একজন কোয়ালিটি এ্যাডভাইজার ও ফরচুন ৫০০ কোম্পানীর সিইও রুমে বসে আছেন। সিইও সাহেবের মন ভাল নেই। তবুও কথা বলছেন। কর্পোরেট অফিসের সিইও, চাপ থাকাটাই স্বাভাবিক। টেবিলের ওপাশে বসে থাকা এ্যাডভাইজার সব খেয়াল করছেন। একথা-সেকথার মাঝে সিইও সাহেব বলছেন- ‘চলুন, আমরা আমাদের ব্যবসা নিয়ে কথা বলি।’ এ্যাডভাইজার সাহেব বললেন (সাইড টেবিলের উপরে রাখা ফ্যামিলি ছবি দেখিয়ে) ‘ঐ ছবিটা কি আপনার ফ্যামিলি ছবি?’ উত্তরে সিইও সাহেব বললেন, ‘আমার স্ত্রী ও দুই মেয়ের ছবি।’ এ্যাডভাইজারের পরের প্রশ্ন, ‘আপনি শেষ কবে ফ্যামিলির সঙ্গে মিলিত হয়েছেন?’ আচমকা এই প্রশ্নে সিইও সাহেব একটু হকচকিয়ে যায়। একটু চুপ থেকে বিষয়টা মনে করার চেষ্টা করলেন। ‘ঠিক মনে করতে পারছি না’- উত্তর দিলেন সিইও সাহেব। ‘বড় মেয়েটা কোথায়, কি করে?’ প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন- ‘অন্য একটা রাজ্যে মেডিক্যাল বিষয়ে পড়াশুনা করে।’ কোন সেমিস্টারে পড়ে বলতে পারবেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি খানিকটা সময় নিরব থাকলেন। নিজেকে সামলে নিয়ে সিইও সাহেব বললেন- ‘চলুন, ব্যবসা নিয়ে আলোচনা করি। সময় নষ্ট হচ্ছে।’ এ্যাডভাইজার বললেন, ‘আপনাকে এই সময়ের জন্য আমাকে কোন বিল দিতে হবে না। এখন আপনি টেলিফোনে আপনার স্ত্রী-কন্যাদের সাথে কথা বলুন। আমি অপেক্ষা করছি।’ নিরুপায় হয়ে তিনি বড় মেয়ের সঙ্গে কথা শুরু করলেন। এ প্রান্ত থেকে যা শোনা গেল তা হলো- ‘হ্যাঁ! আমি তোমার বাবা….।’ অনেকক্ষণ চুপচাপ রিসিভারটা কানে ধরে রাখলেন। কোন কথা নেই। শুধু চোখ মুছলেন। মিনিট বিশেক পার হলো- তবুও ফোন ছাড়ার নাম নেই। এ্যাডভাইজার সাহেব ইশারা করে ফরচুন ৫০০ এর সিইও’র কাছ থেকে বিদায় নিলেন। দুই সপ্তাহ পর সিইও সাহেবের ফোন পেয়ে এ্যাডভাইজার সাহেব তার অফিসে গেলেন। এদিন, সিইও সাহেবকে খুবই হাস্যজ¦ল দেখাচ্ছিল। তিনি বললেন- ‘‘আমার চোখ খুলে দিয়েছেন। পরিবার নিয়ে সমুদ্র ভ্রমণে গিয়েছিলাম। ২ সপ্তাহ ছুটি কাটিয়ে আজই অফিসে এলাম। ভাবলাম- আপনার সঙ্গে কফি উপভোগ করি।’’
মি. পিটার (কাল্পনিক নাম) মার্কেটিং এর ফিল্ডে কাজ করেন। তিনি তার একমাত্র সন্তানের সকার খেলা দেখতে ভালবাসেন। কিন্তু সে মোটেও সন্তানের সকার খেলা স্বশরীরে দেখার সময় পান না। চাকুরীর কাজে ব্যস্ত থাকেন। এ বিষয়ে পরিবারের অভিযোগের পাশাপাশি নিজেও নিজের প্রতি মাঝে মধ্যে বিরক্তি অনুভব করেন। একদিন তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর দেন, ‘‘আমি রাত-দিন পরিশ্রম করি, যাতে আমার সন্তান সকার খেলতে পারে। আমি কাজ কমিয়ে সন্তানের খেলা দেখতে গেলে- সে আর সকার খেলতে পারবে না।’’
বড় মেয়েকে আমি পরপর দু’টি গল্প শোনালাম। ও খুব মনোযোগ সহকারে আমাকে শুনছিল। আমি বললাম, পরিবারের উচিত উপার্জনকারী কে স্যাক্রিফাইস করা, যাতে সে চাপমুক্ত থেকে কাজ করতে পারে। আবার উপার্জনকারীরও উচিত পরিবারকে ‘যতটুক পারা যায়’- নীতির ভিত্তিতে সময় দেওয়া। যদি তুমি সুখী হতে চাও- তাহলে তোমাকে তা তৈরী করতে হবে। ‘ডবৎব ুড়ঁ যধঢ়ঢ়ু ঃড়ফধু?’ এই প্রশ্ন লেখক না করে প্রশ্ন করলেন-‘উরফ ুড়ঁ ফড় ুড়ঁৎ নবংঃ ঃড়নব যধঢ়ঢ়ু ঃড়ফধু?’ মেয়েটা এবার কথা বলে উঠলো- ‘এটা দেখছি একটা জটিল বিষয়।’ হ্যাঁ! এটা একটা জটিল বিষয় বটে! আম্মু, দেখ- পৃথিবীতে প্লেন ক্রাশের সংখ্যা খুবই কম, কিন্তু সতর্কতা খুবই বেশী, আবার তুষারজনিত বরফের উপর পা পিছলে পড়ার সংখ্যা খুবই বেশী, কিন্তু সতর্কতা খুবই কম। পরিবারের ক্ষেত্রে দু’রকমের সতর্কতাই নিতে হবে। আমি মার্শাল গোল্ডস্মীথের এই ফিলোসফির সাথে সম্পূর্ণ একমত যে, ‘ণড়ঁ ংযড়ঁষফ নব যধঢ়ঢ়ু হড়,ি হড়ঃ ষধঃবৎ, হড়ঃ ধভঃবৎ ুড়ঁ’াব ধপযরবাবফ ংড়সবঃযরহম ড়ৎ বধৎহবফ ধ পবৎঃধরহ ধসড়ঁহঃ ড়ভ সড়হবু.’ এবং ‘ণড়ঁ যধাব ধ ফৎবধস, মড় ভড়ৎ রঃ হড়.ি ওঃ’ং হড়ঃ মড়রহম ঃড় মবঃ বধংরবৎ ঃড় ভড়ষষড়ি ুড়ঁৎ ফৎবধসং যিবহ ুড়ঁ ধৎব ড়ষফবৎ. ঞযব ফৎবধস ফড়বং হড়ঃ যধাব ঃড় নব নরম.’
মেয়েটা বলে উঠলো, ‘‘তোমাদের এতদূর-এতকিছু খেয়াল রাখতে হয়! আমরাতো তোমার কাছে কত-শত বায়না করি। খুব খারাপ লাগছে।’’ আমি বললাম- তোমাদের বায়নাগুলো তো আমার ফুয়েল হিসাবে কাজ করে…।
(চলবে)
মোঃ বশির আহম্মেদ
একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মী