নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গা পুরাতন স্টেডিয়ামের বিসিক শিল্প-পন্য মেলায় আগত দি লায়ন সার্কাসের সেই হাতিটি মারা গেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে হাতিটি মারা যায়। গতকাল শুক্রবার সকালে প্রাতভ্রমণে বেরিয়ে পথচারীরা হাতির নিথর দেহটি দেখে হাতির মাউথকে খবর দেয়। হাতির মৃত্যু সংবাদটি ছড়িয়ে পড়লে উৎসুক জনতা এক নজর হাতিটির মরদেহ দেখতে ভীড় জমায়।
জানা গেছে, গত মে মাসে চুয়াডাঙ্গা পুরাতন স্টেডিয়ামে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বিসিক মেলা শুরু হয়ে ঈদুল আযহার দু-দিন আগে শেষ হয়। তবে মেলার দোকান-পাট সব চলে গেলেও সার্কাসের মালামাল, গাধা, জীবজন্তসহ হাতিটিও রয়ে গিয়েছিল।
হাতির মাউথ মজিবার রহমান বলেন, গত ক,দিন আগেই আমাদের পরবর্তী সার্কাসের জায়গা নির্ধারণ হয়েছে বরগুনায়। আগামী রোববার আমরা সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে চলে যেতাম। কিন্ত তার আগেই বৃহস্পতিবার রাতে হাতিটি স্ট্রোক করে মারা গেল।
এদিকে হাতিটি মারা যাওয়ার বিষয়ে উৎসুক জনতা ও স্থানীয় অনেকেই বলেছেন হাতিটি অযত্ন, অবহেলা, নিয়মিত খাদ্যের অভাব ও চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে। আবার অনেকে বলেছেন হাতিটিকে সময় অসময়ে মাউথ মজিবর বেদম মারধর করতো। হাতি দিয়ে টাকা আদায় করা হতো কিন্তু তাকে ভালোমতো খাবার দেওয়া হতো না।
চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর শাহাজান আলী বলেন, আমি নিয়মিত চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্ম দিয়ে সকাল সন্ধ্যায় হাটি। তাই প্রতিদিন-ই দেখতাম হাতিটি স্টেশন সংলগ্ন পরিত্যক্ত জঙ্গলে ময়লা আর্জনার মধ্যে বাঁধা থাকে। নিয়মিত দেওয়া হতো না পুষ্টিকর খাবার। শুধু দেখতাম কলাগাছ দেওয়া আছে হাতির সামনে। আবার কখনো কখনো দেখতাম তার মাউথ লোহার পিন দিয়ে বানানো ছড়ির দ্বারা বেদম মারধর করছে। হাতির একটি দাঁত ভাঙা ছিল। সেখানে পচে না-কি পোকা হয়ে গিয়েছিল। এতে নিশ্চয় হাতিটি অসুস্থ হয়েছিল। কিন্ত তাকে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় পশু হাসপাতাল বা বন্যপ্রানী সংরক্ষনারীদের নিকট থেকে কোন পরামর্শ গ্রহন করা হয়নি।
স্থানীয় একজন আয়ুর্বেদী চিকৎসক বলেন, গত কয়েকদিন আগে দেখলাম হাতি দিয়ে কলাগাছ সরানো হচ্ছে। মাউথ হাতির মাথায় ছড়ি দিয়ে আঘাত করে একবারে ৮/১০টি কলাগাছ নিতে নির্দেশ দিচ্ছেন। কিন্তু হাতি একবারে নিতে পারছিল না। সে সময় হাতির পিঠে বসে থাকা লোকটি দু-হাত তুলে হাতির মাথায় লোহার ছড়ি দিয়ে আঘাত করতে থাকে।
হাতি মৃত্যুর বিষয়ে মাউথ মজিবর ও তার সহকারী জুয়েল বলেন, হাতিটি অসুস্থ ছিল না। হঠাৎ স্ট্রোক করে মারা গেছে। হাতির মৃত্যুর বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে ও পশু ডাঃ দিয়ে দেখিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, হাতিট স্ট্রোক করে মারা গেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হাতিটি যে জায়গায় বাঁধা অবস্থায় মারা গিয়েছিল চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের সেই পরিত্যাক্ত জায়গায় তাকে সমাহিত করা হয়েছে। তবে রেলওয়ের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি-না তা জানা যায়নি।
হাতির মাউথ মজিবর রহমান বলেন, হাতিটি দি লায়ন সার্কাসের মালিক ঢাকার নবাবগঞ্জের নিরঞ্জন বাবুর। হাতির বয়স ২৮বছর। হাতিটির নাম রাখা হয়েছিল শিশির বাবু।