নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৮ মে। এ নির্বাচনে এবারও প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান দুটি উপজেলার বর্তমান দুই চেয়ারম্যানই। প্রার্থী হওয়ায় এবারও তারা নির্বাচন কমিশনের কাছে তাদের হলফনামা জমা দিয়েছেন। ৫ বছরের ব্যবধানে দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান আলি মুনছুর বাবু’র সম্পদ ও নগদ অর্থ দুটোই বেড়েছে। একইসাথে সম্পদ ও অর্থ বেড়েছে তার স্ত্রীরও। অপরদিকে জীবননগর উপজেলার চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমানেরও বিনিয়োগ ও আয় বেড়েছে। এর সাথে যোগ হয়েছে দায়। এই দুই প্রার্থীর হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
আলি মুনছুর বাবু’র হলফনামার তথ্য:
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলি মুনছুর বাবু পাঁচ বছর ধরে দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই সময়ে স্ত্রীসহ তিনি রাজধানীতে ১টিসহ ৯টি প্লটের মালিক হয়েছেন। এসব জমি ছাড়াও ৫ বছরে তাঁর ও স্ত্রীর নামে সম্পদ, ব্যাংকে জমা টাকা এবং ব্যক্তিগত আয় সবই বেড়েছে। তার নামেই ব্যাংকে জমা টাকা বেড়েছে ২ হাজার ৫৩৮ গুণ।
আলি মুনছুর বাবু ২০১৯ সালে স্থাবর সম্পদ হিসেবে স্থানীয় দক্ষিণ চাঁদপুর মৌজায় দশমিক শূন্য ২ একর কৃষি জমির ক্রয়সূত্রে ৫০ শতাংশের মালিক হিসেবে দেখিয়েছিলেন। তবে ২০২৪ সালের হলফনামায় তার কোনো কৃষি জমি নেই বলে উল্লেখ করেছেন। অকৃষি জমির কলামে নিজের নামে ঢাকার কাটাসুরে ১টি ও নিজ এলাকায় ৪টিসহ মোট প্লটের কথা উল্লেখ করেছেন। এই পাঁচটি প্লটের জমির অর্জনকালীন মূল্য দেখিয়েছেন ১৮ লাখ ৭১ হাজার টাকা। পাঁচ বছর আগে তার স্ত্রীর নামে কোনো জমি না থাকলেও এবার দামুড়হুদার লক্ষ্মীপুর মৌজায় ৫টি প্লট দেখিয়েছেন। এগুলোর অর্জনকালীন মূল্য দেখানো হয়েছে ৩২ লাখ ৬২ হাজার টাকা।
অস্থাবর সম্পদ হিসেবে ২০১৯ সালে নিজের নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা মাত্র ১ হাজার ৯৩ টাকা দেখানো হলেও এবার দেখানো হয়েছে ২৭ লাখ ৭৩ হাজার ৭৭৪ টাকা। সে হিসাবে পাঁচ বছরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আলি মুনছুর বাবুর জমা বেড়েছে ২ হাজার ৫৩৮ গুণ। একই কলামে আগের নির্বাচনে স্ত্রীর নামে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৫৪৫ টাকা দেখানো হয়েছে। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৭ লাখ ৫০ হাজার ৯২২ টাকা। অর্থাৎ পাঁচ বছরে বেড়েছে প্রায় ২৮ গুণ।
স্নাতক পাস আলি মুনছুর বাবু পেশা হিসেবে ব্যবসা উল্লেখ করেছেন। ২০১৯ সালে বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা এবং এবার দেখিয়েছেন ৫ লাখ ৭৯ হাজার ৩৭৫ টাকা। এ ছাড়া, উপজেলা চেয়ারম্যানের সম্মানী ভাতার ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৩৭৫ টাকা ও ব্যাংক সুদ ২৭ হাজার ৪৪৯ টাকা বার্ষিক আয় হিসেবে যোগ হয়েছে।
হাফিজুর রহমানের হলফনামার তথ্য:
জীবননগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমানের গত পাঁচ বছরে জনপ্রতিনিধির সম্মানী ও দোকান ভাড়া দিয়ে বেড়েছে আয়। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই হয়েছেন অস্থাবর সম্পদের মালিক। তবে, ব্যবসায় বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি নামের সাথে যোগ হয়েছে প্রায় ৪৪ লাখ টাকা ঋণের দায়।
জীবননগর উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার আগের পাঁচ বছর তিনি ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৮ মে অনুষ্ঠিতব্য প্রথম ধাপের নির্বাচনে এই চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় নিজেকে এইচএসসি পাস এবং পেশা হিসেবে ব্যবসা উল্লেখ করেছেন।
হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে তার বার্ষিক মোট আয় ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা। যার মধ্যে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে পাওয়া ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ব্যবসা খাতে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং বাড়ি/দোকানভাড়া বাবদ ৩০ হাজার টাকা। ২০১৯ সালে তিনি বার্ষিক মোট আয় দেখিয়েছিলেন ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। সে সময়ে ভাইস চেয়ারম্যানের সম্মানী ৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা, ব্যবসাখাতে আয় ২ লাখ টাকা ও দোকান ভাড়া ৫১ হাজার টাকা। অর্থাৎ ব্যবসাখাতে বছরে ৮০ হাজার টাকা আয় কমলেও বাড়তি সম্মানীর কারণে বার্ষিক মোট আয় বেড়েছে ৫৫ হাজার টাকা।
চেয়ারম্যান হাফিজুরের নিজের নামে যেমন অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে, তেমনি স্ত্রীর নামেও যোগ হয়েছে নগদ টাকা এবং ব্যাংকে জমা ও ব্যবসায় নতুন বিনিয়োগ। হলফনামার তথ্যানুযায়ী পাঁচ বছর আগে হাফিজুরের কাছে নগদ টাকা ছিল ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬৪০ টাকা, সেখানে বর্তমানে আছে ২ লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাঁর নামে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ২ হাজার ৩৬০ টাকা থাকলেও বর্তমানে ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৩৩ টাকা ৬৮ পয়সা এবং অন্যান্য ব্যবসায়ে বিনিয়োগ পূর্বে ২৬ লাখ হলেও বর্তমানে সেখানে ৩১ লাখ ৭০ হাজার ৮৭৬ টাকা ৩২ পয়সা উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ এ সময়ে ব্যাংকে জমা বেড়েছে ১২ লাখ ৩৩ হাজার ২৭৩ টাকা ৬৮ পয়সা ও ব্যবসায়ে বিনিয়োগ বেড়েছে ৫ লাখ ৭০ হাজার ৮৭৬ টাকা ৩২ পয়সা।
২০১৯ সালে স্ত্রীর নামে কোনো অস্থাবর সম্পদ না দেখালেও এবারের হলফনামায় স্ত্রীর নামে নগদ ১ লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৭৬৩ টাকা ৯১ পয়সা জমা এবং ৩ লাখ ৫৯ হাজার ২৩৬টাকা ১৫ পয়সা ব্যবসায় বিনিয়োগ দেখানো হয়েছে। গত পাঁচ বছরে স্থাবর সম্পদ বাড়েনি এই চেয়ারম্যানের। জীবননগরে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া একটি বাড়ি দেখানো হলেও তার মূল্য অজানা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি জীবননগর শাখায় বাংক ঋণ দেখানো হয়েছে ৪৩ লাখ ৯৩ হাজার ৪৯০ টাকা। যা গত বছরের ৩০জুন পুনঃতফসিলীকরণ করা হয়েছে।