দুই মেয়েকে নিয়ে বসলাম- অনেকক্ষণ কথাবার্তা হলো। অনেক বিষয় নিয়েই কথা হলো। ঘুরে-ফিরে ওই বিষয়েই চলে এলাম- বিজনেস সাইকোলজি। মেয়ে দু’টোরও বেশ ইন্টারেস্ট গ্রো করেছে। আমিও স্বার্থকতা খুঁজে পাই। ওরা নিজেদেরকে আগামী দিনের প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করুক। মার্কেটিং, রাজনীতি ও ব্যবসা-জগতের রাজনীতির সাথে সংসার জীবনেরও অনেক মিল থাকে। মার্কেটিং, রাজনীতি ও ব্যবসায়িক কুটকৌশলে পাকা হলে সমাজের অনেক কাজই সহজ হয়ে যায়। সংসার জীবনেও নিজেকে ‘পণ্য মার্কেটিং’ এর মতোই বিক্রি করতে হবে!
বড় মেয়ে রোয়েনা বললো, ‘‘ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বা মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে কিভাবে মোকাবেলা করতে হয়- সে সম্পর্কে জানতে চাই।’’ আমি বললাম, ‘‘ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে কেন, পড়াশোনার ক্ষেত্রে, শ্রেণিকক্ষের প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়। নিজের পণ্যের বিক্রয়ে শ্রেষ্ঠত্ব বা শ্রেণীকক্ষের মেধাক্রমেও ঘোষিত বা অঘোষিত প্রতিযোগিতা মোকাবেলা একটি নিত্য ঘটনা। এ প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে তোমাদেরকে যেটা জানা জরুরী তা হলো- সাফল্য কি বা কোন স্তরে গেলে ‘সফল’ বলা যায়।
কোন পণ্য বা প্রতিষ্ঠান পূর্বে প্রাপ্ত ১০০ এর স্থলে যখন ৩০০ অর্জন করে তখন তাকে ওই পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের গ্রোথ বলা যায়। শ্রেণীকক্ষেও অনুরূপ। এখন প্রশ্ন করতে পারো- গ্রোথ কি সাকসেস? না। গ্রোথের পরবর্তী ধাপ হলো প্রোগ্রেস। গ্রোথের সাথে যখন ‘ইথিক্স’ বা নৈতিকতা সঠিক থাকে তখন তাকে প্রোগ্রেস বলে। অর্থাৎ গ্রোথ+সঠিক ইথিক্স= প্রোগ্রেস (৩০০+ইথিক্স)। ছোট মেয়ে বললো, ‘‘ইথিক্স বিষয়টা পরিষ্কার করে বলো।’’ হ্যাঁ! ইথিক্স হলো, নিয়মানুবর্তিতা+সততা+আদর্শ। আর সাকসেস বা সফলতা হলো, গ্রোথ+প্রোগ্রেস+আদর্শ সংস্কৃতি, এই তিনের সমন্বয়। আবার আদর্শ সংস্কৃতি হলো, মানবিকতা+নৈতিকতা+আত্মিক বা পারমার্থিকতা। গাণিতিকভাবে দেখলে যা দাঁড়ায় তা হলো- ৩০০ (গ্রোথ)+প্রোগ্রেস+আদর্শ সংস্কৃতি = সাকসেস।
শ্রেণীকক্ষের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বেশী সিজিপিএ পেলেই সফল হওয়া যাবে না। সিজিপিএ হলো- শুধু গ্রোথ। এই সিজিপিএ এর সাথে তোমাকে উন্নত ইথিক্স ও আদর্শ সংস্কৃতি অর্জন করতে হবে। তেমনি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্রফিটের সূচক দেখেই সফলতা নির্ধারণ করা হয় না। ক্রেতা বা গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা না করে তাদের মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পণ্য বিনিময় করাই হলো সফলতা। এই সফলতার সাথে সাথে পণ্যের চাহিদার স্থায়ীত্ব হয় দীর্ঘস্থায়ী। এভাবেই ব্র্যান্ডিং গড়ে তোলা হয়। দেশে বহু ভালো ছাত্র-ছাত্রী এসেছে কিন্তু ব্র্যান্ডিং এ সফলতা খুব কম মানুষই পেয়েছে। পণ্যের ক্ষেত্রেও তাই।
ছোট মেয়ে অরোনা বললো, ‘‘তোমার কাছে কঠিন বিষয়টাও কত সহজ হয়ে গেল। ধন্যবাদ তোমাকে।’’ বড় মেয়েকে বললাম, এবার তোমার মূল প্রশ্নে আসা যাক। প্রত্যেকটা পণ্যের প্রস্তুতকারকের একটা নিজস্ব ‘বিক্রয় স্টাইল’ আছে। তাতে কোন আপত্তি নেই। বিপত্তি ঘটে তখন, যখন প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে ‘বিক্রয় কৌশল’ ইথিক্স হারিয়ে ফেলে। তুমি ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ীই পণ্য সরবরাহ করবে, তোমার যা আছে তাই বিক্রয় করবে না। এটা একটা প্রতারণা। মানছি ‘সেলস একটি যুদ্ধ’ কিন্তু সেই যুদ্ধ যেন ফিলোসফিবিহীন না হয়। আমাদের দেশে একবার জনপ্রিয় ‘হালাল’ শব্দ ব্যবহার করে এমনটা করা হয়েছিল। যদিও তার ফল ভাল হয়নি। ব্যবসায়িক বিনিয়োগে সচারাচর দুইটি বিষয়ে ভাবা হয়- ‘ফেয়ার অফ লস’ ও ‘ডিজায়ার টু গেইন’। এই দুটো চিন্তাই অতি কাল্পনিক ও অতি আক্রমণাত্মক। শুধুই মুনাফা এবং কোনভাবেই যেন ক্ষতির সম্মুখীন না হয়! এর মধ্যবর্তী একটা পলিসি রয়েছে যা তোমার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে প্রশমিত করতে পারে, তা হলো- ‘ডিজায়ার টু হেল্প’। তুমি তাকে চিনতে যাবে কেন, সেই তোমাকে চিনে নেবে। তোমার পথ চলা হবে ‘বেস্ট’ হবার জন্য, কাউকে ‘বিট’ (পরাজিত) করার জন্য নয়। সব সময় কি জেতার প্রয়োজন আছে? না। তুমি ঘুম থেকে জাগবে, নতুন দিন পাবে, নতুন করে নিজের দক্ষতাকে ঝালাই করে কাজে/লেখাপড়ায় ঝাঁপিয়ে পড়বে। মনে রাখবে, তোমার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বসে নেই। তুমি এত ভালো হবে যে- তোমার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তোমাকে অবহেলা করতে পারবে না। মেয়ে দু’টোর চোখের মধ্যে আমি অসীম সাহসীকতা ও কৃতজ্ঞতা দেখতে পেলাম। (চলবে)
মোঃ বশির আহম্মেদ
একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মী