ধর্ম ডেস্ক:
ইসলামে বিয়ে একটি মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত এবং রাসুলুল্লাহ (স.)-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। মুসলমানদের জন্য বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার ইসলামি পদ্ধতি রয়েছে। অথচ এর বাইরে গিয়ে বিভিন্ন কুসংস্কার ও গুনাহের মাধ্যমে বিয়েকে উদযাপন করার প্রবণতা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে নষ্ট হয়ে যায় বিয়ের সুফল ও বরকত। যেসব কারণে বিয়ের বরকত নষ্ট হতে পারে সেরকম কিছু কুসংস্কার এখানে তুলে ধরা হলো।
১. মোহর নিয়ে বাড়াবাড়ি
বিয়েতে ধার্য করা মোহর পরিশোধ করা জরুরি। বর্তমান সমাজে অধিক পরিমাণ মোহর ধার্য এবং তা আদায়ে অনীহার মনোভাব দেখা যায়। মেয়েপক্ষ বিয়ের সম্পর্ক রক্ষার জন্য মোহরের অঙ্ক বাড়ানোর চেষ্টা করে এবং ছেলেরা চিন্তা করে এটি আদায় করতে হবে না। ইসলামি শরিয়তে এমন মনোভাব নিন্দনীয়। কেননা মোহর আদায়ের নিয়তবিহীন বিয়েকে হাদিসে ব্যভিচারের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। তাই সামর্থ্য অনুযায়ী মোহর ধার্য করা এবং তা যথাসম্ভব দ্রুত পরিশোধ করা ইসলামের নির্দেশ। নবী কারিম (স.) বলেন, ‘সর্বোত্তম মোহর হলো, যা আদায় করতে সহজ হয়।’ (মুস্তাদরাকে হাকিম: ২৭৪২)
২. অতিরিক্ত খরচ করা
বিয়েশাদির অনুষ্ঠান যত অনাড়ম্বর হবে, খরচ যত কম হবে ততই তা বরকতপূর্ণ হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘সর্বাধিক বরকতপূর্ণ বিয়ে হচ্ছে, যার খরচ যত সহজ ও স্বাভাবিক হয়।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৪৫২৯)
কারণ অপব্যয় ও অপচয় নিন্দনীয় কাজ। পবিত্র কোরআনে অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমাদের অর্থ-সম্পদ অপ্রয়োজনীয় কাজে খরচ করবে না। জেনে রেখো, যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই।’ (বনি ইসরাঈল: ২৬-২৭)
তাই বিয়েশাদিতে হলুদ অনুষ্ঠান, ডিজে পার্টি, আতশবাজি, মরিচা বাতিসহ যত ধরনের অপসংস্কৃতি আছে, সবই বর্জনীয়।
নারী-পুরুষ একে অপরকে সালাম দেওয়া জায়েজ?
৩. বেপর্দা পরিবেশ তৈরি করা
বিয়েশাদিকে কেন্দ্র করে শরিয়তবিরোধী কোনো কাজের আয়োজন করা ও বেপর্দা পরিবেশ সৃষ্টি করা বিয়ের বরকত নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ। এছাড়া সেখানে যত গুনাহ হবে, এর অংশ আয়োজকদেরও বহন করতে হবে। বর-কনের সঙ্গে বসে গায়রে মুহরিমের ছবি তোলা ও শরীর স্পর্শ করে উপহার দেওয়ার প্রচলন রয়েছে অনেক জায়গায়। এসব অপসংস্কৃতি অবশ্যই বর্জনীয়। ইসলামের চোখের পাপ থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা রয়েছে। চোখের পাপ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার হুঁশিয়ারি- ‘আল্লাহ চোখগুলোর অসততা এবং অন্তর যা গোপন করে তা জানেন।’ (সুরা গাফির: ১৯)
৪. গিফট বুথ স্থাপন
অনেক অনুষ্ঠানে দেখা যায় প্রবেশ পথে গিফট বুথ স্থাপন করা হয়। এটি অত্যন্ত দৃষ্টিকটু ও নিম্নরুচির পরিচায়ক। এতে আগত মেহমানরা লজ্জায় পড়ে যায়। যেসব উপঢৌকন দেওয়া হয়, তা যদি চক্ষুলজ্জার খাতিরে বা সামাজিক চাপে বা সুখ্যাতি কিংবা তার বিনিময় পাওয়ার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে, তাহলে তা গ্রহণ করা অবৈধ। আর যদি প্রফুল্লচিত্তে ভালোবাসার স্মারকস্বরূপ দেওয়া হয় এবং না দিলে কোনো ধরনের অপমান করা না হয়, তাহলে ওই উপহারসামগ্রী গ্রহণ করা বৈধ। (সুনানে বায়হাকি: ১১৫৪৫; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৪/৩৮৩)
৫. বরযাত্রা নিয়ে চাপসৃষ্টি
বিয়ে উপলক্ষে বরযাত্রী গমন ও মেয়ের বাড়িতে আপ্যায়ন যদি কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতাহীন এবং সানন্দে হয়, তাহলে তা বৈধ, অন্যথায় অবৈধ। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, মেয়ের বাড়িতে বরযাত্রীদের দাওয়াত গ্রহণ ও মেহমানের সংখ্যা নিয়ে চাপ সৃষ্টি করা হয়, যা সত্যি নিন্দনীয়। শরিয়তের দৃষ্টিতে এটি মেয়ের পরিবারের প্রতি অবিচার। সুতরাং এমন কাজ পরিহার করা উত্তম। (আস-সুনানুল কুবরা: ১১৫৪৫, ফতোয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ: ৭/৫২২)
৬. গেট চাবি নামে বরকে আটকে রেখে টাকা আদায়
বিয়ের সময় বরকে গেটে আটকে রেখে টাকা আদায় করা হয়। সেখানে উভয় পক্ষের যুবক-যুবতীরা বিভিন্ন ধরনের দুষ্টুমিতে মেতে ওঠে। এখানে যেমন শরিয়তের মহান হুকুম পর্দা লঙ্ঘন হয়। তেমনি অনেক সময় চাপ সৃষ্টি করে বেশি টাকা আদায় করা হয়। অথচ রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন: ‘কোনো মুসলমানের সম্পদ তার আন্তরিক সম্মতি ছাড়া হস্তগত করলে তা হালাল হবে না।’ (বায়হাকি: ১৬৭৫৬)
এছাড়াও নতুন জামাই কিংবা কনেকে হাত ধুইয়ে টাকা উসুল করা, বাসর ঘরে গেট ধরে জোরপূর্বক টাকা উসুল করা-এসব ইসলামি চর্চা নয়, বরং কুসংস্কার। যদি বর বা কনে স্বেচ্ছায় তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কিছু দেয়, তা নিতে কোনো অসুবিধা নেই। মহান আল্লাহ আমাদের শরিয়তের বিধি-বিধান বুঝার ও মেনে চলার তাওফিক দান করুন। বিয়ের মতো মর্যাদাপূর্ণ ইবাদতকে কুসংস্কারমুক্ত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।