মুতাছিন বিল্লাহ, জীবননগর:
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর বাসস্ট্যান্ডে যাত্রী ছাউনি না থাকায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। উপজেলা শহরের ওপর দিয়ে চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মহেশপুর-জিন্নাহ নগর, চ্যাংখালী চারটি রুট রয়েছে। এর মধ্যে তিনটা রুটে দূরপাল্লার ও অভ্যন্তরীণ রুটের হাজার হাজার যাত্রীদের প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে, প্রচন্ড রোদ-বৃষ্টি ও ঝড় ঝাঞ্জায় যাত্রী সাধারণকে দোকানপাট, মার্কেট ও মসজিদের সামনে আশ্রয় নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহনের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
গতকাল রোববার দুপুরে দেখা যায়, কড়া রোদের মধ্যে চারটি সড়কে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করছে যাত্রীরা। বাসের জন্য অপেক্ষা করছে। তবে দাঁড়ানোর জন্য কোনো জায়গা নেই। এসব যাত্রীদের বসা-বিশ্রামের জন্য নেই যাত্রীছাউনি। তাই রোদ-গরম উপেক্ষা করে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হয় বাসসহ অন্য যানবাহনের জন্য। জীবননগর বাসস্ট্যান্ড একটি ব্যস্ততম বাসস্ট্যান্ড। এই উপজেলার মানুষ জেলা, বিভাগীয় শহর ও রাজধানী শহর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন রুটের দূরপাল্লার পরিবহন ও অভ্যন্তরীণ যানবাহনে এ স্ট্যান্ড থেকে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার যাত্রী চলাচল করায় স্ট্যান্ডটি সব সময় জনসমাগম ও ব্যস্ত থাকে। বাস স্ট্যান্ডে যাত্রী ছাউনী না থাকায় এসব যাত্রী সাধারনকে রাস্তায় ও বিভিন্ন দোকানের সামনে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। নির্দিষ্ট গন্তব্যের বাসের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা ঠায় রাস্তায় দাড়িয়ে থাকতে হয়। চুয়াডাঙ্গা-যশোর থেকে বাস প্রতি ৩০ মিনিট পর ১টা বাস আসে আর ততক্ষন পর্যন্ত যাত্রীদের দাড়িয়ে থাকতে হয় রাস্তায়। সড়কের দু’পার্শ্বে দোকান-পাট গড়ে ওঠায় যত্রতত্র ভ্যান, সিএনজি, অটোরিকশা, ইজিবাইকের অনির্ধারিত স্ট্যান্ড তৈরীর কারনে বাস মিনিবাসের যাত্রী সাধারনের দাড়ানো কিংবা নির্দিষ্ট গন্তব্যের গাড়ীর জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষার নিরাপদ স্থান নেই। যত্রতত্র দাড়িয়ে থেকে যাত্রী সাধারনের গাড়ীর জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এতে পরুষদের বেলায় তেমন একটা সমস্যা না হলেও মহিলা যাত্রীদের দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। বিশেষত: নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় যাত্রীদের দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। রাতের বেলায় এসব যাত্রীদের মারাত্মক বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। বাসস্ট্যান্ড এলাকার দোকানী রকিবুল জানান, যাত্রী ছাউনী না থাকায় বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের বিভিন্ন দোকানের সামনে দাড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। জনদুর্ভোগ লাঘবে একটি যাত্রী ছাউনী একান্ত দরকার।
দূরপাল্লার যাত্রী মামুন বলেন, আমরা ব্যবসায়ী কাজে ঢাকাতে যায়, তবে ফেরার সময় অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। বেশিরভাগ সময় আমরা রাতে ফিরে আছি তখন জীবননগর বাস স্টান্ড একবারেই জন শূন্য থাকে। বসার কোন ব্যবস্থা দূরে থাক, ঠিক মত লাইট থাকে না একেবারেই ঘুটঘুটে অন্ধকার।
ব্যবসায়ী উজ্জল বলেন, এ উপজেলায় বিভিন্ন দিক থেকে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও যাত্রীদের কল্যাণে আজও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তাই যাত্রীছাউনি ব্যবস্থা না থাকায় দূরপাল্লার যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
পথচারী আবুল কালাম বলেন, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি জীবননগর একটি স্থায়ী বাসস্ট্যান্ড ও যাত্রী ছাউনী গড়ে তোলা হোক। সে আশায় বুক বেধে আছেন এখানকার সাধারণ মানুষ, কবে তাদের দাবি পূরণ হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জীবননগর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম বলেন, জীবননগর বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীছাউনি নির্মাণের জন্য চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খানকে বলেছিলাম। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আমি জীবননগরে যাত্রীছাউনি নির্মাণের জন্য অর্থের ব্যবস্থা করে রেখেছি। আমার পৌরসভার থেকে সর্বোচ্চ সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ চুয়াডাঙ্গার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘জীবননগর বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীছাউনি নির্মাণের বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক বলেছেন। তবে আমরা এ বিষয়ে জীবননগর থেকে এখনো কোনো লিখিত আবেদন পায়নি। আবেদন পেলে এবং জীবননগর থেকে যাত্রীছাউনি অর্থ ব্যবস্থা করলে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’