নিজস্ব প্রতিবেদক:
আলমডাঙ্গার ভোগাইলবগাদী গ্রামে ৭ বছর বয়সী শিশু মাইশাকে শ^াসরোধ করে হত্যার পর বিদ্যুতস্পৃষ্টে মৃত্যুর নাটক সাজায় আপন মা পপি খাতুন। স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে দায় স্বীকার করে নিজের শিশু কন্যাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার পৈশাচিক বর্ণনা দেন মা পপি খাতুন। এরপর বিষয়টি নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ। গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে নির্মম এ ঘটনার আদ্যোপান্ত তুলে ধরেন পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান (পিপিএম-সেবা)।
নিজের মেয়েকে হত্যার কারণ হিসেবে পুলিশ সুপার উল্লেখ করেন, শিশু কন্যার মা পপি খাতুনের বিয়ে হয়েছিল কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর থানার ঝুটিয়াডাঙ্গা গ্রামের সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। দাম্পত্য কলহের কারণে আগেই তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছিল এবং পপি খাতুন তার মেয়ে মাইশাকে নিয়ে বাবার বাড়ি আলমডাঙ্গার ভোগাইলবগাদী গ্রামে বসবাস করছিলেন।
পপি খাতুন পুলিশের কাছে মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করে বলেন, মেয়ে মাইশা নাবালিকা। তার বাবা হয়তো আরেকটি বিয়ে করবে। পপিরও অন্য জায়গায় বিয়ে হতে পারে। তখন মাইশাকে দেখার কেউ থাকবে না। মাইশার জীবন কাটবে কষ্টে। প্রতিবেশীদের একটি মেয়েকে এভাবে বড় হতে দেখেছে পপি। এসব চিন্তা-ভাবনা করে পপি মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন।
এসপি ফয়জুর রহমান আরও বলেন, শিশু মাইশা তার মায়ের সঙ্গে আলমডাঙ্গার ভোগাইলবগাদী গ্রামে বসবাস করতো। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টার দিকে মাইশার মা পপি খাতুনের চিৎকারে প্রতিবেশিরা ছুটে আসেন। সেসময় মাইশার গলায় মোবাইল ফোনের চার্জারের তার জড়ানো ছিল। মা পপি প্রতিবেশীদের জানান, তার মেয়ে মাইশা বিদ্যুৎস্পর্শে মারা গেছে। প্রতিবেশীরা মাইশাকে দ্রুত নিয়ে যান চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে মাইশাকে মৃত্য ঘোষণা করেন। পাশাপাশি চিকিৎসকরা নিহত মাইশার গলায় দাগ থাকার কথাও পুলিশকে জানান। পুলিশ মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, নিহত মাইশা খাতুন বিদ্যুতস্পর্শে মারা যায়নি। তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
বিষয়টি পুলিশ নিহতের পরিবারকে জানালে মাইশার নানা ভোগাইলবগাদী গ্রামের মৃত নূর হোসেনের ছেলে শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করে গত ৩ মে আলমডাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়।
এদিকে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেয়ে পুলিশ সুপার নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। এরপর কৌশলে খুনি মাকে এসপি নিজের গাড়িতে করেই পুলিশ হেফাজত নিয়ে আসেন। তারপর প্রমাণ হয় চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ভোগাইলবগাদি গ্রামের শিশু মাইশা খাতুন (৭ বছর) বিদ্যুৎস্পর্শে মারা যায়নি, তাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। আর মাইশাকে অন্য কেউ নয়, তার নিজের মা তাকে গলা টিপে হত্যা করে। এ ঘটনায় ঘাতক মা পপি খাতুনকে (২৫) পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পপি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গতকালের আয়োজিত সংবাদ সম্মেললে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) নাজিম উদ্দীন আল আজাদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান লালন, ডিআই-১ ইন্সপেক্টর আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান, উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিকাশ দাসসহ ঊর্ধ্বতনরা উপস্থিত ছিলেন।