# বাড়ছে রোগী; ফসলে ক্ষতি
#দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা
#ত্রাহি অবস্থা থেকে বাঁচতে এক লাখ বৃক্ষ রোপণ বন্ধ থাকবে কোচিং সেন্টারও
নিজস্ব প্রতিবেদক:
একদিনের ব্যবধানে আবারও চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল রবিবার এ জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান। এর আগে গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে, অতি তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় জেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা। সভায় বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান পিপিএম সেবা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কবীর হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাজমুল হামিদ রেজা, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন, ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. আওলিয়ার রহমান।
এছাড়াও সংশিষ্ট বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে বক্তব্য রাখেন, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দীপক কুমার পাল, সদর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, সাংবাদিক বিপুল আশরাফ, শাহ আলম সনি, মেহেরাব্বিন সানভী প্রমুখ। সভার শুরুতেই চুয়াডাঙ্গার আবহাওয়া পরিস্তিতি তুলে ধরেন চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান।
জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, মানুষকে সচেতন করতে হবে ঝুকিমুক্ত থাকার জন্য। যে পরিমাণে সাহায্য সহযোগীতা করা সম্ভব, সেগুলো করা হবে। আমরা সরকারের কাছে বিষয়টি লিখবো। সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। মাঝে মধ্যেই শুনতে পাই, সরকারি সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব না দিয়ে শিশুদেরকে স্বাস্থ্য ঝুকির মধ্যে ফেলে কোচিং সেন্টারগুলো খোলা আছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এগুলো দেখা হবে। কোনো কোচিং সেন্টার বা কিন্ডারগার্টেন সরকারি সিদ্ধান্ত অমান্য করে খোলা রাখতে পারবে না।
সভায় বক্তারা চুয়াডাঙ্গার গরম সমস্যা সমাধানে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার বিষয়ে গুরুত্ব দেন। এ সময় জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, গত বছর থেকে জেলায় এক লাখ বৃক্ষ রোপন ও পরিচর্যার একটি পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। সেটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রয়োজন আরও বেশি সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা। আমি আপনি সকলে যার যার অবস্থান থেকে বৃক্ষ রোপণ করতে হবে। আগামী প্রজন্মকে যদি আমরা এই উত্তাপের হাত থেকে বাঁচাতে চাই, তাহলে গাছ লাগাতে হবে। সচেতন হতে হবে। এই সমস্যার সমাধান আপনার আমার সকলের হাতে।
অপরদিকে, প্রচণ্ড রোদে কৃষকের ফল-ফসল ও সবজি বাগান ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এ ছাড়া জেলায় বিভিন্ন সড়কের রাস্তার পিচ গলে যেতে দেখা গেছে। শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানচালকরা অস্থির হয়ে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন কৃষক ও খেটে খাওয়া মানুষ। দিনের বেশিরভাগ সময় সূর্যের তাপে প্রচণ্ড গরম অনুভূত হচ্ছে। রোদের তীব্র প্রখরতায় উত্তাপ ছড়াচ্ছে চারপাশ। নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষেরা পড়েছেন চরম বিপাকে। নির্মাণ শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, ইজিবাইক চালক ও ভ্যান-রিকশা চালকদের গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে। হা-হুতাশ করতে দেখা গেছে তাদেরকে। প্রয়োজনের তাগিদে ঘর থেকে বেরিয়েও কাজ করতে পারছেন না তারা। তাপদাহে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবীরা।
গরমে চুয়াডাঙ্গায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সদর হাসপাতালে গত তিনদিনে ১৩৭ রোগী ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছেন। শিশু ও বয়স্করা বেশি ডায়রিয়ার আক্রান্ত হচ্ছে। ওয়ার্ডে জায়গা না হওয়ায় বারান্দা মেঝেতে ঠাসাঠাসি করে গরমের মধ্য চিকিৎসা নিচ্ছে।
তীব্র গরমে ক্ষতি হচ্ছে ফসলেও। সদর উপজেলার পীরপুর গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমের গুটি ঝরে পড়ছে। কীটনাশক ও সেচ দিয়েও গুটি ধরে রাখা যাচ্ছে না।
আরেক কৃষক মাহবুব হোসেন বলেন, গরমে ঘরের বাইরে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। আমার দুই বিঘা পানের বরজে অনেক ক্ষতি হচ্ছে। পানি দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। পান পাতা নেতিয়ে ছোট হয়ে যাচ্ছে। এ মৌসুমের প্রায় ৫০ হাজার টাকার পান বিক্রি করতাম। তবে এবার সেটা সম্ভব হবে না।
চলমান দাবদাহে ফসল রক্ষায় কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, তাপপ্রবাহের ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য আমগাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত সেচ প্রদান করতে হবে। প্রয়োজনে গাছের শাখাপ্রশাখায় পানি স্প্রে করতে হবে। ক্ষতি থেকে ধান রক্ষার জন্য ধানের শিষে দানা শক্ত না হওয়া পর্যন্ত জমিতে অবশ্যই ৫-৭ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখুন। এ সময় জমিতে যেন পানির ঘাটতি না হয়।
প্রসঙ্গত, চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে ২০০২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২০১৪ সালের ২১ মে। সেদিন তাপমাত্রা ছিল ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া ২০০৫ সালের ২ জুন ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০১২ সালের ৪ জুন ৪২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০০৪ সালের ১৩ মে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ২০০৯ সালের ২৭ এপ্রিল সর্বোচ্চ ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। গত বছর ২০২৩ সালের ১৯-২০ এপ্রিল সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।