নিজস্ব প্রতিবেদক:
কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া অনেকটাই শান্তিপূণ ও সুনসান পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহন। গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলে এ দুটি উপজেলার ভোট গ্রহন। ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন ভোটাররা। টানা ৮ ঘণ্টা ভোট গ্রহন কার্যক্রম চলার পর বিকেল ৪টার পর থেকে শুরু হয় ভোট গণনা। এরপর রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এতে বেসরকারিভাবে দামুড়হুদা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে দ্বিতীয় দফায় আলি মুনছুর বাবু ও জীবননগর উপজেলায় হাফিজুর রহমান নির্বাচিত হয়েছেন। নতুন পুরনোর এ লড়াইয়ে পুরনো চেয়ারম্যানরাই আবারও জয়ী হয়েছেন। ভোট চলাকালে দেখা যায়, সকাল থেকেই দুটি উপজেলার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে সাধারন ভোটারের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। বেলা গড়ালেও সেভাবে বাড়েনি উপস্থিতির হার। সবমিলিয়ে দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলায় ভোট প্রদত্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৪৩ এবং ৩৭ দশমিক ২৫ শতাংশে।
ফলাফলের হিসাবে দেখা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলায় আনারস প্রতীকের প্রার্থী আলি মুনছুর বাবু ৪৯ হাজার ৯৫২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোটরসাইকেল প্রতীকের এস এ এম জাকারিয়া আলম পেয়েছেন ১৩ হাজার ৫৩০ টি ভোট। আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের অ্যাড. আবু তালেবের মোট প্রাপ্ত ভোট ২ হাজার ৫৯০টি।
এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শফিউল কবীর ইউসুফ নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে এ পদে ভোটগ্রহন অনুষ্ঠিত হয়নি। অপরদিকে, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তানিয়া খাতুন ফুটবল প্রতীক নিয়ে ৩৩ হাজার ৪৮৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাহিদা খাতুন। তিনি কলস প্রতীক নিয়ে ২৯ হাজার ৪৭ ভোট পেয়েছেন।
দামুড়হুদা উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪৭ হাজার ৮২২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২৪ হাজার ৮৭৯ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ২২ হাজার ৯৪৩ জন। উপজেলার মোট ৯৬টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হয়। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন ৩ জন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১ জন। এখানে মোট ভোটারের মধ্যে প্রদত্ত ভোটের শতকরা হার ২৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
জীবননগর উপজেলায় কাপ-পিরিচ প্রতীকের হাফিজুর রহমান ৩৩ হাজার ৫৩ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে আবারও নির্বাচিত হয়েছেন। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এসকে লিটনের আনারস প্রতীক নিয়ে ২৩ হাজার ৬১৭ টি ভোট পেয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম ঈসা নির্বাচিত হয়েছেন। তাই এ পদে এখানেও ভোট গ্রহন হয়নি। তবে, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে রেনুকা আক্তার রিতা হাঁস প্রতীক নিয়ে ৩৬ হাজার ২৫৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার এক মাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আয়েশা সুলতানা লাকী। তিনি কলস প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১৮ হাজার ৩৭১ ভোট।
এ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭৮ হাজার ১৬৭ জন ও নারী ভোটার ৭৭ হাজার ২২৯ জন। উপজেলার মোট ৬২টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হয়। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন ২জন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১ জন। এ উপজেলায় মোট ভোট প্রদত্ত হয়েছে ৩৭ দশমিক ২৫ শতাংশ।
