বেশ ছোট বেলায় একটা কৌতুক থেকে জেনেছিলাম- ৩ কারণে মানুষ হাসে। প্রথমতঃ মানুষ বুঝে হাসে, দ্বিতীয়তঃ মানুষ না বুঝে হাসে, শেষতঃ মানুষ এমনি এমনিই হাসে। শেষ কারণে যারা হাসে তারা পাগল, দ্বিতীয় কারণে যারা হাসে-তারা হয় পাগল , না হয় অতি বুদ্ধিমান। প্রখ্যাত কার্টুনিস্ট গ্লাসবার্গেন দুই ভদ্রলোকের ছবি এঁকে ক্যাপশনে লিখেছেন-(বিধস্ত লোকটি অপর জনকে বলছে) “বসের কথায় আমি খুব বেশী হাসতে পারিনি, পরদিন অফিসে গিয়ে দেখি আমার চেয়ারে মাথা মুণ্ডুহীন একজনকে বসিয়ে রেখেছে।” এতে প্রমাণীত হয়-না বুঝে হাসিরও অনেক মূল্য!
গুগল রিসার্চের মতে-শিশু দিনে ৪০০ বার হাসে, যেখানে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ তার ১৭.৫% হাসে। মানুষের যতো বয়স বাড়ে-মানুষ ততো কম হাসে। ১০ থেকে ১৫ মিনিট হাসলে ৪০ ক্যালরী ক্ষয় হয়-যা বছরে ৩/৪ পাউণ্ড ওজন কমাতে সাহায্য করে। মানব শরীরে ’গুড ফিলিং’ এর জন্য ’ইনডরফিন’ নামক ক্যামিক্যাল কাজ করে। আর হাসলে এই ইনডরফিন ক্যামিক্যাল নিসৃত হয়। এই বয়স বাড়ার সাথে সাথে ’না হাসতে পারার’ সংস্কৃতি মানুষের স্থুলতা বাড়িয়ে দেয় এবং এর ফলে বহু জটিল রোগ শরীরে বাসা বাধে।
অফিস ম্যানেজমেন্ট-মার্কেটিং বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে স্বাস্থ্য-বিজ্ঞান নিয়ে কথা চলে এলো। পৃথিবীর এমন কোন ফটোগ্রাফার নেই যিনি-ছবি তোলার সময় “হাসুন! একটু হাসুন!” বলে চিৎকার করে না। এর কারণ একটা শিশু যখন হাসে, সুখের আলোয় ভরে যায়, রুমের সবাই খুশী হয় এবং হাসে। হাসির একটা পৃথক ভাষা আছে যা সারা বিশে^ অভিন্ন। হাসতে কোন পয়সা লাগে না। এটি একটা মেডিসিন! এখন দেখা যাক-হাসির তাৎপর্য কি?
০১. কোন শব্দ ব্যবহার না করে ’হ্যাঁ সূচক’ মনোভাব বোঝানো যায়।
০২. হাসি ’সম্পর্কের উষ্ণতা’ বোঝায়।
০৩. হাসি মানুষের ভেতরকার অবস্থা বাহ্যিকভাবে প্রকাশ করে।
০৪. হাসি সুখের প্রতীক।
০৫. হাসি মানুষের আন্তরিকতা/খোলামন’কে বোঝায়।
০৬. হাসি মানুষের ’কনফিডেন্ট’ গুনটার প্রকাশ ঘটায়।
০৭. হাসি মানুষকে উন্মুক্ত করে দেয়, যার ফলে পার্টনাররা সহজেই বুঝতে পারে।
০৮. বিশ^স্ততার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। হাসতে হাসতে মিথ্যা কথা বলা বা প্রতারণা করা কঠিন। লিডারশীপের ক্ষেত্রে হাসির প্রয়োজন সবচেয়ে বেশী। গবেষণায় দেখা গেছে কয়েক’শ মানুষের মাঝে হাসিমাখা মুখটা সবার আগে দৃষ্টি গোচর হয়। “খবধফ রিঃয ংসরষব, ঃযব ড়িৎফং রিষষ ভড়ষষড়.ি ঊধৎহ ধ ংসরষব ভৎড়স বাবৎুড়হব ুড়ঁ ঃধষশ ঃড়.”
রোয়েনা বললো , “হাসির সামাজিক গুরুত্ব আলাদা করে কি নির্ণয় করা হয়নি? খুব একটা প্রয়োজন নেই-কেননা লিডারশিপে হাসির বিষয়টা আলোচনা ইতিমধ্যেই হয়েছে। সামাজিক গুরুত্বঃ
০১. সম্পর্ক শক্তিশালী হয়।
০২. অন্যরা বেশী আকর্ষিত হয়।
০৩. টিমওয়ার্ক /বণ্ডিং ভাল হয়।
০৪. দ্বন্দ্ব দূর হয়।
০৫. গ্রুপ বণ্ডিং ভাল হয়।
রোয়েনা বললো, “শেষ কর-আজ একটু পড়ার চাপ বেশী। আমি ওকে বললাম-আমাদের মাঝে যারা বয়স্ক তাদের জন্য হাসিটা চালু রাখা অত্যন্ত জরুরী। নর্মান কুইজিন বলেন, “মৃত্যু মানুষের সর্ববৃহত ক্ষতি নয়, আমরা যারা বেচেঁ আছি-তাদের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো-নিজের ভেতরটা মেরে ফেলা”- (চলবে)
মোঃ বশির আহম্মেদ
একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মী