শেখ লিটন:
আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে গবাদিপশু বাজারজাতকরণের জন্য চুয়াডাঙ্গার খামারি-মালিকরা গরু মোটাতাজা ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে। তবে এবার গো-খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে গরু মোটাতাজাকরণে বাড়তি টাকা গুণতে হচ্ছে। গেল তীব্র তাপদাহে গবাদি পশুর বাড়তি নজরদারি করাতে খরচের মাত্রাটা এবার বেশি হয়েছে। ফলে খামারি মালিকরা এবার গরুর দাম নিয়ে চিন্তিত। অপরদিকে, এ বছর বাড়তে পারে গবাদি পশুর দাম।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার মাজহাদ গ্রামের তাজ এগ্রো ফার্মে এবার ইদুল আযহা উপলক্ষে হাটে তোলার জন্য গরুর মোটাতাজা করণে ব্যস্ত সময় পার করছে। এবার এই খামারে হাটে তোলার জন্য গরু মোটাতাজাকরণের জন্য ৩০ টি গরু প্রস্তত করা হচ্ছে। এই খামারের মতো জেলার শতাধিক খামারে হাটে তোলার জন্য গরু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছে। আর এই জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা মেটায় চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন খামারিরা। এখন খামারে প্রতিদিন গরু স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও উন্নতমানের খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। দৈনিক গরু প্রতি ১০ কেজি খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। হাটে তোলার জন্য এবার বাড়তি নজরদারির পাশাপাশি আরও অন্যান্য যত্ন পরিচর্যা করা হচ্ছে। গেল তাপদাহের কারণে গরু যাতে কোনো স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে না পড়ে সেজন্য আলাদা বিশেষ প্রস্ততি গ্রহণ করে গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। আর কয়দিন পর থেকে এসব বাজারজাত গবাদি পশু বাজারে তোলা হবে। স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি এই জেলার গরু রাজধানি ঢাকার বিভিন্ন হাটে। তবে এবার সব ধরনের গো-খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বাড়ার কারণে বাড়তি খরচ গুণতে হচ্ছে।
খামারি মালিকরা বলেন, আর কয়দিন পর ঈদুল আযহা। তাই হাটে তোলার জন্য খামারির গরু মোটাতাজাকরণের জন্য ব্যস্ত সময় পার করছি। এখন দৈনিক গরুর খাওয়ানো হচ্ছে গমের ভূষি, সোলার গুড়া, গম ও ভূট্টা, আর নেপিয়ার ঘাস খাওয়ানো হচ্ছে। তবে এবার গরুর দাম কেমন পাব জানি না। কিন্তু সব ধরনের গো-খাদ্যের দাম যেই ভাবে বেড়েছে। তাতে ভালো দাম না পেলে লোকশানে গুনতে হবে। এদিকে সরকার যদি বাইরের দেশের কোনো গরু এই দেশে প্রবেশ না করতে তাহলে গরুর দাম ভালো পাব। দেশি গরুর চাহিদা বাড়লে দেশের খামারি মালিকরা লাভবান হবে। আসা করছি এবার বাজারের গরুর দাম ভালো হবে। তাহলে গতবছরের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবো বলে আসাবাদি।
জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ থেকে জানা গেছে, এবার এই কোরবানির জন্য চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৫৪ হাজার ৯৭৯ টি গরু, ছাগল ও ভেড়া মিলে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮২১ টি পশু প্রস্তুত হয়েছে। মোট ২ লাখ ১১ হাজার ৮০৭ টি গবাদি পশু জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাজারে উঠবে।
খামারি মালিক তাজউদ্দিন বলেন, এবার হাটে তোলার জন্য গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। এবারো যদি গরুর ভালো দাম হয়ে হাটে তাহলে দাম ভালো পাবো। এ বছর গো খাদ্যের অনেক দাম বেশি। তাই গরুর দাম বাজারের ভালো না পেলে লোকশান গুনতে হবে।
অপরদিকে খামারি শ্রমিক মোহাম্মদ উকিল বলেন, এখন গরুর সকাল বিকাল দুই বার গোসল করানো হচ্ছে। যাতে গরমে কোনো অসুবিধা না হয়। প্রতিদিনই গরুর স্বাস্থ্য পরিক্ষা করা হচ্ছে। এখানে প্রটিনযুক্ত মোটাতাজা করণ খাবার ভূষি, ছোলার গুড়া, গম ও ভূট্টা, আর নেপিয়ার ঘাস খাওয়ানো হচ্ছে। হাটে তোলার জন্য সব ধরনের প্রস্ততি নিয়ে আমরা গরু মোটাতাজা করণে ব্যস্ত হয়ে পড়ছি।
এ বিষয়ে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. শামিমুজ্জামান বলেন, এবার কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে চুয়াডাঙ্গার খামারি পর্যায়ে গরু ও ভেড়া ছাগল মোটাতাজা করা হচ্ছে। এবারও যদি কোন ভারতীয় গরু এই দেশে প্রবেশ না করে তাহলে খামারি মালিকরা ভালো লাভবান হবে। আর জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ থেকে খামারিদের নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। যাতে করে খামারিরা লাভবান হয়।