নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন অধ্যাপক ডা. মো. উবাইদুল কবীর চৌধুরী । গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব স্নেহাশীষ দাশ স্বাক্ষরিত একপত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ২৮ এপ্রিল থেকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য এ নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। এদিকে, অধ্যাপক ডা. মো. উবায়দুল কবীর চৌধুরী চেয়ারম্যান নিযুক্ত হওয়ায় চুয়াডাঙ্গা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সেক্রেটারী শহিদুল ইসলাম সাহান ইউনিটের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। অধ্যাপক ডা. মো. উবায়দুল কবীর চৌধুরী ১৯৭৩ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এমবিবিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং একই কলেজে ১৯৭৬ সালে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি ভিয়েনা ইউনিভার্সিটি থেকে এক্সিলেন্ট গ্রেডে চর্ম ও যৌনরোগে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। অতঃপর গ্লাসগো রয়েল কলেজ ফেলোশিপ সনদ এবং আমেরিকান কলেজ অব এনজিওলজি থেকে এ্যাসোসিয়েট ফেলো নির্বাচিত হন। তিনি বর্তমানে আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজির আর্ন্তজাতিক ফেলো হিসাবে সংযুক্ত আছেন এবং প্রতি বছর আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি লন্ডনের সেন্টথমাস হসপিটালে স্কিন প্যাথলজি, আমেরিকার হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলে লেজার ও দিল্লির এইমস থেকে স্কিন সার্জারিসহ স্নাতকোত্তর পর্যায়ের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। কানাডার অটোয়া ইউনিভার্সিটি ও আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব মিসিসিপি মেডিকেল সেন্টারে ভিজিটিং অধ্যাপক হিসাবে বিভিন্ন সময়ে পাঠদান করেন। বর্তমানে তিনি এম. এইচ. শমরিতা হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। উল্লেখ্য, তিনি ২০০৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র চিকিৎসক হিসাবে কানাডার অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে যোগদান করেন। তিনি কধনরৎং উবৎসধঃড়ষড়মু রহ চৎধপঃরপব ও অ ঞৎবধঃরংব ড়হ ঞড়ঢ়রপধষ ঈড়ৎঃরপড়ংঃবৎড়রফং রহ উবৎসধঃড়ষড়মু এর মতো অনেক প্রসিদ্ধ গ্রন্থের প্রণেতা। এছাড়াও, তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রবন্ধপাঠ করেন।
অধ্যাপক কবীর চৌধুরী মহান মুক্তিযুদ্ধে একজন মেডিকেল শিক্ষার্থী হিসাবে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও ভাটিপাড়া ইউনিয়নে মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বপ্রকার চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করার পাশাপাশি শহীদ মুক্তিযোদ্ধার জানাজা ও সমাধির ব্যবস্থা করেন। তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইন্টার্নি চিকিৎসক হিসাবে দায়িত্বরত অবস্থায় বঙ্গবন্ধু পরিবারের আহত সদস্যদের জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। তিনি বৃক্ষমানব খ্যাত আবুল বাজানদারের চিকিৎসায় অন্যতম স্কিন ও লেজার সার্জন হিসাবে অংশগ্রহণ করেন এবং জটিলরোগের সফল চিকিৎসা করে বিশ্বখ্যাতি অর্জন করেন।
চিকিৎসাবিদ্যা ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অধ্যাপক ডা. এম. ইউ. কবীর চৌধুরী স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২০ প্রাপ্ত হন। তিনি স্বনামধন্য ২টি মেডিকেল পেরিয়ডিক্যাল থেকে বেস্ট ডার্মাটোলজি এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত হন। এছাড়াও তিনি অল ইন্ডিয়া মহাত্মা গান্ধী ইন্সস্টিটিউট অব কম্পিউটার সাইন্স এন্ড টেকনোলজি, ইন্ডিয়া থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও চিকিৎসা সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য “মহাত্মা গান্ধী আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার-২০২৩” প্রাপ্ত হন।
অধ্যাপক ডা. মো. উবায়দুল কবীর চৌধুরী দীর্ঘ ৫০ বছর যাবৎ দেশে ও বিদেশে অত্যন্ত সুনামের সাথে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত আছেন। তম্মধ্যে তিনি গত ৪০ বছরের অধিক বাংলাদেশে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন। যার চিকিৎসায় সারাদেশের অসংখ্য জন সাধারণ নিয়মিত উপকৃত হচ্ছেন। তিনি ধনী-দরিদ্র ভেদাভেদ না করেই অত্যন্ত যত্ন ও মনোযোগ সহকারে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের মাধ্যমে তার কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত আছেন এবং তিনি প্রতিদিন চেম্বারে আগত শতাধিক রোগীর মধ্যে গরীব ও অসহায় রোগীকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। তিনি এম.এইচ. শমরিতা কলেজ ও হাসপাতালে গরীব ভর্তি রোগীদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ভিজিট করার পাশাপাশি বেড ভাড়াও বিনামূল্যে প্রদান করেন। এছাড়াও তাঁর দেশের সম্মানীত সরকার প্রধানসহ মন্ত্রীপরিষদের সদস্যবর্গ, বিচারপতি, সাংসদ, সচিবগণসহ অন্যান্য সকল বেসামরিক ও উর্দ্ধতন সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দের চিকিৎসা দেওয়ার অসংখ্য নজির আছে। বাংলাদেশে তাঁর কর্মজীবনের মধ্যে সৌদি বাদশার আমন্ত্রণে রয়েল গেস্ট হিসাবে কয়েকবার হজ্বব্রত পালন করেন। ডাঃ কবীর চৌধুরী বাংলাদেশের অনেক দূতাবাসের তালিকাভূক্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসাবে রোগী দেখেন। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ বিমানসহ অনেক সংস্থার তালিকাভুক্ত চিকিৎসক। তিনি হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজসহ ঢাকার বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে বিনামূল্যে পাঠদান করেন। ডাঃ কবীর চৌধুরী বাংলাদেশের শুধু প্রবীণ চিকিৎসকই নন, তিনি বাংলাদেশের আধুনিক চর্ম ও এ্যাসথেটিক চিকিৎসার পুরুধার ও পথপ্রদর্শক। ডাঃ কবীর চৌধুরী ১৯৭৬ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ- এ একজন শিক্ষক হিসাবে তার কর্ম জীবন শুরু করেন, বর্তমানে শত শত স্বনামধন্য লব্ধ প্রতিষ্ঠিত চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক ডাঃ কবীর চৌধুরীর ছাত্র। সর্বপরি তিনি প্রায় ৫০ বছরের কর্মজীবনে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি ১৯৭০ সালের ভয়াবহ জলচ্ছ্বাসসহ বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দূর্যোগে মেডিকেল কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় রিলিফ টিমে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে অংশগ্রহণ করেন।
তিনি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির একজন আজীবন সদস্য এবং সম্প্রতি অধ্যাপক ডা. মো. উবায়দুল কবীর চৌধুরী মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ০৩ (তিন) বছরের জন্য বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মাননীয় চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি সুনামগঞ্জ জেলার ভাটিপাড়ায় জন্মগ্রহন করেন।