নিজস্ব প্রতিবেদক:
মুদ্রাস্ফীতি, রিজার্ভ কমে যাওয়া, টাকার মানের অবমূল্যায়নসহ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। এ পটভূমিতে সরকার এবার কিছুটা আঁটসাঁট বাজেট দিয়েছে। প্রতিবছর বাজেটের যে উল্লম্ফন হয়, এবার সেটা হয়নি। তবে এবারের বাজেটে মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর খরচের বোঝা আরো বাড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। বাজেটে আবারো কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ার তীব্র সমালোচনাও হচ্ছে। যদিও অর্থমন্ত্রী তার বাজেট পেশ করার আগে জানিয়েছিলেন, বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম বাজেটে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে খুশি করার চেষ্টা করবেন তিনি। তবে তার সে কথার প্রতিফলন বাজেটে দেখা যায়নি; উল্টো সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যবসায়ীরাও খুশি হতে পারেননি। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, বাজেটে কে খুশি হলো- আমি খুঁজে পাচ্ছি না। অর্থাৎ অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ- বাজেটে কেউ খুশি হতে পারেনি। ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল, এ বাজেট অনেক উদ্ভাবনী হবে। এখানে সৃজনশীল ও কিছু সাহসী পদক্ষেপ থাকবে। কারণ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জিং সময়ে গতানুগতিক বাজেট কোনো ধরনের সমস্যার সমাধান দিতে পারবে না। নতুন বাজেটটা আমাদের কাছে অতীতের বাজেটের মতোই মনে হয়েছে। বর্তমান সময়ের সমস্যা, ক্রান্তিকালীন সংকট দেখা দিয়েছে অর্থনীতিতে। সেগুলো সমাধানে এ বাজেট যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে পারেনি। দিকনির্দেশনা দিতে পারেনি। অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল- করের আকার না বাড়িয়ে আওতা বাড়ানোর। কিন্তু সরকার এবারও করহার বাড়ানোর দিকেই মনোযোগ দিয়েছে; যা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা মূল্যস্ফীতি কমানের টার্গেট করা হয়েছে, কিন্তু কিভাবে কমানো হবে- সে বিষয়ে সঠিক পথনির্দেশনার অভাব রয়েছে। ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার উপায় রাখা হয়েছে; যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। মূল্যস্ফীতির এ বাজারে করের নিম্নসীমা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এটা বাড়ালে ভালো হতো। এবার এডিপির পরিমাণ খুব একটা বাড়ানো হয়নি; বরং বাস্তবায়নের উপর জোর দেয়া হয়েছে। বাজেটে আঞ্চলিক বৈষম্য রয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নতি হলেও বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করছে। এ বিষয়ে সুদূরপ্রসারী নির্দেশনা আসেনি।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পথনির্দেশনা নেই: আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার যে কথা বলা হয়েছে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট পথনির্দেশনা নেই। যদিও আগামী ৬ মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবু হাসান মাহমুদ আলী। তবে তা কীভাবে- তার কোনো সঠিক জবাব তিনি দেননি। ফলে এটা নিয়েন্ত্রণে আনার সুযোগ কম বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। মূল্যস্ফীতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাজেটে কিছু কর ছাড়ের কথা বলা হয়েছে। তবে এতে মূল্যস্ফীতি কমবে না। কেননা আয় না হলেও ব্যয় ঠিকই হবে। এর মানে মূল্যস্ফীতি কমবে না, আবার কর্মসংস্থানও বাড়বে না। শুধু আশ্বাসে তো আর স্বস্তি মিলবে না। দৃশ্যমান পদক্ষেপ দরকার ছিল।
মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষের চাপ বাড়বে: নতুন বাজেটে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন খরচের ওপর নতুন করে নানা রকম করারোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের ওপর চাপ আরো বাড়বে। প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে খরচও বাড়বে। আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আয় বাড়াতে অর্থমন্ত্রী মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের অতি প্রয়োজনীয় অনেক পণ্য ও সেবায় শুল্ক-কর বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি সাধারণ মানুষের মেট্টোরেলের ভাড়ায় মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) মওকুফের ঘোষণা দেননি। ফলে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হলে পরের দিন অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে মেট্টোরেলে চড়তে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে যাত্রীদের। সরকার এবার করের সর্বোচ্চ হার ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করেছে। ভ্যাটের মতো পরোক্ষ করের বোঝা সাধারণ মানুষের ওপরই পড়বে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বাজেট প্রণয়ন করতে গিয়ে মূল্যস্ফীতির চাপসহ বিভিন্ন প্রেক্ষাপট বিবেচনা করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা বিশেষ অগ্রাধিকার পেয়েছে। নতুন অর্থবছরে অনেক আশার কথা শুনিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। অথচ তার প্রস্তাবিত বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য কোনো স্বস্তির জায়গা নেই; বরং পরোক্ষ যে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে সেটা সাধারণ মানুষের উপরেই যাবে। এতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরো বেড়ে যাবে।
