নিজস্ব প্রতিবেদক:
কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে চুয়াডাঙ্গার পশুর হাটে ও যাত্রীবাহী বাসে গরু ব্যবসায়ীদের অজ্ঞান করে নগদ টাকা লুট করে নেওয়া চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে চেতনানাশক পাউডার ও চেতনানাশক ওষুধ মিশ্রিত জুস। টানা ৫ দিন অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল শনিবার বেলা ১২টায় পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত প্রেস বিফ্রিংয়ে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নাজিম উদ্দিন আল আজাদ (পিপিএম-সেবা)।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, বাগেরহাট জেলার শরণখোলা থানার দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের মৃত কাশেম মাঝির ছেলে বাচ্চু মাঝি (৪৮), চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা থানার দুধপাতিলা গ্রামের মৃত গোলাপ মন্ডলের ছেলে হাশেম আলী (৪৮), দর্শনা থানার ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত রইচ উদ্দিনের ছেলে সালামত (৫৫), চুয়াডাঙ্গা সদর থানার বোয়ালমারি গ্রামের বিল্লাল হোসেনের ছেলে শাহাবুদ্দিন ওরফে শুকচাঁন (৩০), জীবননগর থানার সন্তোষপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে ইব্রাহিম ওরফে ইব্রা (৫০) ও একই থানার মৃগমারী গ্রামের নওশাদ মন্ডলের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক (৪৭)।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ জানায়, চুয়াডাঙ্গা জেলায় বৃহৎ ডুগডুগি, শিয়ালমারি পশুর হাটসহ মোট ১১টি পশুর হাট রয়েছে। পবিত্র ঈদুল আজহা অর্থাৎ কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ডুগডুগি, শিয়ালমারি, আলমডাঙ্গা, সরোজগঞ্জ পশুর হাটগুলো জমজমাট হয়ে ওঠে। পশুর হাটগুলো শুরু হওয়ার সাথে সাথেই প্রায় প্রতি বছরই অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টির প্রতারণাসহ বিভিন্ন ধরণের অপরাধমূলক কার্যক্রমের দৌরাত্ম বেড়ে যায়। এছাড়াও পরিবহনগুলোতেও বাসের যাত্রীবেশী অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা টার্গেট করে সাধারণ যাত্রীদের অজ্ঞান করে তাদের কাছ থেকে নগদ টাকাসহ মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেয়।
জেলায় গত ১৬ মে ফরিদপুরের ইউনুস শেখ শিয়ালমারি পশুহাটে, ২৩ মে জীবননগর-কালীগঞ্জ সড়কের পশু হাসপাতালের সামনে সানোয়ার হোসেন, ৩০ মে আলমডাঙ্গার শমসের আলী শিয়ালমারি হাটে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন। সবশেষ অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা গত ৩ জুন ডুগডুগির হাটে নোয়াখালীর জসিম উদ্দিনকে টার্গেট করে চেতনানাশক ব্যবহার করে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টাকালে হাতেনাতে বাগেরহাটের বাচ্চু মাঝি নামের একজন গ্রেফতার হন। এই ঘটনায় দামুড়হুদা থানায় পরদিন একটি মামলা রুজু হয়। এরপর অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের ধরতে জেলা পুলিশের একাধিক টিম কৌশলে ফাঁদ পাতে। যাত্রীবাহী বাস ও পশুর হাটে ছদ্মবেশ ধারন করে সাদা পোষাকী পুলিশ সদস্যরা অভিযান চালায়। সেই ফাঁদে আটকা পড়ে অজ্ঞান পার্টির সক্রিয় ৬ সদস্য।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দিন আল আজাদ জানান, এটা একটা সংঘবদ্ধ চক্র। এই চক্রটি মূলত গরু ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে। গল্প গুজবের এক পর্যায়ে চা অথবা পান খাওয়ার প্রস্তাব দেয়। ওই খাদ্যদ্রব্যের মধেই চেতনানাশক প্রয়োগ করে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয় চক্রের সদস্যরা। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তদন্তকালে আমরা এই চক্রের বেশকিছু নাম পেয়েছি। তাদের চলমান কার্যক্রম মনিটর করা হচ্ছে। এই চক্রের সকল সদস্যকে আইনের আওতায় আনার জন্য সুষ্ঠু তদন্ত এবং গ্রেপ্তার অভিযান চলছে।