নিজস্ব প্রতিবেদক:
গত কয়েক দিনের তাপপ্রবাহে পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা। প্রচণ্ড গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে জনজীবনে। এর ওপর ১০-১৫ ফুট নিচে নেমেছে পানির স্তর। ফলে নলকূপ ও পাম্পে উঠছে না পানি। এ যেন মারার ওপর খাঁড়ার ঘা।
জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলায় নিচের দিকে নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। বেশিরভাগ জায়গায় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে পাম্প নামানো হচ্ছে মাটির ১০-১২ফুট গভীরে। তবে বিপাকে পড়েছেন টিউবওয়েল ব্যবহারকারীরা।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় সরকারি সাড়ে ৫ হাজার ও ব্যক্তি মালিকানায় মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকের বেশি নলকূপে পানি উঠছে না।
দামুড়হুদা উপজেলা সদর, সদাবরী, মদনা, দর্শনা, নতিপোতা, হাউলি, কুড়ুলগাছি, কার্পাসডাঙ্গা, কুতুবপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রায় তিন হাজারেরও বেশি নলকূপে একেবারেই পানি উঠছে না। বাকি নলকূপগুলোতে সামান্য পানি উঠছে। অনেকের নলকূপের পানি কম ওঠায় স্থান পরিবর্তন করে নলকূপ বসানো হলেও একই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থায় অনেকে রান্না, কাপড় ধোয়ার কাজে ব্যবহার করছে এক সময়কার অব্যবহৃত কূপ বা ইন্দারার পানি।
পানির চাহিদা মিটাতে গভীর নলকূপ বসানোর দিকে ঝুঁকছেন অনেকে। পানির চাহিদা পূরণ করতে ১০-১২ ফুট গর্ত খুঁড়ে মাটির রিং বসিয়ে পাম্প নিচে নামানোর পর পানি তুলতে হচ্ছে।
দামুড়হুদা উপজেলা সদরের দশমী পাড়ার আবু হাসনাত বলেন, আগে ১৫-২০ মিনিট মোটর চালালেই বাড়ির ছাদেও এক হাজার লিটার পানির ট্যাংক ভরে যেত। প্রায় মাস দেড়েক আগে থেকে দুই থেকে তিন ঘণ্টা মোটর চালালেও প্রয়োজনীয় পানি মিলছে না। এভাবে চলতে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে বৈদ্যুতিক মোটর। ইতোমধ্যে একটি মটর পুড়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, একই ভাবে টিউবওয়েলের পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। সামান্য পানি উঠলেও কল চাপতে অনেক শক্তি ব্যয় করতে হচ্ছে। দুদিন আগে ১২ ফুট গর্ত খুঁড়ে মোটর নামানোর পর পানির সমস্যার সমাধান হয়েছে।
দামুড়হুদার উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল করিম বিশ্বাস বলেন, আমার ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামেই টিউবওয়েলে পানি ওঠা বন্ধ গেছে। সামান্য কিছু টিউবওয়েলে পানি উঠলেও পরিমাণে খুবই কম। বাধ্য হয়ে প্রায় বাড়িতে বৈদ্যুতিক মোটর ৮-১০ফিট নিচে নামিয়ে পানি তুলছেন অনেকে। যাদের মোটরের ব্যবস্থা নেই বা সামর্থ নেই তারা অন্যের বাড়ি থেকে পানি এনে চাহিদা মিটাচ্ছে। এভাবে তাপপ্রবাহ চলতে থাকলে আর কদিন সেই পানিও মিলবে না বলে আশঙ্কা করছেন চেয়ারম্যান।
দামুড়হুদা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর ছয় থেকে আট ফুট নিচে নামছে পানির স্তর। বছর দশেক আগেও এই এলাকায় ৪০-৬০ ফুটের মধ্যে ভূগর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর ছিল। এখন বর্ষা মৌসুমে ১০০-১৪০ ফুটের মধ্যে পানির স্তর পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, অপরিকল্পিতভাবে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলা এবং যত্রতত্র পুকুর-খাল-বিল ভরাট করে ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সামনে বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতির আরও ভয়াবহ হতে যাচ্ছে।