নিজস্ব প্রতিবেদক:
আসন্ন এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা সকাল ১০টার পরিবর্তে সকাল ১১টায় শুরু হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা সংশোধিত ও পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে অনুষ্ঠিত হওয়ায় পরীক্ষার সময় ৩ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ২ ঘণ্টা করা হয়েছে। এর মধ্যে এমসিকিউ ২০ মিনিট এবং সিকিউ ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। ফলে পরীক্ষা শেষ হবে দুপুর ১টায়। সোমবার (৫ জুলাই) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আসন্ন এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা ২০২২ সুষ্ঠু, নকলমুক্ত ও ইতিবাচক পরিবেশে সম্পন্নের লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশিত হবে। সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর তত্ত্বীয় পরীক্ষা ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা ১০ অক্টোবর শুরু হয়ে ১৫ অক্টোবর শেষ হবে। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে তত্ত্বীয় পরীক্ষা ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা ১০ অক্টোবর শুরু হয়ে ১৫ অক্টোবর শেষ হবে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে তত্ত্বীয় পরীক্ষা ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা ১১ অক্টোবর শুরু হয়ে ১৮ অক্টোবর শেষ হবে।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট পূর্বে পরীক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে। অনিবার্য কারণে কোনো পরীক্ষার্থীকে এর পরে প্রবেশ করতে দিলে তাদের নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময়, বিলম্ব হওয়ার কারণ ইত্যাদি একটি রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করে ওইদিনই সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডে প্রতিবেদন দিতে হবে। ট্রেজারি থেকে নির্দিষ্ট তারিখের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সকল সেট কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে। ট্রেজারি থেকে প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার জন্য নির্ধারিত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ডা. দীপু মনি বলেন, পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিটি পূর্বে এসএমএসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রশ্নপত্রের সেট কোড জানিয়ে দেওয়া হবে। কেন্দ্র সচিব ব্যতীত অন্য কেউ মোবাইল ফোন/ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। শুধু কেন্দ্র সচিব মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন (তবে ছবি তোলা যায় না এমন ফোন)। পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ব্যতীত অন্য কেউই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী ক্রাইব (শ্রুতি লেখক) সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। এ ধরনের পরীক্ষার্থীদের এবং শ্রবণ প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ১৫ মিনিট সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী (অটিস্টিক, ডাউন সিনড্রোম ও সেরিয়াল পালসি) পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় বৃদ্ধিসহ শিক্ষক/অভিভাবক/সাহায্যকারীর বিশেষ সহায়তায় পরীক্ষা প্রদানের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আসন্ন এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা-২০২২ সুষ্ঠু, সুন্দর ও নকলমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত সকল কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। শিক্ষা বোর্ডগুলোর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো অনলাইনে সার্বক্ষণিকভাবে তথ্যাদি আদান-প্রদান করবে।
উল্লেখ্য, মহামারির কারণে পিছিয়ে যাওয়া এসএসসি ও সমমানের লিখিত পরীক্ষা এবার ১৯ জুন শুরু করে ৬ জুলাই শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু জুনের মাঝামাঝি সময়ে প্রবল বর্ষণ আর উজানের ঢলে সিলেট অঞ্চল এবং উত্তরের কয়েকটি জেলায় ব্যাপক বন্যা দেখা দিলে সরকার ১৭ জুন পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেয়। এবার এসএসসি ও দাখিল (সমমান) পরীক্ষায় ২০ লাখ ২১ হাজার ৮৬৮ জন শিক্ষার্থীর অংশ নেওয়ার কথা। এবছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় বসবে সারাদেশের ২৯ হাজার ৫৯১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২০ লাখ ২১ হাজার ৮৬৮ জন শিক্ষার্থী। গত বছর তুলনায় এ বছর ৫৫৬টি বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসবে। তাদের মধ্যে ছাত্র ১০ লাখ ৯ হাজার ৫১১ জন আর ছাত্রী ১০ লাখ ১২ হাজার ৩৫৭ জন।
এর মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড থেকে ১৭ হাজার ৬৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭১১ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দেবে। দাখিলে অংশগ্রহণ করবে ৯ হাজার ৯৩টি প্রতিষ্ঠানের দুই লাখ ৬৮ হাজার ৪৯৫ জন শিক্ষার্থী। এছাড়া এসএসসি ভোকেশনালে পরীক্ষায় বসবে ৮২৮টি প্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬২ জন শিক্ষার্থী। এ বছর মোট পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা তিন হাজার ৭৯০টি। যা গতবারের তুলনায় ১১১টি বেশি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে— এবছর দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে ঢাকা বোর্ড থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৯৯৮ জন শিক্ষার্থী, রাজশাহী বোর্ড থেকে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬০০ জন শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বোর্ড থেকে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৭১৪ জন শিক্ষার্থী, যশোর বোর্ড থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৭৭ জন শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বোর্ড থেকে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৭১০ জন শিক্ষার্থী, বরিশাল বোর্ড থেকে ৯৫ হাজার ৯৭৬ জন শিক্ষার্থী, সিলেট বোর্ড থেকে ১ লাখ ১৬ হাজার ৪২৭ জন শিক্ষার্থী, দিনাজপুর বোর্ড থেকে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৯৬১ জন শিক্ষার্থী আর ময়মনসিংহ বোর্ড থেকে ১ লাখ ১২ হাজার ৯৪৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।
এই ৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭১১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের পাঁচ লাখ আট হাজার ২৩৬ জন, মানবিক বিভাগের সাত লাখ ৯০ হাজার ৯১ জন আর ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ৩ লাখ ১ হাজার ৩৮৪ জন।
বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত বছরের তুলনায় এবছর বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষার্থী বেড়েছে ১ হাজার ৪০৫ জন। গত বছর এই বিভাগে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৬ হাজার ৮৩১ জন।
এছাড়াও বিদেশের আটটি কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় বসবে ৩৬৭ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে জেদ্দা থেকে ৭০ জন, রিয়াদ থেকে ৪৮ জন, ত্রিপলী থেকে চারজন, দোহা থেকে ৬৮ জন, আবুধাবি থেকে ৫৯ জন, দুবাই থেকে ৩১ জন, বাহরাইন থেকে ৫৩ জন ও ওমানের সাহাম থেকে ৩৪ জন।