কার্পাসডাঙ্গা প্রতিবেদক:
দামুডহুদার কার্পাসডাঙ্গায় দুই দিনব্যাপি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় সাংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে কবির স্মৃতি বিজড়িত আটচালা ঘরে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, র্যালী ও দোয়া মাহফিল শেষে কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে আলোচনা সভা ও সাংকৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগর টগর। প্রধান অতিথি বক্তব্যে এমপি আলী আজগর টগর বলেন, মানুষের পক্ষে মানবতার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া বিরল মানুষ, মানুষ ধর্মের নামে অধর্ম, বজ্জাতির প্রতিবাদ করে গেছেন নির্ভয়ে। তিনি বিপ্লবী বীর, মানবতায়, প্রেমে, সাম্যে, বাঙ্গালীর সব আবেগ, অনুভূতিতে জড়িয়ে থাকা বিদ্রোহী কবি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী আজ। আজকের এই দিনে ১৮৯৯ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহন করে। তিনি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বাঙ্গালী কবি। তিনি অসংখ্য ঔপন্যাসিক, গল্প, নাটক লিখলেও তিনি বেশী পরিচিতি ছিলেন কবি হিসেবে। তার প্রত্যায়ী ও বলীষ্ট লেখনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তিসংগ্রামে অনুপ্রাণিত ও উদ্দীপ্ত করেছে। নজরুল সাহিত্যের বিচিত্রমুখী সৃষ্টিশীলতা আমাদের জাতীয় জীবনে এখনো প্রাসঙ্গিক। তিনি আরো বলেন, কবি নজরুলের লেখনীতে ফুটে উঠে আর্ত পীড়িত, ব্যথিত ও উপেক্ষিত মানব মনের কথা তার আজীবন সাধনা ছিলো সমাজের শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবির স্বপরিবারে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। তাকে রাষ্টীয় মর্যাদায় স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাসের ব্যবস্থা করে দেন।
আলোচনা সভার সভাপতি ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম মাত্র ৯ বছর বয়সে পিতাকে হারিয়ে অভাবের সংসারে হাল ধরতে স্থানীয় মক্তবে মুয়াজ্জিনের কাজ থেকে শুরু করে রুটির দোকানে কাজ পর্যন্ত করেছেন। তিনি এত কিছু করার পরও তার যে সাধনা ছিলো আর্ত পীড়িত মানুষের কথা। অসাপ্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তার লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভুমিকা পালন করে। তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষন ও বঞ্জনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে তার কবিতা ও গান ছিলো প্রেরণার উৎস। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম একাধারে সঙ্গীতঙ্গ, ঔপন্যাশিক, গল্পকার, বাদ্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচিত্রকার ও অভিনেতা। তার কবিতা ও সাহিত্যে বাংলায় নব জাগরন সৃষ্টি করেছিলো।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান পিপিএম-সেবা, দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান আলী মুনছুর বাবু। বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুন্সি আবু সাইফ, স্বাগত বক্তব্য রাখেন দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোকসানা মিতা। এসময় উপস্থিত ছিলেন কার্পাসডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল করিম বিশ্বাস, সাবেক চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান ভুট্টো, আটচালা ঘর মালিক প্রকৃতি বিশ্বাস বকুল ও কার্পাসডাঙ্গা নজরুল স্মৃতি সংসদের সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে কার্পাসডাঙ্গা নজরুল স্মৃতি সংঘের উদ্যোগে মঞ্চস্থ নাটক ‘নীলকুঠি’।