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ: বাজেটে আবারো কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ার সমালোচনা করেছে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরাও। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, মাত্র ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার এমন সুবিধা সৎ ও বৈধ আয়ের করদাতাকে নিরুৎসাহিত করার সংস্কৃতি গড়ে তুলবে। পাশাপাশি এর আওতায় ঘোষিত অর্থ ও সম্পদের ব্যাপারে কোনো কর্তৃপক্ষের প্রশ্ন করার সুযোগ না রাখা দেশে দুর্নীতি সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখবে। এ ধরনের সুযোগ দেয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ব্যাবসায়ী সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ঢাকা (এমসিসিআই)। এমসিসিআই বলেছে, এই ব্যবস্থার ফলে নিয়মিত কর প্রদানকারী করদাতারা নিরুৎসাহিত হবে। নিয়মিত কর দাতাদের জন্য এটি একটি শাস্তি হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
বাজেট ব্যবসায়ীদেরও হতাশ করেছে: আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে হতাশ হয়েছেন দেশের বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরাও। দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশ যোগান দেয় পোশাক খাত। ৪৭ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির বিপরীতে ১ শতাংশ হারে উৎসে কর হিসেবে বছরে রাজস্ব আদায় হয় ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। বাজেট প্রস্তাবের আগে শিল্প মালিকরা তাদের ১ শতাংশ উৎসে কর দশমিক ৫ ভাগে নামানোর দাবি জানালেও তা মানা হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এ খাতের ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলেন, বন্ড লাইসেন্স ফি ও নবায়ন ফি দ্বিগুণ করা, অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানা স্থাপনে মূলধনী যন্ত্র আমদানিতে ১ ভাগ শুল্ক প্রস্তাব করা হয়েছে, পোশাক খাতে যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে দাবি শিল্প মালিকদের। বিজিএমইএ সভাপতি এস এম মান্নান কচি বলেন, উৎস কর শূন্য দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং এটিকে চূড়ান্ত করাদায় হিসেবে গণ্য করার বিষয়ে আমাদের গভীর প্রত্যাশা ছিল। এবং এখনো সেই প্রত্যাশা রয়েছে। বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এখন প্রায় ৮০ শতাংশ কারখানা আইসিইউতে রয়েছে। তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে বিশেষ স্কিমের কথা বলা হয়েছে। বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, আগামী ১ মাসের মধ্যে আমরা কোনো ক্যাশ পাচ্ছি না। কিন্তু সামনে ঈদ, অর্ডারগুলো ক্যানসেল হয়ে গেছে। এমন হলে তো এগুলো সাসটেইন করবে না।
আর্থিক খাত সংস্কারের আভাস নেই: বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এমন বাস্তবতায় আর্থিক খাত বিশেষ করে ব্যাংক ও রাজস্ব খাতে ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছিলেন খাত সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু বৃহস্পতিবার সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী যে বাজেট বক্তৃতা উপস্থাপন করেছেন, তাতে এ বিষয়ে তেমন কোনো কিছু উল্লেখ নেই, যাকে হতাশাজনক বলছেন অর্থনীতিবিদরা। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, বাজেটে কর প্রশাসনে সুশাসন ও দক্ষতার অভাব রয়েছে। ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কর আহরণ করতে পারছে না। দেশে যে পরিমাণ টিআইএনধারী আছেন; তাদের অর্ধেকও আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে তথ্য দিয়ে থাকে, সেটিও সঠিক নয়। তথ্য গোপন করার কৌশল সুশাসনের অন্তরায়। সিপিডি নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন সম্প্রতি এক সংলাপে বলেন, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে একটি স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন প্রয়োজন। ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা আনতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং স্বাধীন কমিশন প্রতিষ্ঠা করা উচিত।
