নিজস্ব প্রতিবেদক:
যথাযোগ্য মর্যাদায় চুয়াডাঙ্গায় ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালন করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে দিনব্যাপী আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, দোয়া, প্রার্থনা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, আলোর মিছিল ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচী পালন করা হয়। গণহত্যা দিবসের প্রতিটি কর্মসূচিতে এবারও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি রুখে দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে দিবসটি আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি ছিলো সকলের মুখে মুখে।
গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা শিল্পকলা একাডেমির পরিবেশনায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ডিসি সাহিত্য মঞ্চে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজমুল হামিদ রেজার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার আরএস ফয়জুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান মঞ্জু, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মালিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু হোসেন।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুন্সি আবু সাঈফের প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট কবীর হোসেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক শারমিন আক্তার, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা-তুজ-জোহরা, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাজ্জাদ হোসেন, চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু রাশেদ, চুয়াডাঙ্গা জেলা শিক্ষা অফিসার আতাউর রহামন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তবিবুর রহমান, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার শহিদুল আলম, সাদাত হোসেন, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ সেকেন্দার আলীসহ জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ।
আলোচনা সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন কালেক্টরেট জামে মসজিদের ঈমাম ক্বারী কবীর আহম্মেদ এবং গীতাপাঠ করেন সুনিল মল্লিক।
আলোচনা সভা শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমির পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে সারাদেশে পাক হানাদার বাহিনী মুক্তিকামী বাঙালির ওপর যে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল তা ইতিহাসের বর্বরোচিত একটি ঘটনা। সেদিন রাতে পাক হানাদার বাহিনী সেনা ব্যারাক থেকে বের হয়ে নির্বিচারে গুলি করে পাখির মতো মানুষ হত্যা করেছিল। ৯মাস মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়েও পাকবাহিনী গণহত্যা অব্যাহত রাখে। বক্তারা দিনটিকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণার জন্য জাতিসংঘের কাছে আহ্বান জানান। একইসাথে এ দাবিতে সোচ্ছার হতে সকল শ্রেণীপেশার মানুষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
আলোচনা সভায় বক্তারা আরও বলেন, ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর তৎকালীন অবিভক্ত পাকিস্থানের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সে নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও, পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী সেই নির্বাচনে বিজয়ী শেখ মুজিবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে। বঙ্গবন্ধুকে সরকার গঠনে আহ্বান জানানোর পরিবর্তে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। এর প্রতিবাদে সমগ্র পূর্ব পাকিস্থানে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে অভিযানটি পরিচালনার মাধ্যমে তারা স্বাধীনতাকামী ছাত্রজনতার প্রতিরোধকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল। এর ব্যাপ্তি ছিল ঢাকাসহ সারাদেশ। পাকিস্থানিদের ঘৃণা-ধিক্কার জানানোর পাশাপাশি একাত্তরের গণহত্যা নিয়ে পরাজিত পাকিস্তানের নতুন ষড়যন্ত্রের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তারা বলেছেন, ‘একাত্তরের গণহত্যাসহ পৃথিবীর সব গণহত্যা যেন আমরা ভুলে না যাই। অব্যাহতভাবে এ গণহত্যার স্বীকৃতি হিসেবে ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণার সপক্ষে দাবি জোরদার করতে হবে। এখনও কিছু স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি রয়েছে যাদের প্রতিহত করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। বাঙালীর জাতির আত্মপরিচয় ও মর্যাদার ইতিহাস প্রতিষ্ঠার জন্য এবং মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে পাকিস্তানের মিথ্যাচারের জবাব দিতেই ২৫ মার্চের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রয়োজন। ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন প্রকৃতার্থে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মাহুতির প্রতি জাতির চিরন্তন শ্রদ্ধার স্মারক এবং পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীর নারকীয় হত্যাকান্ডের সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।