শেখ লিটন:
পবিত্র ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষের টানা ৬ দিন ছুটির কাটিয়ে কর্মস্থলে ছুটতে শুরু করেছে সাধারন মানুষ। উৎসব আয়োজন শেষে কর্মের তাগিদে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে ফিরে যাচ্ছেন তারা। অনেকেই গতকাল মঙ্গলবার অফিস ধরেছেন। তবে বরাবরের মতো এবারও বাসের ভাড়া নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন যাতায়তাকারীরা। অপরদিকে, ট্রেনের যাত্রা এবার কিছুটা স্বস্তিদায়ক হলেও টিকেট পাওয়া নিয়েও রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ঈদের রেশ কাটিয়ে কর্মস্থলে ফিরে যাওয়া মানুষেরা ভোগান্তি পোহাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
জানা গেছে, পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখ মিলিয়ে মোট ছুটি পাওয়া যায় ৫ দিনের। মাঝে আরও একদিনের ছুটির মাত্রা বাড়িয়ে তা দাঁড়ায় ৬ দিনে। টানা এ ছুটি শেষ হয়েছে গত রবিবার। তাই দীর্ঘ ছুটি কাটিয়ে এবার নিজ নিজ কর্মস্থলে ফেরার যুদ্ধ শুরু হয়েছে। তাই সকল শ্রেণির পেশার মানুষ তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে কেউ বাসে বা ট্রেনে করে চুয়াডাঙ্গা থেকে বিভিন্ন স্থানে ফিরে যাচ্ছেন। আবার কেউ অন্যান্য জেলা থেকে আসছেন চুয়াডাঙ্গার কর্মস্থলে। গতকাল মঙ্গলবার থেকে খুলেছে সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে সকল শ্রেণী পেশার কর্মজীবীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ফেরার পথে। গতবারের তুলনায় এবারও সব ধরনের যাত্রী সাধারণদের দূরপাল্লার বাসে বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে। যেখানে ঈদের আগে চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকা গাবতলী পর্যন্ত দূরপাল্লার সব বাসে ভাড়া নিত নন এসিতে ৬৫০ টাকা। সেখানে এবার ঈদ উপলক্ষে ১০০ টাকা বাড়তি হয়ে ভাড়া আদায় করছে ৭৫০ টাকা। আর এসি বাসে ২০০ টাকা বাড়তি হয়ে ১১০০ টাকা ভাড়া আদায় করছে বাস মালিকরা। ফলে বাড়তি ভাড়ায় যাত্রী সাধারণদের অনেকটা অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে। একদিকে ঈদের বাড়তি খরচের পরিমাণ অপরদিকে বাসের বাড়তি ভাড়া সব মিলিয়ে যাত্রী সাধারণরা পড়েছে বিপাকে। এদিকে ভাড়া নেওয়ার বিষয় কথা বলতে গেলে দূরপাল্লার বাস কাউন্টারের দায়িত্বরতদের রয়েছে বিভিন্ন যুক্তি।
ঈদের আগে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন বিআরটিএ চুয়াডাঙ্গা জেলা কার্যালয়ের উদ্যোগে দূরপাল্লার বাস কাউন্টার গুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে বাড়তি ভাড়া না নেয়ার জন্য সর্তক করেন বিআরটিএ কর্মকর্তারা। তারপরও নির্দেশনা অমান্য করে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে বাস মালিকরা। তবে চুয়াডাঙ্গার সকল লোকাল বাস কাউন্টারে আগের নিয়মেই ভাড়া নেয়া হচ্ছে বলে খোজ নিয়ে জানা গেছে।
চুয়াডাঙ্গা থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার একটি বাস কাউন্টারের মাস্টার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মালিক পক্ষের নির্দেশে ঈদ উপলক্ষে এই বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। তবে আগামি একদিন পর থেকে আগের ভাড়ায় আবার টিকেট বিক্রি হবে।
বাসে থাকা এক যাত্রী ইমন হোসেন বলেন, ঈদের আগে আসলাম ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গার ভাড়া নিচ্ছিল ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা। এখন ঢাকায় যাব ভাড়া নিল ৭৫০ টাকা। এভাবে যদি ভাড়া বেশি নেই তাহলে তো সাধারণ চাকরিজীবীরা বিপাকে পড়বে। একদিকে ঈদের খরচ বাড়িতে এসে অনেক পড়ে গেছে। তারপর আবার বাড়তি ভাড়া। সব মিলিয়ে বাস যাত্রীদের খুব যন্ত্রণাদায়ক হয়ে যাচ্ছে। এসময়টা প্রশাসন থেকে নজর দারি করা উচিত।
এদিকে গত রবিবার চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, বিকাল ৩ টায় চুয়াডাঙ্গা হয়ে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া বেনাপোল এক্সপ্রেসের একটি ট্রেন। এই ট্রেনের অপেক্ষায় শত শত যাত্রী। এই যাত্রীদের কেউ টিকেট পেয়েছেন, আবার কেউ টিকেট পাননি। যারা যারা টিকেট পেয়েছেন তারা সবই অনলাইন থেকে আগে ভাগেই টিকেট সংগ্রহ করেছেন। আর বাকিরা টিকেট স্টেশনে কাটতে পারেননি। তারপরও ওই সকল যাত্রী সাধারণদের কর্মস্থলে ফিরতে হবে। টিকেট না পেলেও যাত্রী ট্রেনের বগির মধ্যে দাঁড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন যাত্রী সাধারণরা।
এক ট্রেন যাত্রী সালামত বিশ্বাস বলেন, ট্রেনের যাত্রা স্বস্তিদায়ক, তাই ট্রেনেই যাতায়াতই আমার ভরসা। কিন্তু টিকেট পেতে হিমশিম অবস্থা। অনলাইন আগে যারা কেটেছে তারা টিকেট পেয়েছে। আর পরে টিকেট পাওয়া যায়নি। তাই উপায় হচ্ছে ট্রেনের ভিতরে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। কিন্তু স্ট্যান্ডিং টিকেটও নেই।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার এ কে এম ইউসুফ পলাশ বলেন, ঈদ ও পহেলা বৈশাখের ছুটি শেষ করে সকল কর্মজীবীরা তাদের কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য রওনা দিয়েছেন। এবার ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের বগি বাড়ানো হয়েছে। যাতে করে সকল যাত্রীরা নির্বিঘ্নে যেতে পারে। ট্রেনের প্রতিটা বগিগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা আছে। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না। চুয়াডাঙ্গা হয়ে ট্রেন আপ ডাউন ২০ টা ট্রেন যাতায়াত করছে। তবে ঈদের জন্য মৈত্রী ও মাল গাড়িগুলো বন্ধ আছে। অনলাইনে যারা টিকেট কাটেনি তাদের একটু কষ্ট হচ্ছে টিকেট পেতে। তারপরও চেষ্টা অব্যাহত আছে সকল যাত্রী সাধারণরা যেন তারা কর্মস্থলে যেতে পারে।