রিজার্ভ বাড়ানোর লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট নেই: অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বাজেট বক্তৃতায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেছেন। তবে তা কীভাবে- তা বলেননি। যদিও বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, মূল্যস্ফীতির কারণে পণ্যমূল্যের ওপর বাড়তি চাপ মোকাবিলা এবং ডলারসংকটে চাপে পড়া রিজার্ভ বাড়ানো প্রস্তাবিত বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হলেও শিগগিরই তা অর্জনের সম্ভাবনা নেই। অর্থমন্ত্রী বলেন, ডলার সংকটে রিজার্ভ কমেছে। এজন্য রিজার্ভ বাড়ানোর বিষয়ে বাজেটে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু ১৮ বিলিয়নের ঘরের রিজার্ভ এক বছরে ৩২ বিলিয়ন ডলার কিভাবে হবে, তার কোনো জবাব তিনি দেননি। অবশ্য অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেছেন, শুধু ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে ডলারের দাম বাড়িয়ে রিজার্ভ বাড়ানো হবে- বিষয়টি তেমন নয়। ইতোমধ্যে অনিবাসী, বিদেশিরা অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হিসাব খুলে বৈদেশিক মুদ্রা রাখার সুযোগ পাবেন। এ নিয়ে সম্প্রতি আইন পাস করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, দেশের প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের বেশির ভাগ আসে ব্যক্তি খাত থেকে। ব্যক্তি খাতে এক দশক ধরে বিনিয়োগে স্থবিরতা রয়েছে। এর মধ্যে আবার মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। সুদহারও অনেক বেড়ে যাচ্ছে। আবার দীর্ঘদিন ধরে রিজার্ভ কমছে। এর মধ্যে আগামী অর্থবছর শেষে রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে। কেবল রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দিয়ে রিজার্ভ বাড়বে না, এজন্য হুন্ডি কমাতে হবে।
আঞ্চলিক বৈষম্য: এবারো বাজেটে আঞ্চলিক বৈষম্য রয়েছে বলে কথা উঠেছে। অর্থনৈতিক উন্নতি হলেও বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করছে। এ বিষয়ে সুদুরপ্রসারী নির্দেশনা আসেনি। বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা এই বাজেটটি বাস্তবায়ন করার জন্য সাপোর্টিভ নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, বাজেটের ব্যয়ের অর্থের উৎসের ঘাটতি রয়েছে। বিভিন্ন কারণে এটা পূরণ করাটা দুরূহ হবে। এ প্রসঙ্গে ড. মির্জ্জা আজিজ বলেন, দারিদ্র বিমোচনে আঞ্চলিক বৈষম্যের পাশাপাশি শহর ও গ্রামীণ এলাকায় বৈষম্য বাড়ছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির উপকারভোগী নির্ধারণে রাজনৈতিক বিবেচনা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের কর্তৃত্বের কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এ কর্মসূচীর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বাজেটের ইতিবাচক দিক: এবারের বাজেটের ইতিবাচক দিকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য করের ক্ষেত্রে। বিশেষ করে বেশ কিছু দেশীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে যে কর ছাড় ছিল, সেখানে ছাড় কমানো হয়েছে। দীর্ঘদিন তারা করে ছাড় পেয়ে আসছিল। এবারের পদক্ষেপ রাজস্ব হার বাড়াতে সাহায্য করবে। এবারে প্রস্তাবিত করহার ২০২৫-২৬ অর্থবছরও অব্যাহত রাখা বাংলাদেশের কর ব্যবস্থায় একটি ভালো পদক্ষেপ হিসেবে পরিগণিত হবে। প্রস্তাবিত বাজেটের আরেকটি ইতিবাচক দিক হলো, ভ্যাট এবং আয়কর অব্যাহতির কারণে রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ প্রকাশ করা, যা বছরের পর বছর অব্যাহত। বাজেট প্রস্তাবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, এসব খাতে বরাদ্দ বাড়লেও তার পরিমাণ খুবই কম। তবে স্বচ্ছ ও যথার্থ ব্যয় নিশ্চিত করতে পারলে এ বরাদ্দও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
গাড়ি আমদানিতে শুল্ক দিতে হবে এমপিদেরও: সংসদ সদস্যদের (এমপি) বিদেশ থেকে গাড়ি আমদানিতে সব ধরনের শুল্ক-কর বর্তমানে অব্যাহতি আছে। এ সুবিধা কমিয়ে শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছে সরকার। তাদের ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমিয়ে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে তা কবে নাগাদ বাস্তবায়ন হবে এর সঠিক সময় জানাতে পারেননি অর্থমন্ত্রী।
স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ফ্ল্যাট তৈরির সিদ্ধান্ত: আগামী অর্থবছরে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য চার হাজার ৩২টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এসব ফ্ল্যাট নির্মাণের পর স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে ভাড়া দেয়া হবে। এদিকে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য চার হাজার ৮৫৬টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণের কাজ চলছে।