শেখ লিটন:
চুয়াডাঙ্গার বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দামে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। পবিত্র রমজান মাস শুরুর আগে থেকেই নানা অজুহাতে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। কয়েকদিনের ব্যবধানে দামের উর্ধ্বগতি রোজার বিশেষ পণ্য খেজুর, ছোলা, বেগুন, শসা, বেসন, ডাল, চিনি ও মাছ-মাংসে। তাই রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজার মনিটরিং করেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা ও পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান পিপিএম-সেবা। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা শহরের নীচের বাজারে মনিটরিংয়ে যান তারা। এসময় পণ্যের দাম অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসে। আবার সব দোকানে ঝুলতে দেখা যায় মূল্যতালিকা। যা শুধুমাত্র অভিযানের খবরেই…।
অভিযানের আগে নীচের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সারাদেশের মতো চুয়াডাঙ্গাতেও বেড়েছে চিনির দাম কেজিতে ২ টাকা। গতকাল সোমবার বিক্রি করা হয়েছে ১৪০ টাকায়। এছাড়া গরুর মাংস কেজিতে আবারও ২০ টাকা বাড়িয়েছে মাংস ব্যাবসায়ীরা। এক কেজি গরুর মাংসের জন্য ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছিল ৭০০ টাকা। আর খাসির মাংস ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়েছিল। কিন্তু গতকাল সোমবার বাজার মনিটরিংয়ের নির্ধারিত ৬৮০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংষ বিক্রি হয়েছে। মাছের বাজারেও প্রায় সব ধরনের মাছ কেজিতে ২০ টাকা বাড়তি দেখা গেছে। মুরগির বাজারে লেয়ার, প্যারেন্টস, সোনালি ও ব্রয়লার মুরগির মাংসে কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে গত তিনদিনের ব্যবধানে। দাম বেড়েছে ছোলাসহ অন্যান্য সব ধরনের ডালের। কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা। আর খেজুরের দাম যেন নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাজারের খেজুর সরবরাহের পর থেকেই সব ধরনের খেজুর কেজিতে ১০০ টাকা বাড়তি।
এদিকে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে বাজার মনিটরিংয়ে রোজার বিশেষ খাদ্য পণ্য খেজুর, তেল, ডাল, মাছ-মাংসসহ সব ধরনের সবজি ও অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম যাচাই করা হয়। ক্রেতা সাধারনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়। তবে মনিটরিংয়ে প্রথমদিনে কাউকে জরিমানার আওতায় আনা হয়নি।
মনিটরিং শেষে পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান বলেন, মূলত ব্যবসায়ীদের সচেতন করতেই বাজার মনিটরিং করা হয়। বাজারে স্বাভাবিক চলাচল এবং উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে যারা অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রি করবে এবং শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা সাংবাদিকদের বলেন, মনিটরিংয়ে ব্যবসায়ীদের সতর্ক এবং সাধারন মানুষকে সচেতন করা হয়েছে। মাংসের বাজারসহ কয়েকটি নিত্যপণ্যের দোকানে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে দরকষাকষি চলছে। সেসব দোকানের পণ্যের দাম যাচাই করা হয়েছে। বাজার যাতে কৃত্রিম কারণে অস্থিতিশীল না হয় সেজন্য আমরা সজাগ আছি। জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি সরকারি সংস্থাগুলো সক্রিয় আছে। পুরো রমজান মাসজুড়ে বাজার মনিটরিং চলমান থাকবে। কেউ অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রির চেষ্টা করলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাজার মনিটরিংয়ে অংশ নেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কবির হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা-তুজ-জোহরা, সহকারি কমিশনার (ভূমি) সাজ্জাদ হোসেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদাত হোসেন, আব্দুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাষ চন্দ্র সাহা, জেলা মার্কেটিং অফিসার সহিদুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব-কমার্সের সহ সভাপতি মঞ্জুরুল আলম মালিক লার্জ, জেলা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইবরুল হাসান জোর্য়াদ্দার ইবু, প্রচার সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর মাফিজুর রহমান মাফি, চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ সেকেন্দার আলি, পুলিশ পরিদর্শক হোসেন আল-মাহবুব, ওয়ার্ড কাউন্সিলর রিন্টু মহলদার ও কামরুজ্জামান চাঁদ প্রমুখ।
বাজার মনিটরিং শেষে শহরের শহীদ হাসান চত্বরের ফলের দোকান পরিদর্শন করেন তারা। এসময় সড়কে যাতে যানজট সৃষ্টি না হয় সেজন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়।