নিজস্ব প্রতিবেদক:
বর্তমান সরকারকে হটাতে নিজের দলের চলা আন্দোলনকে জীবন-মরণের লড়াই হিসেবে দেখছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেই সঙ্গে সুনামির মতো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলিস্তানের নাট্যমঞ্চে আয়োজিত এক সভায় সভাপতির বক্তব্যকালে এই হুঁশিয়ারি দেন বিএনপি মহাসচিব। দলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ওই সভার আয়োজন করে বিএনপি। এবার আমাদের শেষ লড়াই। জীবন-মরণ লড়াই করতে হবে। হয় জীবন, না হয় মরণ। আসুন আমরা সেই লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে একটি দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলি। উত্তাল সমুদ্রের সুনামির মতো এই সরকারকে বিদায় করব।
সভায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের যা কিছু ভালো অর্জন সবকিছু বিএনপির হাত ধরে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসেছিলেন, সংবাদপত্রে স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, মানুষের অধিকারকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। আর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসেছিলেন, উন্মুক্ত বাজার অর্থনীতির ব্যবস্থা করেছিলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছিলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপিকে বারবার ধ্বংস করার জন্য চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু বারবার ধ্বংসস্তূপ থেকে ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠেছে। বারবার তারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে গিয়েছে। বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, গ্রামে-গঞ্জে আবার বিএনপি জেগে উঠেছে। আমরা যে গণতন্ত্রের সংগ্রাম শুরু করেছি, সেই গণতন্ত্রের সংগ্রামে আমাদের জয়ী হতে হবে। যে নেত্রী সংগ্রাম করে দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন, তাকে আজ মিথ্যে মামলা দিয়ে সাজা দিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের নেতাদের হত্যা করবেন, মিথ্যে মামলা দেবেন; করায়-গুণ্ডায় হিসাব নেওয়া হবে। ভোলায় নূরে আলম এবং আব্দুর রহিমের হত্যার মামলা করেছি। নারায়ণগঞ্জে শাওন হত্যার মামলা করব। এছাড়া সারা বাংলাদেশে আপনারা গুলি চালিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের আহত করেছেন তার প্রত্যেকটি হিসাব আমরা নেব। ভয় পেয়েছে, ভয় পেয়েছে, ভীষণ ভয় পেয়েছে এখন। এ জন্য ২০১৩-১৪-১৫ সালের মতো আবার একই কাদায় মিথ্যে মামলা দেওয়া শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি মহাসচিব বলেন, যেমন ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে, চৌধুরী আলমকে গুম করেছে, আমাদের ছাত্র-নেতাদেরকে গুম করেছে। সেইভাবে গুম করে তারা আবার ক্ষমতায় টিকে থাকবে, সেই চিন্তা করবেন না। এবার মানুষ জেগে উঠেছে, বাংলাদেশের তরুণরা জেগে উঠেছে, বাংলাদেশের যুবকরা জেগে উঠেছে। আপনাদের চক্রান্ত তারা ভেঙেচুরে গুঁড়িয়ে দেবে। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, শুধু স্লোগানের রাজনীতি নয়, বাংলাদেশে আজকে যে অবস্থা এর থেকে মুক্ত হতে হলে গণতন্ত্র মুক্ত করতে হবে, গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। আর গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হলে গণতন্ত্রের মাতা মাদার অফ ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরে এসে স্বাধীনভাবে রাজনীতির সুযোগ করে দিতে হবে। বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতায় থাকলে এসব সম্ভব নয়। তাই প্রথমে এই সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। এই সরকারকে হটাতে হবে। কোনো স্বৈরাচার সরকার কখনো আপসে সরে যায়নি, পৃথিবীতে এরকম কোনো ইতিহাস নেই।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন- এসব সমস্যার সমাধান হবে রাজপথে। আমাদের সেভাবে রাজপথে নামার জন্য আমরা এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শপথ করছি। সভায় মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে। আজকে আওয়ামী লীগ সেই লাইসেন্স নিয়ে মানুষ খুন করছে। এছাড়া ড. আবদুল মঈন খান বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বারবার প্রমাণ করেছে তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। সভায় নজরুল ইসলাম খান বলেন, সকল কিছুর শুরু এবং সমৃদ্ধি শহীদ জিয়া এবং খালেদা জিয়ার হাতে। আর সে কারণেই জিয়াউর রহমানকে খুন করা হয়েছে। আর বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যে মামলায় বন্দি করে রাখা হয়েছে। তারেক রহমানকে দেশে আসতে বাধার সৃষ্টি করা হয়েছে। মাত্র কয়েকদিন আগে আমাদের সাথী নূরে আলম এবং আব্দুর রহিমকে খুন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গতকালও (বৃহস্পতিবার) আমাদের আরেকজন সাথী শাওনকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও মানুষকে থামিয়ে রাখা যায়নি। এই দলের মধ্যে হাজারও আব্দুর রহিম, হাজারও নূর আলম, হাজারও শাওন রয়েছে। এত হত্যা, এত মামলা তবুও বিএনপিকে শেষ করা যায়নি। আর শেষ করা যাবেও না। কখনও যাবে না।নজরুল ইসলাম খান বলেন, আগামী দিনের লড়াই আরও কঠিন লড়াই। আমি বিশ্বাস করি আমার তরুণ বন্ধুরা সামনের কাতারে থেকে সেই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দেবেন। বিজয়ী হবেন এবং আপনারাই নেতা হবেন, ইনশাআল্লাহ।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এনির সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম প্রমুখ।