এদিকে, ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সকাল থেকেই বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা ও পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমানসহ (পিপিএম-সেবা) বিভিন্ন পর্যায়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সেইসাথে ভোটের মাঠে দায়িত্ব পালন করেন বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং আনসার সদস্যরা। সেইসাথে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে মাঠে ছিলেন ১৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান (পিপিএম-সেবা) বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। যেকোন মূল্যে আমরা সমন্বিতভাবে ভোটের পরিবেশ বজায় রাখতে চাই। এজন্য যেকোন অভিযোগ কিংবা তথ্য গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমরা কুইক রেসপন্স করছি।’
আর জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘আমরা বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখেছি। কোথাও তেমন বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অভিযোগ পাওয়া মাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের সহায়তায় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। তবে ভোটার উপস্থিতি সকালের দিকে কম ছিল। তবে ধীরে ধীরে সে হার বেড়েছে।’
ভোটারশূণ্য কেন্দ্রে তাদের অলস সময়
শেখ লিটন:
দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহনের দিন বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। সকাল থেকেই অনেকটা ফাঁকা পড়ে ছিল কেন্দ্রের সামনের স্থান। ছিল না চিরচেনা সেই দীর্ঘ লাইন। হাতে গোনা কিছু ভোটার দল বেঁধে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে আবার ফিরে যান। কেন্দ্রের আশপাশের এলাকাও ছিল অনেকটা সুনসান। ফলে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা খুব বেশি ছিল না। অনেক সদস্যই বেঞ্চে চেয়ারে বসে অলস সময় পার করেছেন। দামুড়হুদা ও জীবননগরের বেশ কয়টি কেন্দ্র ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলার উজিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে সকাল ১১ টা পার হয়ে গেলেও ভোটার উপস্থিতি ছিল অনেকটাই কম। এই কেন্দ্রে ১০ মিনিট পর পর ঘড়ি ধরে দেখা গেছে একজন একজন করে আসছে ভোট কেন্দ্রে ভোট প্রয়োগ করতে। ফলে ছিল না ভোটারদের লাইন। ভোট কেন্দ্রের চারপাশ নিরবতা অনেকটাই। কেন্দ্রের বাইরে ও ভিতরে সবই যেন শূণ্যভাব। ফলে ভোট কেন্দ্রে নিয়োজিত দায়িত্বরত পুলিশ, আনসার বিজিবি এবং র্যাবসহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চুপচাপ বসে সময় কাটিয়েছেন। ভোটারের উপস্থিতি কম থাকায় ঘন্টার পর ঘন্টা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন গল্পে আর আড্ডায় মেতে ছিল। ভোটার উপস্থিতি কম থাকায় এই দৃশ্য দেখা গেছে এই কেন্দ্রে। এই কেন্দ্রের মতো একই অবস্থা দামুড়হুদা ও জীবননগরের আরও কয়েকটি কেন্দ্রের।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, দামুহুদায় ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৯৬ টি ও জীবননগরে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৬২টি। নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে ছিল আইনশৃঙ্খলার বাহিনী ৬ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রত্যেকটি কেন্দ্রে ৪ জন পুলিশ ও ১৪ জন আনসার সদস্য মোতায়েন ছিল। এছাড়া ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশের টহল টিম ও এক প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন ছিল। দুটি উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে র্যাবের ৪টি টহল টিম ও দুই প্লাটুন বিজিবি সদস্যরাও মাঠে ছিল।
কথা হয় ভোট সেন্টারে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য হায়দার আলীর সাথে। তিনি বলেন, সকাল আটটার পর থেকেই ভোটার উপস্থিতি খুব বেশি না। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোটার উপস্থিতি বাড়লেও ভোটারের লাইন তৈরি হয়নি। কোন ঝামেলা-হট্টগোলও নেই, তাই আমরা চুপচাপ সময় কাটাচ্ছি।
দায়িত্বরত আনসার সদস্য ইমান আলী বলেন, ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের চিরচেনা লাইন হয়নি ঠিকই কিন্তু কয়েক মিনিট পর পর ভোটাররা আসছেন। ভোট দিচ্ছেন আবার চলে যাচ্ছেন। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা আছি এখানে সবাই প্রায় বসে থেকে দিন পার করছি। তেমন কোনো ভোটারের হৈচৈ নেই। নিরব হয়ে আছে ভোট কেন্দ্রেগুলো। তাই আমরা গল্প আড্ডায় আর অলস সময় পার করছি ভোট সেন্টারে।