জীবননগর অফিস:
প্রতারণার শিকার হয়ে সৌদি আরবে বন্দী স্বামীকে রক্ষার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে এক নারী। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় জীবননগর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এসময় ওই নারী দাবি করেন, প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে তার স্বামীকে এখন সৌদি আরব এক কোম্পানির নিকট বিক্রি করে আটকিয়ে রাখা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়া হাবিবা খাতুন শিল্পী উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের গয়েশপুর গ্রামের ইব্রাহিমের স্ত্রী। প্রতারক হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি সৌদি প্রবাসী একই গ্রামের মৃত চান মিয়ার ছেলে বিপ্লব হোসেন ওয়াজের নাম উল্লেখ করেন।
শিল্পী দাবি করেন, আমার স্বামী সৌদি কোম্পানির মালিকের কাছে বাংলাদেশের ফেরত আসার কথা বলে পাসপোর্ট চাইতে গেলে তিনি বলেন, আমি তোমাকে ৫ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছি। যদি ৫ লাখ টাকা দিতে পারো তাহলে আমরা তোমাকে পাসপোর্ট দিব। পরে আমার স্বামী আকুতি মিনতি জানালে তারা তাকে সাহায্য না করে একটি মামলা দেয়। এখন সৌদি আরবে একটি বাড়িতে কোনো খাবার ছাড়া তাকে আটকে রাখা হয়েছে। তারা ৫ লাখ টাকা দাবি করছে। আমি আমার স্বামীকে ফেরত চাই।
শিল্পী লিখিত বক্তব্যে বলেন, তার স্বামী ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন। একই এলাকার দালাল বিপ্লব হোসেন ওয়াজের খপ্পরে পড়েন তিনি। সৌদি আরবে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখান তিনি। তার আশ্বাসে ছোট দুই মেয়ে, স্ত্রী ও বাবা-মাকে রেখে প্রবাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ইব্রাহিম। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর মাসে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায় চুক্তি করে তাকে সৌদি আরবে পাঠান বিপ্লব। তবে দালাল বিপ্লব তাকে টুরিস্ট ভিসায় পাঠানোর কারণে তিনি সৌদি আরবে পড়েন বিপদে। পড়েন পুলিশের ঝামেলায়। বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন এখন তার দু:স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। সৌদি আরবে কোম্পানির মালিকপক্ষ কোনো কাজ ছাড়া ১৫ দিন তাকে আটক রাখে। ঠিকমতো খেতে দিতো না। পরে তারা তাকে আরেক কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করে। সেখানেও তাকে আটকে রাখা হয়। আমার স্বামী আমাকে বিষয়টি জানালে জীবননগর থানায় লিখিত অভিযোগ করি। পরে বিচারে বিপ্লব সকল দায় স্বীকার করে দুই মাসের মধ্য আমার স্বামীকে কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। আর জরিমানা স্বরুপ ৩৮ হাজার টাকা এবং তার কথা মতো কাজ না দিতে পারে আমার স্বামীকে দেশে ফিরিয়ে আনাসহ চার লাখ ৫০ হাজার টাকা ফেরত দিবে বলে স্ট্যাম্পে সই করে। তবে সে কাজ দেয়নি। আর আমাদের দশ হাজার টাকা এবং আমার স্বামীকে নয় হাজার টাকা দিয়েছে। এরপর বিপ্লব আমার স্বামীকে ১৮ ঘণ্টা করে কাজ করিয়ে নিয়ে সপ্তাহে ৫০ থেকে ১০০ রিয়েল দিচ্ছিল। যা বাংলাদেশি টাকায় দুই থেকে তিন হাজার টাকা। পরে অনেকবার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিপ্লব হোসেন ওয়াজ বলেন, এটা মিথ্যা। ৪ জন কোম্পানির বসের সাথে মারামারি করেছিল। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে সৌদিতে মামলা হয়। তাদের ১৫ হাজার রিয়াল করে জরিমানা করা হয়েছে। এই নিয়ে তারা বিভিন্ন জায়গায় ঝামেলা করে বেড়াচ্ছে। তারা সৌদিতে মারামারি করলে তো আর দায়ভার আমি নিতে পারবো না। তিনি আরও বলেন, তারা সেখানে ফুড ডেলিভারির কাজ করে। ওটা টার্গেটের কাজ। ৫০০ ডেলিভারি দিলে ২ হাজার ৫০০ রিয়াল পাবে। এখন তারা যদি টার্গেট পূরণ করতে না পারে তাহলে তো টাকা কম পাবে এটাই স্বাভাবিক। তার সাথে আরও যারা বিদেশে গিয়েছে তাঁরা কিন্তু ঠিকই সেখানে কাজ করছে।
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম জাবীদ হাসান বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছিলাম। পরে তাদের থানায় ডেকে একটি সমাধান করা হয়। এখন আবার ঝামেলা শুরু হয়েছে শুনছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। বিপ্লব চিকিৎসার জন্য এলাকার বাইরে আছে, সে ফিরলেই বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে। শিল্পী’র সাথে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ইব্রাহিমের বাবা খাজা মইনুদ্দিন, মা সবেদা বেগম, ৮ ও ৯ বছর বয়সী ছোট্ট দুই শিশু কন্যা।