আলমডাঙ্গা অফিস:
আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের জমি রাতের আঁধারে জবরদখল করতে গিয়ে আবারও সমালোচনার তীব্র ঝড় তুলেছেন ব্রাইট মডেল স্কুলের পরিচালক জাকারিয়া হিরো। কলেজের চলমান কনস্ট্রাকশন কাজের মধ্যেই হিরো কলেজের কয়েক শতক জমি নিজের জমির সাথে বেড়া দিয়ে ঘিরে নেন। গতকাল শুক্রবার সকালে জানতে পেরে কলেজের অধ্যক্ষ জেএম আব্দুর রকিব সকল শিক্ষক-কর্মচারী নিয়ে ছুটির দিনেও কলেজে হাজির হন। শহরের সচেতন ব্যক্তিবর্গও ছুটে যান কলেজ প্রাঙ্গণে। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্নিগ্ধা দাস। পরে বেড়া সরিয়ে দিয়ে প্রাচীরের কাজ শুরু করে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক জেএম আব্দুর রকিব বলেন, কলেজের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ওই জমি কলেজের ভোগদখলে রয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ কলেজের স্বার্থ দেখবে। প্রাচীর দিয়ে ঘিরে ওই জমি দখলে রাখবে। প্রাচীর নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
কলেজে উপস্থিত হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্নিগ্ধা দাস বলেন, জাকারিয়া হিরো মোটেও সঠিক কাজ করেননি। জমিটা কীভাবে তার সেটা কলেজ কর্তৃপক্ষকে আগে অবহিত করতে পারতেন। এভাবে জমি দখলে নেয়া ঠিক হয়নি।
আরও জানা গেছে, কলেজের বিজ্ঞান ভবনের পাশে মরহুম ইসলাম খানের একটি একতলা বাড়ি রয়েছে দীর্ঘ বছর ধরে। ইসলাম খানের ছেলেরা সেই বাড়ি ভোগদখল করে আসছিল। গতকাল সকালে তারাও জানতে পারে তাদের বাড়ি তাদের আর নেই। বাড়ি জাকারিয়া হিরো কিনে নিয়েছেন। কার কাছ থেকে কিনলেন? কীভাবে কিনলেন তা জানতে ইসলাম খানের বড় ছেলে ডনও সবার মত কলেজ চত্বরে হাজির হন। ছেলেটি বাড়ির দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে উদভ্রান্তের মত বলছিল, ‘কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা।’
জাকারিয়া হিরোর বিরুদ্ধে এর আগেও শহরবাসীর প্রাণের প্রতিষ্ঠান ব্যায়ামাগার কৌশলে দখলে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। তবে জাকারিয়া হিরো এসময় ঘটনাস্থলে ছিলেন না।
এদিকে, অভিযুক্ত জাকারিয়া হিরো সম্পর্কে আলমডাঙ্গাবাসীর ব্যাপক ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেখা গেছে। তাদের অনেকে হিরোকে ভূমিদস্যুর মত আচরণ করছেন বলেও মন্তব্য করেছেন। বিশেষ করে আলমডাঙ্গার এক সময়ের গর্ব আলমডাঙ্গা ব্যায়ামাগার কৌশলে দখলে নিয়ে ভেঙ্গে গুড়িয়ে সেখানে নিজের বহুতলা ভবন নির্মাণের ঘটনায় ক্ষুদ্ধ আলমডাঙ্গার সাধারণ মানুষ।
আলমডাঙ্গা ব্যায়ামাগার ছিল এক সময়ে শহরের মর্যাদার প্রতিক। এ জনপদের মানুষের সার্বিক স্বাস্থ্য সচেতনতার ও শারীরিক কসরত প্রদর্শন পারদর্শীতার পরিচায়ক। এই ক্লাবের ছেলেরা জাতীয় প্রতিযোগিতায় জেলার হয়ে অংশ নিয়ে প্রতি বছর বক্সিং, ওয়েট লিফটিং, কুস্তিতে পদক উপহার পেত। কৌশলে সেই ব্যায়ামাগারের নিজস্ব একতলা ভবন ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে সেখানে গড়ে তুলছেন ব্যক্তিগত বহুতল ভবন। আলমডাঙ্গা ব্যযামাগারের তৎকালীন পরিচালক ও প্রতিষ্ঠাতা ইসলাম খানের অকাল মৃত্যুতে ব্যায়ামাগারটি অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। জমির দলিল পর্যন্ত অসচেতন পরিবার আগলে রাখেনি। ফলে খুব সহজেই আলমডাঙ্গাবাসীকে ব্যায়ামাগার হারানোর কষ্ট পেতে হয়। ব্যক্তিস্বার্থের কাছে সার্বজনীন স্বার্থের নিদারুন পরাজয় ঘটে। এ মিরজাফরীতে কিছু সরকারি কর্মচারী হাত মিলিয়েছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে শহরবাসীর চাপা ক্ষোভও রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সকালে সংবাদ পেয়ে অকুস্থলে অনেকের মত ছুটে যান আলমডাঙ্গা বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন। তিনিও অভিযুক্ত জাকারিয়া হিরোর ব্রাইট মডেল স্কুলের মূল ভবনের জমি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। প্রতিষ্ঠাকালীন খাস জমি দখল করে পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ওই জমি লিজ নেন বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জাকারিয়া হিরোর নেশা হচ্ছে খাস জমি, দুর্বল ব্যক্তির জমি কৌশলে দখলে নেওয়া। ইতোমধ্যে তিনি ব্যায়ামাগার ও মৃত ইসলাম খানের বাড়ি দখলের মত পৈশাচিক ঘটনা ঘটিয়েছেন। ইসলাম খানের অসহায় পরিবার এখন রাস্তায় কেঁদে বেড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, আলমডাঙ্গা শহরে ভালো মানুষের পাশাপাশি অনেক লোভি মানুষ আছেন। কিন্তু এই মহা অপরাধ কেউ করেননি। যেটা হিরো করেছেন। এমনকি সরকারি কলেজের জমি দখলের মত ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, আলমডাঙ্গায় কিছু অসৎ মহুরী, কিছু সরকারি কর্মচারী ও চিহ্নিত ভূমিদস্যুর মিলিত একটি চক্র রয়েছে। এরা টাকার বিনিময়ে লোভী শ্রেণির বিত্তবানদের হয়ে এসব অপকর্ম করে থাকে।
একটা মানবিক, সচেতন ও কল্যাণমুখী আলমডাঙ্গা গড়ে তোলার স্বার্থে সকল নেতিবাচক শক্তির বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা আবশ্যক এবং তা এখনই করা উচিত। এ ব্যাপারে তরুণ সমাজকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে- এমন মনোভাব আলমডাঙ্গার অধিকাংশ সচেতন মানুষের।