জীবননগর অফিস:
প্রতারণার শিকার হয়ে সৌদি আরবে বন্দি দাবিতে সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিপ্লব হোসেন ওয়াজের স্ত্রী। গতকাল শনিবার বিকালে জীবননগর প্রেস ক্লাবের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিপ্লব হোসেন ওয়াজের স্ত্রী আরজিনা খাতুন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমার স্বামী বিপ্লব হোসেন ওয়াজ একজন প্রবাসী। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে প্রবাস জীবন-যাপন করিতেছেন। এ অবস্থায় ইব্রাহিম হোসেন একই গ্রামের ও পূর্ব পরিচিতি হওয়ায় আমার স্বামীর সাথে আলাপ করে যে, আমি যে কাজ করি তাতে আমার সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তুই যদি বিদেশে একটি ভালো চাকুরী দিতে পারিস তা হলে আমার একটু উপকার হবে। তখন আমার স্বামী বলে যে, তার ওখানে খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে একটি চাকুরী আছে, সেখানে তাকে খাদ্য ডেলিভারীর কাজ করতে হবে এবং মাসিক বেতন হবে (ডেলিভারী অনুযায়ী)। সেখানে চাকুরীর জন্য একটি মোটর সাইকেল, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ইন্সুরেন্সসহ আকামা কোম্পানী বহন করবে। এই শর্ত মোতাবেক বিদেশে যাওয়া খরচ বাবদ চুক্তিঅনুযায়ী টাকা প্রদান করে। এরপর আমার স্বামী বিদেশে থাকাকালীন তাকে সৌদি আরবে নিয়ে যায় এবং চুক্তি অনুযায়ী কাজ না পাওয়ায় আমার স্বামী তার নিজ খরচে থাকা খাওয়া বাবদ নগদ ৬০০ রিয়াল প্রদান করে এবং দেশের বাড়ীতে তার ঋণ পরিশোধের জন্য ২০ হাজার টাকা এবং দেশে পরিবারের বাজার খরচ বাবদ ১হাজার দুই শত টাকা প্রদান করে। পরবর্তীতে আমার স্বামী তাকে চুক্তিঅনুযায়ী ডেলিভারী কোম্পানীতে কাজ বুঝিয়ে দেয়।
তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে তিন মাসের ছুটিতে দেশে আসে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইব্রাহিম হোসেন কোম্পানীতে কাজ না করে আমার স্বামীকে অহেতুক হয়রানী ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করার হীনমানসে বসে থাকে এবং বিষয়টি তার পরিবারের লোকজনকে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জীবননগর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে। এ সময় তার পরিবারের লোকজন আমার স্বামীকে শারীরিকভাবেও লাঞ্চিত করে। পরবর্তীতে জীবননগর থানায় বসে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিত করে আপোষনামা/অঙ্গিকার নামা করা হয়। উক্ত অঙ্গীকারনামা উভয় পক্ষ মেনে চলার অঙ্গীকার করা হয়। উক্ত অঙ্গীকারনামায় উল্লেখ ছিলো যে, দুই মাসের মধ্যে ইব্রাহিম হোসেনকে সৌদি আরবে ফুড ডেলিভারী কাজের ব্যবস্থা করতে হবে এবং তার খরচ বাবদ ৬০০ রিয়াল প্রদান করতে হবে এবং তার পরিবারের খরচাদি বাবদ ২০ হাজার টাকা প্রদান করতে হবে। সেই সাথে আমার স্বামী কাজ প্রদান করার পর ইব্রাহিম হোসেনকে সৌদি আরবে অহেতুক না থাকিতে চাহিলে কিংবা কাজ করিতে অপারগতা প্রকাশ করিলে তাহার জন্য আমার স্বামী কোন ভাবেই দায়-দায়িত্ব বহন করিবে না এবং ইব্রাহিম হোসেন কিংবা তার পরিবারের লোকজন আমার স্বামীর বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে না। এসংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে ইব্রাহিম হোসেন ও তার পরিবারের সদস্য, কিংবা কোন আত্মীয় স্বজন আমার স্বামী কিংবা আমাদের পরিবারের কোন সদস্যদের উপর হুমকি ধামকি ও অত্যাচার নির্যাতন করিতে পারিবে না। ইহার অন্যথা হইলে আইন আমলে আসিবে মর্মে উভয় পক্ষ আপোষ মীমাংসা/অঙ্গীকার নামায় উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও জনপ্রতিনিধির উপস্থিতিতে স্বাক্ষর করে। অঙ্গীকার নামার শর্তানুযায়ী আমার স্বামী ইব্রাহিম হোসেনকে নগদ ৬০০ রিয়াল ও তার পরিবারকে নগদ ৯ হাজার টাকা এবং পরবর্তীতে নগদ ১০ হাজার টাকা সর্বমোট ১৯ হাজার) প্রদানসহ বিদেশে ফুড ডেলিভারী কোম্পানীতে চাকুরসহ সমস্ত শর্ত পুরণ করেছে। কিন্তু বিবাদী ইব্রাহিম হোসেন তার স্বেচ্ছাচারিতা ও বিনা কারনে কোম্পানীর বসের সাথে অহেতুক ঝামেলা করে আসছে। এ পর্যায়ে ইব্রাহিম হোসেন তার পরিবারের সদস্যদের দিয়ে বিনা কারনে আমার স্বামীকে ও আমাদেরকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন ও আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করতে তার স্ত্রী শিল্পী খাতুনকে দিয়ে দেশে সংবাদ সম্মেলন করেছে।
এমতাবস্থায় আপনাদের কাছে কাগজ ও অঙ্গীকারনামার বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে আমার স্বামী যাতে নির্দোশ প্রমানিত ও বিবাদীদের হয়রানী থেকে রেহায় পেতে পারে তাহার জন্য আপনাদের প্রকাশিত পত্রিকায় প্রকাশ করে সত্য উদঘাটনে আপনাদের একান্ত মর্জি কামনা করছি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, বিপ্লব হোসেনের মা শাবানা খাতুন, শাশুড়ী শাবানা বেগম, চাচাতো ভাই চাঁন মিয়া, ছেলে নিবর (১৪) ও আরিয়ান (৫)। উল্লেখ্য, গত বুধবার বিপ্লব হোসেন ওয়াজের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের গয়েশপুর গ্রামের ইব্রাহিমের স্ত্রী হাবিবা খাতুন শিল্পী।