর দেন তছিরুল আলম মালিক ডিউক। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি নিজেকে নিয়োজিত করেন মানব সেবায়। জড়িয়ে পড়েন আওয়ামী রাজনীতির সাথে। হয়ে ওঠেন তুখোড় ছাত্র নেতা। ছাত্রলীগ নেতা থেকে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের ছাত্র সংসদ পরিষদের ভিপি নির্বাচিতও হন তিনি। তৎকালীন সময়ে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে ডিউক-হান্নান পরিষদ ছাত্র রাজনীতির মূল চালিকা শক্তি ছিলো। এছাড়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাথেও রাজনীতিতে অবদান রয়েছে তাঁর। পরে জেলা আওয়ামী কৃষকলীগের নেতৃত্ব দেন টানা ১৯ বছর। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত জেলা আওয়ামী কৃষকলীগের সাধারন সম্পাদক ছিলেন তিনি। এরপর ৭ বছর ধরে জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদকও ছিলেন তিনি।
এরইমধ্যে তছিরুল আলম মালিক ডিউক যোগ দেন আইন পেশায়। এজন্য তাকে সবাই অ্যাডভোকেট ডিউক নামেই চিনতেন। সুপরিচিত ছিল নানা কারণে। সেই ১৯৮৯ সাল থেকে আইন পেশায় জড়িয়ে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত করে গেছেন মানব সেবা। সব সময় লড়তেন ন্যায়ের পক্ষে। সুপ্রিম কোর্ট ও জেলা জজ কোর্টের বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় দায়িত্ব পালন করেছেন অ্যাড. ডিউক।
সংগ্রামী ও প্রতিবাদী এ ব্যক্তি আটকে থাকেননি শুধু একটি দিকে। বহুমুখী প্রতিভার অধিকার ব্যক্তিটি জড়িয়ে পড়েন সংবাদ মাধ্যমের সাথেও। আইন পেশার পাশাপাশি রাজনীতির সাথে হয়ে ওঠেন ন্যায় নিষ্ঠাবান সাংবাদিক। তাঁর জীবদ্দশায় সুদীর্ঘ ২৫ বছর কাজ করেছেন বাংলার বাণী পত্রিকায়। দৈনিক ভোরের খবর, ৭ দিনের বাংলা কাগজ এবং সাপ্তাহিক আভাস পত্রিকার সাবেক সম্পাদক ছিলেন তিনি। দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক খবর ও দি ডেইলী ট্রিবিউন পত্রিকায় জেলা প্রতিনিধি ছিলেন অ্যাড. ডিউক। পত্র পত্রিকার পাশাপাশি একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) ও চ্যানেল আই-তেও কাজ করেছে তিনি। এছাড়া বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় জেলা প্রতিনিধি ছিলেন অ্যাড. ডিউক। সবশেষ তিনি যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ বেতারের সাথে। দায়িত্ব পালন করেছিলেন চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক আকাশ খবরের প্রকাশক হিসেবে। সংবাদ মাধ্যমে কাজ করার সুবাদে তিনি চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমিতিসহ নানা সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
অ্যাড. ডিউকের থেমে থাকা এখানেই শেষ নয়। সামাজিকাভাবেও মানুষের পাশে দাঁড়াতে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িয়ে পড়েন অ্যাড. তছিরুল আলম মালিক ডিউক। যক্ষা প্রতিরোধ কমিটি নাটাব কিংবা মানবাধিকার সংগঠনের মতো স্থানে সততার সাথে সাধারন সম্পাদদের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সক্রিয় ছিলেন রোগী কল্যান সমিতি, ডায়াবেটিক সমিতি আর রেড ক্রিসেন্টের মতো সংগঠনের সাথেও। তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশংসার জুড়ি নেই। এজন্য তিনি বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নির্বাচনেও পালন করতেন নির্বাচন কমিশনারের মতো গুরু দায়িত্ব। আইন উপদেষ্টা হিসেবে লেগে ছিলেন সোনালী ব্যাংক, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, জেলা দোকান মালিক সমিতি ও ব্র্যাকের মতো বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে।
ব্যক্তি জীবনে অ্যাড. তছিরুল আলম মালিক ডিউক ও নাজমুন নাহার দম্পতির ঘরে রয়েছে একটি কন্যা এবং একটি পুত্র সন্তান। কন্যা সন্তান জান্নাতুল আওলিয়া নিশি পালন করছেন দৈনিক আকাশ খবরের সম্পাদকের দায়িত্ব। একইসাথে তিনি দীপ্ত টিভির চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধিও। রয়েছে তার নিজ¦ ব্যবসা। অপরদিকে পুত্র সন্তান সায়েদুল মুরছালিন আকাশও জড়িয়ে আছেন ব্যবসায়ের সাথে। গতকাল ৯ জানুয়ারি অ্যাড. তছিরুল আলম মালিক ডিউকের এই সংক্ষিপ্ত জীবনের ইতি ঘটে।