আলমডাঙ্গা অফিস:
পুলিশের তাড়া খেয়ে আলমডাঙ্গার ভাংবাড়িয়ায় মাথাভাঙ্গা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ থাকা টোকনের (৪৫) মরদেহ ২৬ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে ডুবুরি দল মাথাভাঙ্গা নদীর নতিডাঙ্গা ঘাট এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে। এসময় নদীর দু তীরজুড়ে প্রচুর মানুষ ডুবুরি দলের উদ্ধার কার্যক্রম দেখতে থাকেন।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গার ভাংবাড়িয়া কারিগর পাড়ায় জুয়া খেলার সংবাদে হাটবোয়ালিয়া ক্যাম্প পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে। পুলিশ দেখে সেখানে থাকা কয়েকজন দৌড় দেয়। এসময় পুলিশ দু’জনকে ধরে ফেলে। অপর দু’জন মাথাভাঙ্গা নদীতে ঝাঁপ দেয়। কারিগর পাড়ার মৃত সুন্নত আলীর ছেলে নাজিম উদ্দিন নদী সাঁতরে ওপারে গিয়ে উঠলেও নতুনপাড়া গ্রামের মৃত ওদুসউদ্দিনে ছেলে টোকন নদী থেকে আর ওঠেনি। পরে তার স্বজররা নদী পাড়ে এসে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মিরা নিখোঁজ টোকনকে উদ্ধারের চেস্টা চালিয়ে ব্যর্থ হলে তলব করা হয় ডুবুরি দলকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা ফায়ার স্টেশনের উপ-সহকারি পরিচালক রফিকুজজামানের নেতৃত্বে খুলনা থেকে আগত ডুবুরি দল নদীতে নেমে লাশ উদ্ধারের জন্য প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। একপর্যায়ে বেলা ১টার দিকে অনুপনগর নতিডাঙ্গা ঘাট এলাকা থেকে টোকনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। লাশ গ্রামে নিয়ে আসলে স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে।
উল্লেখ্য, আলমডাঙ্গার ভাংবাড়িয়া কারিগর পাড়ায় জুয়া খেলা হচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে হাটবোয়ালিয়া ক্যাম্প পুলিশের আইসি জাহিদুল ইসলাম দুজন পুলিশ নিয়ে অভিযান চালান। পুলিশের উপস্থিতি পের পেয়ে সেখানে থাকা কয়েকজন দৌড় দেয়। এ সময় ভাংবাড়িয়া ফেরিঘাট এলাকার আব্দুর রহমানের ছেলে আকছেদ ও ইয়াদুলের ছেলে কবিরুলকে আটক করে পুলিশ। কিন্তু দু’জন পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মাথাভাঙ্গা নদীতে ঝাপ দেন। পুলিশের তাড়া খেয়ে নদীতে ঝাপ দেয়া ভাংবাড়িয়া নতুন পাড়ার সুন্নত আলীর ছেলে নাজিম সাঁতরে নদীর ওপারে গিয়ে ওঠেন। কিন্ত মৃত ওদুছদ্দীনের ছেলে টোকন নদী থেকে আর ওঠেননি। সংবাদ শোনার পর চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় উপস্থিত হয় থানা পুলিশ ও আলমডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মিরা নিখোঁজ টোকনকে নদীতে অনেক খুঁজেও কোন সন্ধান করতে পারেনি। খোঁজাখুঁজিতে অংশ নেন টোকনের স্বজনরাও। এরপর গতকাল ভোর থেকে খুলনার ডুবুরি দল মাথাভাঙ্গা নদীর দীর্ঘ এলাকাজুড়ে টোকনকে খুঁজে পেতে তল্লাশি চালাতে থাকেন। নিখোঁজের ২৬ ঘণ্টা পর দুপুরে মাথাভাঙ্গার নতিডাঙ্গা এলাকা থেকে টোকনের লাশ উদ্ধার করে ডুবুরি দল। এসময় মাথাভাঙ্গার দু তীর জুড়ে মানুষের ভীড় পড়ে যায়।
এদিকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে অকালমৃত্যুর শিকার টোকনের বড় ভাই আকালী অভিযোগ করে বলেন, আমার সাঁতার না জানা ভাই পুলিশের তাড়া খেয়ে নদীর পানিতে ঝাঁপ দিতে বাধ্য হয়েছে। আমার ভাই তাস খেলছিলো, জুয়া খেলেনি। তিনি স্থানীয় মেম্বর সুজনের বিরুদ্ধে পুলিশ ডেকে এনে তাদের ধরিয়ে দেয়ার অভিযোগ করেন।
এদিকে, নদী তীরে সমবেত অনেকে প্রকাশ্যে অভিযোগ করেন, পুলিশের হাতে আটক দু’জন করিরুল ও আকসেদকে পুলিশ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়। স্থানীয় মেম্বর সুজনের মধ্যস্থতায় ২৮ শ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার বিষয়ে আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি তদন্ত) আব্দুল আলিম জানান, ভাংবাড়িয়া জুয়া খেলা হচ্ছে এ সংবাদ পেয়ে হাটবোয়ালিয়া ক্যাম্প পুলিশ ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে দু’জনকে আটক করে। আরও দু’জন মাথাভাঙ্গা নদীতে ঝাপ দেয়। একজন নদী থেকে উঠলেও টোকন নামের একজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। খুলনা থেকে ডুবুরি দল এসে দুপুরের দিকে টোকনের লাশ নদী থেকে উদ্ধার করে।