আলমডাঙ্গা অফিস:
আগামী ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এখানে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গণের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ সমমনা বেশকিছু দল নির্বাচনে না আসায় ভোটের মাঠে ঝড় উঠছে না তেমন। তবে প্রার্থীরা তাদের সমর্থকদের নিয়ে ভোটের হাওয়ায় উত্তাপ ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে প্রতীক বরাদ্দ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি মেয়াদের চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন আবারও প্রার্থী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন দোয়াত কলম প্রতীক। গত নির্বাচনে তারই নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জিল্লুর রহমান ঘোড়া প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। এছাড়া মঞ্জিলুর রহমান মোটরসাইকেল, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী নুরুল ইসলাম কাপ পিরিচ ও মোমিন চৌধুরী ডাবু আনারস প্রতীক পেয়েছেন। ইতোমধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
সূত্র জানিয়েছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অনেকটা প্রকাশ্যেই ঢাকার ব্যবসায়ী মঞ্জিলুর রহমানের পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন। সে কারণে প্রচারণায় তিনি রাজনৈতিক সুবিধাও পাচ্ছেন।
একই ধরনের সুবিধা পাচ্ছেন হারদী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম। যুবলীগ নেতৃবৃন্দের সমর্থন তার পক্ষে রয়েছে। সম্প্রতি জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নঈম হোসান জোয়ার্দ্দার আনুষ্ঠানিকভাবে নুরুল ইসলামকে সমর্থন দিয়েছেন। যদিও যুবলীগ নেতাদের এখনও তেমনভাবে প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা যায়নি। তবে হারদী গ্রামকে শিক্ষানগরীর মর্যাদার পেছনে অবদানের কারণে উপজেলাজুড়ে তার সুখ্যাতি রয়েছে। এছাড়া হারদী ইউনিয়নের দু’বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান হওয়ায় উপজেলাজুড়ে তার পরিচিতিও রয়েছে।
বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন ও জিল্লুর রহমান দিলীপ কুমার আগরওয়ালার পক্ষের প্রার্থী। যদিও দিলীপ কুমার আগরওয়ালা নিজেকে কোন প্রার্থীর সাথে এখনই জড়াচ্ছেন না। নির্বাচন থেকে তিনি সূক্ষ্মভাবে দূরত্ব বজায় রেখেছেন। ফলে তার সমর্থকরা ঢালাওভাবে কোন প্রার্থীর পক্ষের প্রচারণায় নেই। গুঞ্জন উঠেছে তিনি জিল্লুর রহমানকে সাপোর্ট করতে পারেন। এমনটি হলে জিল্লুর রহমানের অবস্থান পাল্টে যেতে পারে। তবে এই দুজন গত উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন। উপজেলায় তাদের দুজনেরই ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক পরিচিতি রয়েছে।
অন্যদিকে, মঞ্জিলুর রহমান ও মোমিন চৌধুরী ডাবু দীর্ঘ বছর ধরে ঢাকায় অবস্থান নিয়ে নিজেদের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। দলীয় সমর্থন বাদেও সাধারণ ভোটারদের মাঝে নতুন করে পরিচিতি পেতে তারা ছুঁটছেন উপজেলার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে।
কিন্তু আসন্ন উপজেলা নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটার বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম কী ভাবছেন? আসুন, জানার চেষ্টা করি।
ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটিতে পড়েন আব্দুর রহিম। তিনি জানান, ‘ছোট বেলায় সবার মধ্যে ভোট উৎসব দেখেছি, এখন তা নেই। তবে নির্বাচনের দিন কেন্দ্রের পরিবেশ ভালো থাকলে আমি ভোট দিতে যাব, তা না হলে কোন ধরনের ঝামেলায় জড়িয়ে ভোট দিতে চাই না।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ভর্তি হয়েছেন মায়া খাতুন। তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে অনেক রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নেই। যতদূর বুঝতে পারছি তা হল এই নির্বাচনটা মূলত আওয়ামী লীগের নেতারাই স্বতন্ত্র ব্যানারে বিভক্ত হয়ে প্রার্থী হয়েছেন। ফলে নির্বাচনে আমার তেমন আগ্রহ নেই। তবে ভোট দেবার ক্ষেত্রে সমাজের স্বার্থ বিবেচনা করে সৃষ্টিশীল ও সৎ প্রার্থিকে ভোট দেবো।’
ভিন্নমত পোষণ করে আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আরিফুল হক বলেন, ‘এবার আমি প্রথম ভোটার হয়েছি। তাই আমি আমার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি। আমি মনে করি এলাকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট প্রয়োগ আমার মত প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব।’
ভোটের মাঠ এখনও জমেনি উল্লেখ করে অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী কনক সরোয়ার বলেন, ‘আমি নতুন ভোটার। আমি অবশ্যই ভোটাধিকার প্রয়োগ করব।’ বিএনপি জামায়াত নির্বাচনে অংশ না নিলেও তাদের সমর্থকরা ভোট দেবেন বলেও বিশ্বাস করেন তিনি।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে মাস্টার্স পড়ছেন মাহবুবা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আলমডাঙ্গা উপজেলার সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে যে প্রার্থীর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। যিনি অতীতে সফল কোন উদ্যোগের কারণে পরিচিত ও পরীক্ষিত। এমন প্রার্থীকে বেছে নেওয়া দরকার।’ তিনি নিজেও সেটা করবেন বলে জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দীঘলডাঙ্গা গ্রামের এক বয়স্ক ব্যক্তি বলেন, ‘ভোটের সময় সবাই ভালো ভালো কথা বলেন, প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু পরে টের পায় সবই মিথ্যা। প্রার্থিদের অনেকে আবার এলাকায় থাকেন না। ঢাকায় থাকেন।’
হারদী মীর শামসুদ্দীন আহমেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ওমর খৈয়াম বলেন, ‘ভোট নিতে প্রার্থীরা নানা রকম প্রতিশ্রুতি দেন, প্রতিশ্রুতির বেসাতি করেন। কিন্তু এখনকার অধিকাংশ ভোটার শিক্ষিত। অতীতে এসব প্রার্থির কী ধরণের সাফল্য আছে। উন্নয়নে কোন উদাহরণ সৃষ্টি করতে পেরেছেন কিনা। এলাকার উন্নয়ন নিয়ে আসলেই প্রার্থির নিজেস্ব কোন পরিকল্পনা আছে কীনা? তা যাচাই করে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিজে শিক্ষিত মানুষ হিসেবে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে সবার আগে নিজ এলাকায় প্রার্থি শিক্ষা বিস্তার ও স্বাস্থ্য উন্নয়নে কী ভূমিকা রেখেছেন তা বিবেচনা করবো। সমাজের মানুষকে ভালোবেসে তিনি এযাবৎ কি কি কাজ করেছেন?’
হাটবোয়ালিয়া গ্রামের মুর্শিদ কলিন বলেন, ‘শুধু সরকারি গাড়ি চড়ে বেড়াতে, দাওয়াত খেয়ে বেড়াবে, সাধারণ মানুষের কাছে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ করে জাহির করতে ব্যস্ত থাকবে এমন কাউকে ভোট দেবো না। প্রার্থির ব্যক্তিগত সাফল্য, ব্যক্তিগত সততাও বিবেচনা করবো।’ তিনি বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যান যিনি হবেন, তার যোগ্যতা থাকতে হবে সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্য ও সরকারি আমলার সাথে সাফল্যের সাথে ড্রিল করার। সাধারণ মানুষের হিস্যা আদায় করে নেওয়ার দক্ষতা থাকতে হবে। সর্বপরি, একজন বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের অধিকারী প্রার্থীকে বেছে নেওয়া প্রয়োজন। এমতাবস্থায়, নতুন ভোটারদের কেন্দ্রে নেওয়াটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ এবারের নির্বাচনে নতুন ভোটাররা উপেক্ষিত। তাদের জন্য প্রার্থীদের কোন আশার বাণী নেই। নতুন উদ্যোক্তাদের জন্যও কোন পরিকল্পনা নেই।’