নিজস্ব প্রতিবেদক:
ক্রমেই ফুরিয়ে আসছে চুয়াডাঙ্গার করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিনের মজুদ। প্রতিদিনই জেলায় টিকা আগ্রহীরা টিকা গ্রহন করছেন। গড়ে প্রতিদিন ৫০-৬০ জন মানুষ টিকা গ্রহন করছেন। এতে প্রথম ডোজ ও দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে এ জেলায় টিকা নিয়েছেন প্রায় ৭৪ হাজার মানুষ। যেখানে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিতে আগ্রহী মানুষেরই ঘাটতি রয়েছে প্রায় ১৪ হাজারের মতো। এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্টরা। এরইমধ্যে টিকার তৃতীয় চালান না আসলে জেলায় টিকার সংকট তৈরি হবে বলে শঙ্কা তাদের। সে হিসেবে প্রথম ডোজ গ্রহন করে দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার মতোও টিকা থাকবে না স্বাস্থ্য বিভাগের ভান্ডারে।
তবে স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসন সূত্র বলছে, সম্ভাব্য টিকা আগ্রহীদের চাহিদা অনুযায়ী চাহিদাপত্র পাঠানো আছে। সময়ের আগেই তৃতীয় চালান হাতে পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ তাদের।
জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় প্রথম ধাপের ৫৮ হাজার ডোজের মধ্যে ৫৭ হাজার ৯৯৬ জনের শরীরেই টিকা প্রদান করা হয়েছে। এরপর শুরু হয় দ্বিতীয় ডোজের টিকাদান কার্যক্রম। দ্বিতীয় ডোজের টিকা দান কার্যক্রমের শুরু করতে ৩ হাজার ৯শ ভায়াল ভ্যাকসিন পাওয়া যায় এ জেলায়। যা ৩৯ হাজার মানুষের শরীরে পুশ করা যাবে। এই ৩৯ হাজার জনের মধ্যে গতকাল শনিবার পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের ১৫ হাজার ৯৬১ জন টিকা গ্রহন সম্পন্ন করেছেন। সে হিসেবে স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে এখন টিকা আছে মাত্র ২৩ হাজার ৩৯ জনের ডোজ। এদিকে টিকা নিতে আগ্রহী ৬৬ হাজার ৪৫১ জন অনলাইনের মাধ্যমে নিবন্ধিত হয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম ধাপ ও দ্বিতীয় ধাপ মিলিয়ে চুয়াডাঙ্গার মানুষের জন্য মোট ৯৭ হাজার ডোজ টিকা হাতে পাওয়া গেছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপেই টিকা গ্রহন করেছেন ৫৭ হাজার ৯৯৬ জন। নিয়মানুযায়ী আবারও সমসংখ্যক মানুষের টিকা নেয়ার সময় হয়ে আসছে। এরইমধ্যে দ্বিতীয় ডোজের প্রায় ১৬ হাজার মানুষ টিকা গ্রহন করেছেন। সে হিসেবে প্রথম ডোজের টিকা গ্রহন করে দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার মতো এখনো ৪২ হাজার মানুষের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে মজুদ রয়েছে মাত্র ২৩ হাজার জনের নেয়ার মতো ভ্যাকসিন। এছাড়া নতুন নতুন অনেক মানুষ টিকা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে অনলাইনে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছেন। সে পরিমাণে টিকা নেই স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে। উল্টো ঘাটতি রয়েছে প্রায় ১৪ হাজার টিকা। সঠিক সময়ে অর্থাৎ এই মজুদ শেষ হওয়ার আগেই টিকার তৃতীয় চালান চুয়াডাঙ্গায় না আসলে টিকা সংকটে পড়বে জেলাবাসী।
চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডাঃ এএসএম মারুফ হাসান জানান, টিকা গ্রহনের হার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। প্রতিদিন জেলায় ৫০-৬০ জন মানুষ টিকা গ্রহন করছেন। সে অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপের টিকা শেষ হতে খুব বেশিদিন লাগবে না। প্রথম ধাপের টিকা গ্রহীতা অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপে তারা টিকা গ্রহন করছেন। এক্ষেত্রে নতুন আগ্রহীর সংখ্যা তুলনামুলক কম।
প্রথম ধাপের টিকা গ্রহীতারা সবাই দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সিভিল সার্জন বলেন, ‘সরকারি নিয়মানুসারে প্রথম ধাপে যা এসেছিল দ্বিতীয় ধাপে তার ৭০ শতাংশ পাওয়া যায়। সে হিসেবে প্রথম ধাপে ৫৮ হাজার টিকা পেলে দ্বিতীয় ধাপে ৩৯ হাজার টিকা পাওয়া যায়। টিকা প্রদান কার্যক্রম চলমান প্রক্রিয়ায় আছে। টিকার মজুদ শেষ হতে হতে তৃতীয় ধাপে নতুন চালান পাওয়া যাবে বলে আশা রাখি।’
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, যেহেতু টিকা প্রদান কার্যক্রম চলমান প্রক্রিয়া সেহেতু আগ্রহী অনুযায়ী টিকার চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। সবাইকে টিকার আওতায় আনতে তৃতীয় চালানে প্রায় ২৫ হাজার পরিমাণ ডোজ পাওয়া যাবে। এই মজুদ শেষ হতেই তৃতীয় চালান হাতে পাওয়া যাবে মত তার।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি করোনাভাইরাস টিকার প্রথম ধাপের ৫৮ হাজার টিকা চুয়াডাঙ্গায় পৌঁছায়। ফেব্রুয়ারি মাসের ৬ তারিখ প্রথম ডোজ দেয়া শুরু হয়। প্রথম ডোজের টিকা প্রদান শেষে গত ৮ মার্চ থেকে দ্বিতীয় ধাপের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। টিকা প্রদানে জেলার তিনটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল, পুলিশ হাসপাতাল ও বিজি হাসপাতালে টিকাদান কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পুরো জেলায় করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রমে কাজ করছে স্বাস্থ্য বিভাগের ৫০টি দল।