মুতাছিন বিল্লাহ, জীবননগর:
বীমার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও টাকা ফেরত দিচ্ছে না বীমা কর্তৃপক্ষ। বছরের পর বছর অপেক্ষার পরও নানাভাবে বীমা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে হয়রানির শিকার হচ্ছেন চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের গ্রাহকরা। উপরন্তু কোন উপায় না পেয়ে বীমা গ্রাহকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের জীবননগর শাখায় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তালা ঝুলিয়ে দেন। তবে এমন পরিস্থিতির জন্য ঢাকার প্রধান কার্যালয়ের সিদ্ধান্তকে দুষছে স্থানীয় বীমা অফিসের কর্মকর্তারা।
সরেজমিন দেখা যায়, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের চুয়াডাঙ্গার জীবননগর পৌর শহরের কাজী টাওয়ারের তিন তলায় ২০১১ সাল থেকে একটি শাখা অফিসের কার্যক্রম শুরু করেন। শাখার প্রায় ৩ শতাধিক গ্রাহকের বীমার মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু অর্থ ফেরত পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। বছরের পর বছর টাকা ফেরত পেতে ওই অফিসে যোগাযোগ করলেও হয়রানি করছে কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটিতে ১০-১৫ বছর পর্যন্ত টাকা জমিয়ে এখন সে টাকা তুলতে না পেরে বিপাকে স্থানীয়রা। আর প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়ে বারবার টাকা চাইলেও কোনো সাড়া মিলছে না। এ কারণে গ্রাহকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কার্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। প্রতিনিয়ত অপমানের শিকার হচ্ছেন বীমার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে স্থানীয়রা জীবননগর থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বীমার কর্মকর্তাদের মুক্ত করে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য বলেন।
ইনস্যুরেন্স কোম্পানির তথ্যমতে, বীমার মেয়াদ শেষ হয়েছে এমন গ্রাহক সংখ্যা ৬ শতাধিক। এর মধ্যে ২৮০ গ্রাহকের টাকা আটকে আছে। যার প্রায় ১কোটি ২০ লাখ টাকা।
এক ভুক্তভোগী গ্রাহক আব্দুল হালিম জানান, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে দু-বছর আগে আমার বীমার মেয়াদ শেষ হয়েছে। অথচ আজও টাকা ফেরত দিচ্ছে না তারা। টাকার জন্য বীমা অফিসে গেলে নানা রকম টালবাহানা করেন অফিসের কর্মকর্তারা।
আরেক ভুক্তভোগী গ্রাহক আমজেদ হোসেন জানান, বীমা করার সময় তাকে বলা হয়েছিল বীমার মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে সব টাকা ফেরত দেয়া হবে। অথচ এখন চার বছর ধরে অফিসে এসে ধরনা দিয়ে টাকা ফেরত পাচ্ছেন না।
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি জীবননগর শাখা ব্রাঞ্চ ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম জানান, গ্রাহকেরা টাকা পাবে, ম্যানেজমেন্টের টাকা দিতে দেরি করায় আমাদের উপর অত্যাচার হচ্ছে। হেড অফিসে দীর্ঘদিন ধরে যোগাযোগ করা হলেও তারা গ্রাহকদের টাকার বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধান দিচ্ছেন না। সামনের মে মাসের শেষের দিকে আশ্বাস দিয়েছে এখন দেখা যাক কি হয়।
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি চুয়াডাঙ্গা জেলা অফিসের জেনারেল ম্যনেজার আমিনুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে ফোন দিলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর ফোনকল কেটে দেন। তারপর একাধিকবার কল দিলে তিনি আর মোবাইল ফোন রিসিভ করেনি।
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম জাবীদ হাসান বলেন, এ বিষয়ে গ্রাহকদের লিখিত অভিযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসিনা মমতাজ বলেন, এ বিষয়ে এখনও কোন অভিযোগ পায়নি। তবে গ্রাহকরা লিখিত অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।