নিজস্ব প্রতিবেদক:
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে চুয়াডাঙ্গায় ঝড়ো হাওয়া ও ভারী বৃষ্টিপাত অব্যহত আছে। গতকাল সোমবার দিনভর দমকা বাতাসের সাথে রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে স্বস্তি মিললেও ভোগান্তিতে পড়েছে স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীসহ কর্মজীবীরা। সকাল থেকে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কাজে বের হয়েছেন বিভিন্ন পেশার মানুষ। শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ অফিসগামীরা পড়েছেন ভোগান্তিতে। কেউ ছাতা কেউবা রেইনকোর্ট পরিধান করে বের হয়েছেন। শহরের যানবাহন ও সাধারন মানুষের চলাচলও কমে গেছে। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছে না। তবে এমন পরিস্থিতিতে হতাহতের তেমন কোন খবর পাওয়া যায়নি। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ জেলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৭৫ মিলিমিটার।
টানা বৃষ্টি ও ঝড়ো বৃষ্টির প্রভাবে গত রবিবার রাত ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। গতকাল সোমবার রাত পর্যন্ত বেশ কিছু এলাকায় এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এদিকে, সঞ্চালন লাইনে গাছ ভেঙে পড়ে গতকাল ভোর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় পুরো শহর। সকাল ৯টার পর বিভিন্ন এলাকায় পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ চালু হয়। কিন্তু ঝড়ের কারণে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে।
ঘূর্ণিঝড়ের চুয়াডাঙ্গায় গতকাল রবিবার থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। মধ্যরাত থেকে ভারী বর্ষণের সঙ্গে ঝড় বয়ে যায়। স্থানীয় পাওয়ার গ্রিড স্টেশন থেকে সাবস্টেশন পর্যন্ত সঞ্চালন লাইনে গাছ পড়ে গতকাল ভোরে চুয়াডাঙ্গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। চুয়াডাঙ্গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় আটটি ফিডারের মাধ্যমে। কিন্তু সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় আজ ভোর পাঁচটা থেকে সকাল সোয়া নয়টা পর্যন্ত একটানা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। এরপর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়।
ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) চুয়াডাঙ্গা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ঘোষ জানান, চুয়াডাঙ্গার জাফরপুরে অবস্থিত গ্রিড সাবস্টেশন থেকে ওজোপাডিকোর সাবস্টেশন সঞ্চালন লাইনের ওপর গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে এবং জাম্পার লুজ হয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়েছিল। দ্রুত মেরামত করে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়েছে। তবে ঝড়-বৃষ্টির কারণে কোন কোন এলাকায় বিদ্যুত বিভ্রাট দেখা দেয়।
অপরদিকে, মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ব্যবস্থাপক স্বদেশ কুমার ঘোষ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমালের হানায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ-সঞ্চালন লাইনের তার কেটে গেছে। বিদ্যুতের পোল হেলে পড়েছে। এগুলো ঠিক না করা পর্যন্ত বিদ্যুৎ-সংযোগ চালু করা সম্ভব হবে না।’
বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে ভাটা পড়েছে দৈনন্দিক কার্যক্রমে। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ফার্মপাড়ার বাসিন্দা রড-সিমেন্ট ব্যবসায়ী আশিক মাহবুব বলেন, রাতে ঝড়ে আমার বাসা থেকে বের হওয়ার পথে একটি মাঝারি ধরণের মেহগনি গাছ ভেঙ্গে পড়ে আছে, এ কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারিনি।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ বাজারের বাঁধন ইলেকট্রনিক্সের প্রোপাইটার আবু উবায়দা জানান, রিমালের প্রভাবে বৃষ্টিতে রাত থেকে বিদ্যুৎ নেই, ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন তাই প্রতিষ্ঠানে যায়নি।
ডিঙ্গেদহ হাটখোলা বাজারের কৃষক দোয়াল্লিন জানান, রিমালের প্রভাবে অধিকাংশ সবজিক্ষেত মাটিতে শুয়ে পড়েছে। আগাম ঝাল, বেগুন, করল্লা, চিচিঙ্গা, লাউয়ের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া কলা ও পেপে গাছেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জানান, গতকাল দুপুর তিনটায় চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ। সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা এখনো অব্যহত আছে। বাতাসের গতিবেগ ছিলো ঘণ্টায় ৪৪ কিলোমিটার।