নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের মামলায় গ্রেপ্তার তানভীর ভূঁইয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এর আগে গত সোমবার একই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন এই হত্যা ঘটনার অন্যতম সন্দেহভাজন আসামি শিলাস্তি রহমান। এই মামলার সন্দেহভাজন আরেক আসামি সিয়াম নেপালে আটক হয়েছেন জানালেও তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবিপ্রধান) হারুন অর রশীদ। গতকাল নেপাল থেকে দেশে ফিরে শাহজালাল বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
এই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামান শাহীনের দুই সহযোগীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে নতুন তথ্য পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অন্যদিকে ডিএনএ টেস্টের স্যাম্পল দিতে কলকাতায় যাবেন এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। তিনি ভারতের ভিসা পাওয়ার পর এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
স্বীকারোক্তিতে যা বলেন তানভীর
ডিবি ও আদালত সূত্র জানায়, হত্যার আগে এমপি আনারকে প্রলুব্ধ করে কলকাতায় নেওয়া হয়। তাঁর চাচা শিমুল ভূঁইয়ার পরিকল্পনায় গত ৬ মে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে তিনি কলকাতায় যান। এরপর কলকাতার নিউ টাউন ও সল্টলেকের মাঝামাঝি ত্রিশিব নামের একটি হোটেলে ওঠেন। ওই হোটেলে অবস্থান করেই তিনি বিভিন্ন সময়ে শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে দেখা করেন এবং শিমুল ভূঁইয়ার পরিকল্পনা ও নির্দেশ মতো কাজ করতে থাকেন। অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার তানভীর ভূঁইয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আদালতকে এ কথা জানিয়েছেন।
স্বীকারোক্তিতে তানভীর বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে বসেই আখতারুজ্জামান শাহীনের নির্দেশনা মতে শিমুল ভূঁইয়া এমপি আনোয়ারুলকে হত্যা পরিকল্পনার ছক আঁটেন।
এমপিকে হত্যার উদ্দেশ্যে সর্বশেষ কলকাতা বিমানবন্দরের পাশে ওটু নামের একটি রেস্টুরেন্টে বৈঠক হয় জানিয়ে তানভীর বলেন, ওই মিটিংয়ে আখতারুজ্জামান শাহীনসহ শিমুল ভূঁইয়া, মোস্তাফিজুর রহমান, জিহাদ, তিনি (তানভীর) , সিয়াম, শিলাস্তি রহমানসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। সেখানে হত্যার চূড়ান্ত পরিকল্পনা হয়।
স্বীকারোক্তিতে তানভীর আরো বলেন, কলকাতায় এমপি আনারকে বন্ধুর বাড়ি থেকে কৌশলে ডেকে নিয়ে নিউ টাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জীভা গার্ডেনসে আখতারুজ্জামান শাহীনের ভাড়া বাসায় নেওয়া হয়।
সেখানে তাঁকে খুন করে লাশ গুম করা হয়।
অন্যদের সঙ্গে তিনি (তানভীর ) নিজে ওই ফ্ল্যাটে উপস্থিত ছিলেন জানিয়ে বলেন, ফ্ল্যাটে নেওয়ার পর এমপি আনারকে অজ্ঞান করা হয়। এরপর তাঁকে হত্যা করা হয়।
ডিবি সূত্র জানায়, তানভীর ভূঁইয়া খুলনার ফুলতলা থানার দামোদর গ্রামের হানিফ মো. লাকি ভূঁইয়া ওরফে লাকি ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি আমান উল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়ার ভাতিজা। দুজনের বাড়ি একই গ্রামে। শিমুল ভূঁইয়ার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এই তানভীর ভূঁইয়া।
নেপাল থেকে ফিরে যা বললেন ডিবির হারুন
এমপি আনারকে হত্যার সঙ্গে জড়িত সিয়াম কাঠমাণ্ডু পুলিশের হাতে আটক রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ। সিয়ামকে ভারতে বা বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে বলেও জানান তিনি।
গতকাল নেপাল থেকে দেশে ফিরে শাহজালাল বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান। নেপালে মো. সিয়াম হোসেনের আটকের খবরে গত শুক্রবার দেশটিতে যায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি প্রতিনিধিদল।
হারুন অর রশীদ বলেন, নেপাল থেকে সিয়ামকে নেওয়ার জন্য ভারতও চেষ্টা করছে। তাদের কাছেও সিয়াম মোস্ট ওয়ান্টেড। নেপাল কাঠমাণ্ডু অ্যাক্ট অনুযায়ী অপরাধের ধরন ও স্থান বিবেচনা করে ঠিক করবে সিয়ামকে কার কাছে দেওয়া হবে।
ভারতকে দিলেও তদন্তকাজ বাধাগ্রস্ত হবে না জানিয়ে ডিবিপ্রধান বলেন, কোথায় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এবং কাকে হত্যা করা হয়েছে, এসব বিষয় বিবেচনা করে আটক সিয়ামকে ভারত বা বাংলাদেশকে তারা দিতে পারে।
তিনি আরো বলেন, সিয়াম যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এবং এমপি আনারের বন্ধু আখতারুজ্জামান শাহীনের সবচেয়ে কাছের মানুষ। এ অবস্থায় ভারতীয় পুলিশের কাছে সিয়ামকে দিলেও ভালো হবে। কারণ তাঁকে নিয়ে আলামত উদ্ধারসহ তদন্তকাজ এগিয়ে নেওয়া সহজ হবে।
মাস্টারমাইন্ড শাহীনের দুই সহযোগীকে নিয়ে সন্দেহ
এওমপি আনার হত্যাকাণ্ডে মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামান শাহীনের দুই সহযোগীর জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাঁদের একজন তাজ মোহাম্মদ খান ওরফে হাজী, অন্যজন মো. জামাল হোসেন। অভিযুক্ত তাজ মোহাম্মদ খান কোটচাঁদপুর বাজারপাড়া এলাকার মৃত লাল মোহাম্মদের ছেলে এবং মো. জামাল হোসেন পোস্ট অফিসপাড়া এলাকার আলতাফ হোসেনের ছেলে।
ডিএনএ টেস্টের জন্য ভারত যাচ্ছেন আনারের মেয়ে ডরিন
এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন ভারতের ভিসা পেয়েছেন। এমপি আনারের খণ্ডিত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় ডিএনএ টেস্টের স্যাম্পল দিতে কলকাতায় যাবেন তিনি। গতকাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এমপি আনারের এপিএস আব্দুর রউফ।