নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রতিদিনই তাপমাত্রার রেকর্ড ভাঙছে চুয়াডাঙ্গা। এবার জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ইতিহাসে সকল রেকর্ড ভেঙে তাপমাত্রার পারদ দাঁড়িয়েছে ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রির ঘরে। গতকাল মঙ্গলবার এ তাপমাত্রা রেকর্ড করে আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস। তবে গতকাল দেশের সবোর্চ্চ রেকর্ড হয়েছে যশোরে। যা ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এর আগে ১৯৮৫ সালে ৪৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। এরপর চুয়াডাঙ্গায় আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার স্থাপনের পর ২০১৪ সালে ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এছাড়া গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২০২৩ বছরের ১৯ ও ২০ এপ্রিল ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পর্যায়ক্রমে ২০১৫ সালের ২২ মে ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০১৬ সালের ১১ ও ২২ এপ্রিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০১৮ সালের ১৮ জুন ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২০২২ সালের ২৪ ও ২৫ এপ্রিল মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চলতি মৌসুমে টানা ১৮ দিন ধরে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে চলছে। এর মধ্যে ১৩ দিনই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল এ জেলায়। কখনও তীব্র আবার কখনও খুব তীব্র আকার ধারণ করছে জেলার তাপপ্রবাহ। এতে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ভ্যাপসা গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে জনজীবনে। দিন এবং রাতের তাপমাত্রায় খুব বেশি পার্থক্য নেই। দিনের আলো ফোটার পর থেকেই উত্তপ্ত হতে থাকে পরিবেশ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও প্রকট হচ্ছে রোদের উত্তাপ। আবার সন্ধ্যার পর ভ্যাপসা গরমে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে। তীব্র হচ্ছে গরমের অনুভূতি। বৃষ্টির পানির জন্য হাহাকার করছে মানুষ।
সকাল সকাল শ্রমজীবী মানুষেরা কাজের সন্ধানে বেরিয়েও ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। একটু কাজ করার পরই কাহিল হয়ে পড়ছেন। বিশ্রাম নিচ্ছেন গাছের ছায়ায়। টানা তাপদাহে এ জেলার মানুষ ও প্রাণিকুল ওষ্ঠাগত। নাকাল এ অঞ্চলের জনজীবন।
শহরের বড় বাজার এলাকার ফল ব্যবসায়ী শিমুল লস্কর বলেন, ফুটপাতে বসে ব্যবসা করায় দায় হয়ে পড়েছে। রাস্তা থেকে যেন আগুনের আঁচ উঠছে। শরীরের চামড়ায় ফোসকা পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু ঘরেও তো বসে থাকা যাচ্ছে না। কাজের জন্য সড়কের পাশে বসতেই হচ্ছে।
ব্যাটারিচালিত পাখিভ্যানচালক আব্দুর রহিম বলেন, জেলা শহরে মানুষজন তীব্র গরমে ঘর থেকে বেরই হচ্ছে না। যারা বের হচ্ছেন তাও সন্ধ্যার পর। দিনে রোদের তাপ আর রাতে ভ্যাপসা গরমে কাজকর্ম করা যাচ্ছে না। কঠিন হয়ে পড়ছে সবকিছু।
এদিকে ১০০ শয্যার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গতকাল ৪০০ জনের কাছাকাছি রোগী ভর্তি ছিলেন। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আতাউর রহমান মুন্সী বলেন, অতি তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে প্রায় প্রতিটি পরিবারেই শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। গুরুতর অসুস্থ রোগীরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চুয়াডাঙ্গাবাসী অতীতে কখনো এমন সংকটকালীন পরিস্থিতির মুখোমুখি হননি। তাই সবাইকে স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনে চলতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। ঢিলেঢালা পোশাক ও ছাতা মাথায় দিয়ে বের হতে হবে। ভাজা-পোড়া ও সব ধরনের কোমল পানীয় থেকে দূরে থাকতে হবে। প্রচুর পানি খেতে হবে।
অতি তীব্র তাপপ্রবাহে ক্ষেতের ধান নিয়ে উভয়সংকটে পড়েছেন চাষিরা। কৃষকরা জানান, যাদের ধান কাঁচা-থোড় পর্যায়ে, তারা বৃষ্টি চাইছেন। আবার যেসব জমির ধান ৮০ শতাংশের ওপর পেকে গেছে, তারা আপাতত বৃষ্টি চাইছেন না। ওই ধান দ্রুত কেটে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ।
আবহাওয়ার সুখবর দিয়ে চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, বুধবার থেকে (১ মে) তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। আগামী ৫ মে এর পর চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও কিছুদিন সময় লাগতে পারে।