আলমডাঙ্গা অফিস:
আলমডাঙ্গা পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারন সম্পাদক আল ইমরানকে (২৫) এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেছে দূর্বত্তরা। দু’জন দুর্বৃত্ত আল ইমরানকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে ফেলে রেখে বীরদর্পে হেঁটে স্থান ত্যাগ করে। গতকাল শুক্রবার বেলা ১১ টার দিকে রেলস্টেশন সংলগ্ন গোবিন্দপুর মাঠপাড়ায় এই পৈশাচিক হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটে। একের পর এক দায়ের কোপে রক্তাক্ত ইমরান জীবন বাঁচাতে পাশের খালের পানিতে নেমে যান। স্বজন ও নেতাকর্মীরা সেই পানি থেকেই ইমরানকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে দ্রুত কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। এসময় হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ইমরানকে মৃত ঘোষনা করেন। মৃত্যুর খবর আলমডাঙ্গায় পৌছলে গোবিন্দপুরসহ শহরে শোকের ছায়া নেমে আসে। সন্ধ্যার আগে লাশ কুষ্টিয়া থেকে আলমডাঙ্গায় পৌঁছলে লাশের কফিন নিয়ে শহরে স্বেচ্ছাসেবকলীগের ব্যানারে নেতাকর্মিরা হত্যাকারিদের গ্রেফতার পূর্বক বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
*পূর্ব বিরোধের জেরে হত্যাকাণ্ড
*দু’জনের পরিচয় সনাক্ত
*লাশ নিয়ে নেতাকর্মীর বিক্ষোভ
নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার আল ইমরান পৌরসভার গোবিন্দপুর গ্রামের চেয়ারম্যানপাড়ার আব্দুল জলিল জুড়নের ছোট ছেলে। ইমরান কয়েক মাস আগে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান ছিলেন।
ইমরানের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকমাস আগে নওদাবন্ডবিল গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে সাকিব ও দুর্লভপুর গ্রামের বিল্লাল হোসেনের ছেলে মাসুদসহ কয়েকজনের সাথে ইমরানের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে বিষয়টি স্থানীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে থানায় বসে মিমাংসা হয়। তবে রেষারেষি জিইয়ে থাকে। কিন্ত নির্মমভাবে ইমরানকে যে হত্যা করা হবে তা পরিবার কল্পনাও করেনি।
জানা গেছে, গোবিন্দপুর মাঠপাড়া বাইপাস সড়কে ব্যাংকার ফখরুল ইসলামের নির্মানাধীন বাড়ির সামনে ইমরান ও আব্দুস সাত্তার পুটের ছেলে আহাদ আলি বসে ছিল। এসময় ইমরানের সাথে পূর্বে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়া দুই যুবক মাসুদ ও সাকিবকে অপরিচিত এক লোক মোটরসাইকেলে করে সেখানে নামিয়ে দিয়ে যায়। মোটরসাইকেল থেকে নেমেই মাসুদ ও সাকিব রামদা দিয়ে ইমরানকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। ইমরানকে কোপাতে দেখে সংগে থাকা আহাদ আলী দৌঁড়ে পালিয়ে থানায় এসে খবর দেয়। একের পর এক দায়ের কোপে রক্তাক্ত ইমরান দৌঁড়ে পালাতে গিয়ে পাশের খালে পড়ে যান। পরে থানা পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন মুমুর্ষূ ইমরানকে খাল থেকে উদ্ধার করে শহরের ফাতেমা টাওয়ারে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে ইমরানকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী আহাদ আলী জানান, ইমরান ও সে গতকাল বেলা ১১টার দিকে রেলস্টেশন সংলগ্ন গোবিন্দপুর মাঠপাড়ার বাইপাস সড়কে ব্যাংকার ফখরুলের নির্মানাধীন বাড়ির সামনে বসে ছিলাম। এ সময় মাসুদ ও সাকিব রামদা দিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। আহাদ জানায় সে দৌড়ে পালিয়ে থানায় গিয়ে পুলিশকে সংবাদ দেয়।
নিহত ইমরানে বাবা আব্দুল জলিল জানান, চার মাস আগে গ্রামের কয়েকজন ছেলের সাথে ইমরানের দ্বন্দ্ব দেখা দিলে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে থানায় বসে তা সমঝোতা করা হয়। তারই জের ধরে আমার ছেলেকে একা পেয়ে তারাই কুপিয়ে হত্যা করেছে। তিনি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
আলমডাঙ্গা থানার পুলিশ পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারন সম্পাদক আল ইমরানের হত্যাকারীদের গ্রেফতারের জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকটি টিম কাজ করছে। গতকাল বিকাল থেকেই থানা পুলিশ, ডিবি, র্যাব, পিবিআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা অভিযান অব্যহত রেখেছে। আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার পূর্বক আইনের আওতায় আনা হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান বলেন, হত্যার সাথে জড়িত দুইজনের পরিচয় সনাক্ত করা গেছে। তারা ইমরানের পূর্ব পরিচিত ছিল। তাদের ধরতে পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে জেলা পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।
এদিকে, গতকাল সন্ধ্যায় ইমরানের লাশ কুষ্টিয়া থেকে আলমডাঙ্গায় পৌঁছায়। এসময় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম রিফাতের নেতৃত্বে লাশ নিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। বিক্ষোভ মিছিল শেষে স্বাধীনতা স্তম্ভ মোড়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মতিয়ার রহমান মতি, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মাফিজুর রহমান মাফি, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক জানিফ, আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারন সম্পাদক তরিকুল ইসলাম টুকুল, পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মিলন, সাংগঠনিক সম্পাদক আলম হোসেনসহ জেলা, উপজেলা ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মি উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহবায়ক মতিয়ার রহমান মতি বলেন, আলমডাঙ্গা থানার ওসি সম্পর্কে দূর্বৃত্তদের হাতে নিহত ইমরানের কাছে সুনাম শুনেছি। পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরানের হত্যাকারিদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ কঠোর আন্দলনে নামবে।
দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত ইমরানের জানাযার নামাজ আলমডাঙ্গা দারুস সালাম ঈদগা ময়দান ও গোবিন্দপুর মন্ডলপাড়া কবরস্থান ময়দানে ২য় জানাযা শেষে গোবিন্দপুর মন্ডলপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার জানাযা নামাজে অংশগ্রহন করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু, চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহবায়ক মতিয়ার রহমান মতি, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মাফিজুর রহমান মাফি, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম রিফাত, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক জানিফ, আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারন সম্পাদক তরিকুল ইসলাম টুকুল, পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মিলন, সাংগঠনিক সম্পাদক আলম হোসেন, সদস্য রাজ্জাক, হিরোকসহ জেলা, উপজেলা ও পৌর নেতাকর্মিরা।
অপরদিকে ইমরান হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু।