জীবননগর অফিস:
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার মাধবপুর-পুরন্দপুর আঞ্চলিক সড়কে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তিনজনকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য। গত শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার মাধবপুর-পুরন্দপুর সড়কের বকুলতলা নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। পরে এলাকাবাসী তাদের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। আহত মোস্তাফিজুর রহমান বিজিবি সদস্য। তিনি ঢাকার পিলখানায় সদর দপ্তরে কর্মরত। এছাড়াও মোস্তাফিজুরের পিতা নজরুল ইসলাম ও চাচা নায়েব আলী আহত হন। হাসপাতালে থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তারা বাসায় ফিরেছেন।
এ ঘটনা গতকাল রোববার দুপুরে জীবননগর থানায় মানিক মিয়া (৩৫), ঠান্ডু মিয়া (৩৭) ও মাজেদুল ইসলাম (৩২) নামে তিনজনের নাম উল্লেখ করে আরও ৮/১০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী নজরুল ইসলাম।
বিজিবি সদস্য মোস্তাফিজুর জানান, ঢাকা থেকে তিনি তার স্ত্রী জান্নাতুল ইয়াসমিনসহ ছয় মাস বয়সী শিশু বাচ্চাকে নিয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাসাদাহ বাজারে পৌঁছান। এসময় রাত গভীর হওয়াতে বাসায় ফোন দিলে আমার পিতা নজরুল ইসলাম ও চাচা নায়েব আলী পাখি ভ্যানে করে আমাদের নিতে হাসাদাহ বাজারে আসেন। বাজার থেকে পাখি ভ্যান যোগে মাধবপুর-পুরন্দপুর সড়ক দিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলাম। বকুলতলায় ওঁৎ পেতে থাকা ৮-১০ জন ডাকাত সড়কে লাঠি সোটা নিয়ে আমাদের ভ্যানটি গতিরোধ করে দেশীয় অস্ত্রের মুখে আমাদের জিম্মি করে আমার সঙ্গে থাকা ব্যাগ যার মধ্যে ২ লক্ষ টাকা আমার স্ত্রী প্রায় দুই ভরির ওজনের স্বর্ণালংকার (চুড়ি, চেইন) ছিনিয়ে নেয় ডাকাতেরা। এ সময় আমরা তাদের বাধা দিলে লাঠি দিয়ে আমাদের বেধড়ক পেটান। এতে আমার সহ আমার পিতা ও চাচার পিঠ ও শরীরে পিছনের অংশে মারাত্মক জখম হয়েছে। এছাড়াও আমার শিশু বাচ্চা ও স্ত্রীকে টানাহেঁচড়া করেন। তিনি আরও জানান, পরে আমাদের চিৎকার চেচামেচিতে এলাকাবাসী ছুটে আসলে তারা এক জোড়া জুতা ও টর্চ লাইট ফেলে পালিয়ে যান। আমরা এসময় ডাকতদলের তিনজন সদস্যকে চিনতে পারি। পরে ৯৯৯ নাম্বারে ফোন দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
ভ্যানচালক নায়েব আলী জানান, রাতে ঢাকা থেকে আমার ভাইপো বৌমা হাসাদাহ বাজারে আসেন। রাত হওয়ায় আমি ও আমার ভাই ভ্যান নিয়ে তাদের আনতে যায়। পথিমধ্যে বকুল তলায় কয়েকজন আমাদের ভ্যান গতিরোধ করে আমাদের গালাগালি করতে থাকে। আমরা বাধা দিলে তারা আমাদের মারধর করতে থাকে এবং ভাইপোর সাথে থাকা ২লক্ষ টাকা ও বৌমার চুড়ি চেইন তারা ছিনিয়ে নেন। তিনি আরও বলেন, এসময় আমরা তাদের ধস্তাধস্তি করতে থাকি এবং একজনকে ঘায়েল করি পরে এলাকাবাসী ছুটে আসলে তারা সকলেই পালিয়ে যায়। এসময় আমরা তিনজনকে চিনতে পারলেও বাকীদের চিনতে পারিনি।
স্থানীয়রা জানান, শুধু গতরাতেই না মাঝে মাঝে এই সড়কে এমন ঘটনা ঘটে। এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে ক্লিনিক থেকে ফেরার সময় কাজল হোসেনের ইজিবাইক থামিয়ে তাদের অস্ত্রের দেশীয় মুখে জিম্মি করে কাজল ও তার চাচীকে হাত মুখ বেধে তার চাচীর একজোড়া স্বর্ণের একজোড়া কানের দুল, চেন, একটি মোবাইল ফোন, নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকাসহ একটি ইজিবাইক নিয়ে ডাকত সদস্যরা পালিয়ে যায়। এছাড়াও গত ২ অক্টোবর দুপুরে মাধবপুর বাজার থেকে আরিফের দোকানের সামনে একটি কালো রংয়ের পালসার মোটরসাইকেল নিয়ে কে বা কাহারা নিয়ে পালিয়ে যায়। একই জায়গায় এমন ঘটনা বার বার ঘটলেও পুলিশ এখনও পর্যন্ত কাউকে সনাক্ত বা ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে আটক করতে পারিনি।
জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাবীদ হাসান বলেন, ওই সড়কে এমন অপরাধমূলক ঘটনা ঘটেনি। গত রাতে উনারা বাসায় ফিরছিলেন এসময় রাস্তায় দু’জন ব্যক্তি তাদের মারধর করলে তার বাপ-চাচা ছুটে আসলে আসামিরা পালিয়ে যান। এছাড়াও যাদের নামে অভিযোগ করেছে তারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে।