জীবননগর অফিস:
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার উথলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হান্নানকে চলন্ত মোটরসাইকেলের ওপর কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দর্শনা-জীবননগর সড়কে আকুন্দবাড়ীয়া মোল্লাবাড়ি আবাসন এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। আব্দুল হান্নানের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার এ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে আব্দুল হান্নানকে দেখতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ছুটে যান চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর, চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান পিপিএম-সেবা, সিনিয়র সহাকরি পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা-জীবননগর সার্কেল) জাকিয়া সুলতানা, জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিএসবি) ওসি আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি ফেরদৌস ওয়াহিদ, দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী মুনছুর বাবু, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটনসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান গতকাল সকালে দর্শনা থেকে বাজার করে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে আকন্দবাড়িয়া মোল্লাবাড়ি বটতলা নামকস্থানে পিছন দিক থেকে মোটরসাইকেলে করে হেলমেট পরিহিত দু’’জন ব্যক্তি ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার পিঠে কোপ মেরে পালিয়ে যায়। এতে তার পিঠে মারাত্মক জখম হয়। এ অবস্থায় তিনি মোটরসাইকেল চালিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের ভিতরে প্রবেশ করেন। পরে লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে জীবননগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে সেখান থেকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি নেন। সেখানেও অবস্থার অবনতি হলে দুপুর আড়াইটার দিকে তাৎক্ষণিক এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার বক্ষব্যধি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে জরুরিভাবে ফুসফুসে অপারেশন করা হয়। তার অবস্থা এখন শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
উথলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, সকালে দর্শনা থেকে বাজার করে বাড়ি ফেরার পথে আকন্দবাড়িয়া মোল্লা বাড়ি এলাকায় দু’জন হেলমেট পরিহিত ব্যক্তি পিছন থেকে আমার পিঠে কোপ দিয়ে মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যায়। কিন্তু তাদের কাউকে চেনা যায়নি।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডা: এহসানুল হক তন্ময় বলেন, রোগীর পিঠের বামপাশে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের গভীর ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গেছে। তার ফুসফুসে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ অথবা ঢাকা বক্ষব্যাধী হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালে গিয়ে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান বলেন, উথলী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নানের ওপর কারা হামলা করেছে, তা এখনো জানা যায়নি। এঘটনায় পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। অচিরেই দুষ্কৃতিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে এবং বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজী আলী আজগর টগর বলেন, হামলার পরপরই উথলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমাকে ফোন করে বলে কে বা কারা আমাকে কুপিয়ে আহত করেছে আপনি আমাকে বাঁচান। সেই ফোন পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ছুটে আসি। তিনি জানান, দু’বারের উথলী চেয়াররম্যান হান্নান, এর আগে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছে। সে আওয়ামীলীগের নিবেদিত প্রাণ। সে উথলী ইউনিয়নে একজন ভালো মানুষ হিসাবে পরিচিত। তার শত্রু থাকতে পারে আমার জানা ছিল না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতিমধ্যে আসামী গ্রেফতারে কাজ শুরু করেছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, এর আগেও তার উপর হামলার ঘটনা ঘটেছিল। এটি পরিকল্পিত হামলার ঘটনা।
এদিকে গুরুতর আহত উথলী চেয়ারম্যানকে দেখতে পুলিশ লাইন্স মাঠে ছুটে আসেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, চুয়াডাঙ্গা পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি আলাউদ্দীন হেলা সহ আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০২৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে মোটরসাইকেলে বাড়িতে ফেরার সময় দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হয়েছিলেন তিনি।