নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রথম ধাপে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষনা করেছে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৮ মে এ দুটি উপজেলায় ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দলীয় প্রতীকবিহীন এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, দলীয় বর্তমান চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ছাড়াও একাধিক নতুন প্রার্থী মাঠে রয়েছেন।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকলেও জামায়াতের নেতাকর্মীরা তলে তলে ঘর গোছাতে মাঠে তৎপর। জেলা জামায়াতের আমীর মো. রুহুল আমীন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলের প্রার্থী চূড়ান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দুটি উপজেলায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা অনেকটাই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীক হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে রোজার মাসে তারা বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসায় স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে নামাজ আদায় ও ইফতারে অংশগ্রহনের মাধ্যমে মুসল্লীদের কাছে ভোট প্রার্থনা ও অনুদান দিচ্ছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আগ্রহীরা ধর্মীয় লেবাসে প্রচারণা চালাচ্ছেন। স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় যা খবর হিসেবে প্রকাশ করা হচ্ছে।
এদিকে, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. শরীফুজ্জামান শরীফ দাবি করেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা ভোটের লড়াইয়ের জন্য সবসময়ই মানসিকভাবে প্রস্তুত। কিন্তু বিএনপির প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না থাকলে একরকম, আর ভোটে গেলে পুরো পরিবেশ পাল্টে যায়। তিনি বলেন, ‘আমাদের দলে অনেক যোগ্য প্রার্থী আছে। তবে, সবার উর্ধ্বে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত। দলের সম্মতি ছাড়া একজনও ভোটের মাঠে নামবে না।’
দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের সর্বশেষ নির্বাচনে দর্শনা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলি মুনছুর বাবু চেয়ারম্যান, দামুড়হুদা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ কর্মী সাহিদা খাতুন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলি আজগার টগরের সহোদর আলি মুনছুর বাবু এবারও প্রার্থী হচ্ছেন। শহিদুল ইসলাম জানান, ব্যাক্তিগত কারণে তিনি এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন না। সাহিদা খাতুনেরও তেমন আগ্রহ নেই। ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে প্রচারণা চালাচ্ছেন উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের।
আলি মুনছুর বাবু উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনসহ সরকারি-বেরসকারি দপ্তর আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে তার দায়িত্বকালীন উন্নয়নচিত্র তুলে ধরেন এবং পরবর্তী নির্বাচনে নিজের প্রার্থীতার ঘোষণা দিয়ে আসছেন। দুই মাস আগে দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহিদুল ইসলাম চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীসহ ভোটারদের কাছে ছুঁটছেন। সহিদুল ইসলাম তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান জাকারিয়া আলম প্রার্থী হতে পারেন বলে তার ঘনিষ্ঠজনরা প্রচার চালাচ্ছেন। জাকারিয়া নিজেকে শক্ত প্রার্থী হিসেবে দাবি করেন।
এই উপজেলায় তিনটি পদেই প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জামায়াত। চেয়ারম্যান পদে সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আজিজুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে দামুড়হুদা থানা আমীর নায়েব আলী এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জেলা জামায়াতের সুরা সদস্য (মহিলা) রেহেনা খাতুনকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করে জেলা কমিটি। ২০১৪ সালের ১৫ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আজিজুর রহমান জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক তৎকালীন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজাদুল ইসলাম আজাদকে হারিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
অপরদিকে, জীবননগর উপজেলায় বর্তমানে উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান চেয়ারম্যান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুস সালাম ঈশা ভাইস চেয়ারম্যান এবং উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আয়েশা সুলতানা লাকী মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে আছেন। তিনজনই নিজ নিজ পদে এবারও প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্যে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু মো. আব্দুল লতিফ অমল জানান, তিনি নিজে এবং বর্তমান সভাপতি নজরুল ইসলাম কেউই প্রার্থী হচ্ছেন না। আবার, সাংগঠনিকভাবেও কারো পক্ষে অবস্থান নিতে পারছেন না।
জীবননগরে জামায়াতের প্রার্থীরা হলেন, চেয়ারম্যান পদে থানা আমীর সাজেদুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে থানা সেক্রেটারী আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জীবননগর থানা কর্মপরিষদ সদস্য (মহিলা) মুক্তা খাতুন।
এই উপজেলায় নির্দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাইটিভির বিশেষ প্রতিনিধি এস.কে লিটন ইতিমধ্যে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছেন। এস কে লিটন জানান, করোনাকালীন সময় থেকে উপজেলার মানুষের সুখে-দুখে পাশে থেকে সেবা করে আসছি। তিনি বলেন, মানুষের আগ্রহের কারণে আমি এবার প্রার্থী হতে চাই।
উল্লেখ্য, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তা/সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৫ এপ্রিল, রিটার্নিং কর্মকর্তা কর্তৃক মনোনয়নপত্র বাছাই ১৭ এপ্রিল, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপীল ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল, আপীল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২২ এপ্রিল, প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ৮ মে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।