নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানা এলাকায় গয়েশপুর-সড়াবাড়িয়া সড়কের শালিকচারা মাঠে রাস্তায় গাছ ফেলে আলোচিত গণডাকাতির মামলার ২ মাস পার হলেও প্রকৃত ডাকাত সদস্যদের ধরতে পারেনি পুলিশ। এখনো উদ্ধার করতে পারেনি লুট হওয়া ৩৪ লাখ ৩১ হাজার টাকা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ এএইচএম লুৎফুল কবীর এই মামলার ১৩জন আসামীকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে। আসামীদের নির্যাতন করা হয়েছে উল্লেখ করে দর্শনা থানার ওসি এএইচএম লুৎফুল কবীরের বিরুদ্ধে আদালতে পিটিশন জমা পড়েছে বলে জানা গেছে। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর এর শুনানীর দিন ধার্য করেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা ও দায়রা জজ মোঃ জিয়া হায়দার।
পিটিশন সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০জুন ঝিনাইদহ শহরের মুরারি মোহন সাহার ছেলে ঠিকদার ব্যবসায়ী রনি সাহা, তার ব্যবসায়িক পার্টনার ইকরামুল হক ও তাদের প্রাইভেটকার চালক বিশ্বজিৎ কুমার সাহাকে নিয়ে ব্যবসায়ীক কাজে চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের শিয়ালমারি এলাকায় আসে। রাত সাড়ে ৮ টার দিকে কাজ শেষে ফেরার পথে দর্শনা থানাধীন গয়েশপুর-সড়াবাড়িয়া সড়কের শালিকচারা এলাকার ফাঁকা মাঠ এলাকায় পৌঁছায়। এ সময় ১০/১৫ জনের হাফ প্যান্ট পরিহিত একটি ডাকাত দল রাস্তার পাশের একটি বড় গাছ কেটে রাস্তার উপর ফেলে অস্ত্র ও ধারালো রামদা, হাসুয়া তাদের গলায় ধরে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে মোট ১৪ ভরি ওজনের ৫টি স্বর্ণের আংটি, দুইটি গলার চেইন, ১টি ব্রেসলেট ও নগদ ৫১ হাজার টাকা নিয়ে যায়। এসময় সড়াবাড়িয়ার জামাল উদ্দিনের ছেলে ঠিকাদার ব্যাবসায়ী ওয়াহেদ এর কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা, আলমডাঙ্গার ব্যবসায় মৃত এলাহী বক্স মধুর ছেলে কুতুবের কাছ থেকে নগদ ১৩ লাখ ৩০হাজার টাকা ও স্থানীয় একাধিক পথচারির নিকট থেকে আরো ৫০ হাজার টাকা সহ মোট ৩৪ লাখ ৩১ হাজার টাকা সোনার গহনা ও টাকা নিয়ে ডাকাতি করে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী রনি সাহা বাদি হয়ে পরদিন ৩৯৫/৩৯৭ পেনাল কোড-১৮৬০ ধারায় দর্শনা থানায় ১০/১৫ জন অজ্ঞাত সঙ্গবদ্ধ ডাকাত দলের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব পান দর্শনা থানার অফিসার্স ইনচার্জ ওসি এএইচএম লুৎফুল কবীর। এ ঘটনার অভিযান চালিয়ে বিভিন্নস্থান থেকে পর্যায়ক্রমে সন্দেহভাজন ১৩ জনকে আটক করে। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে থানায় আটকে রাখে। পরে ওই ১৩ জনের মধ্যে আসামী নিশান আলী (২৫), সুজাত আলী (২৫), রিয়াজ হোসেন (২৪) ও নাইম হোসেন বাদি হয়ে গত ৭ আগস্ট সিনিয়র বিজ্ঞ ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে (আমলী দর্শনা থানা) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি লৎফুল কবীরের বিরুদ্ধে একটি পিটিশন দায়ের করেন। সেখানে বলা হয়, গত ২ জুলাই সুজাত হোসেনকে আটক করে থানা হেফাজতে রেখে চরম শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। আটকে রাখার ২ দিন পর তাকেসহ অন্য আসামীদেরকে ৪ জুলাই চুয়াডাঙ্গা আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ।
পুলিশের পক্ষ থেকে আসামীদের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে বিজ্ঞ আদালত। গত ২৪ আগস্ট রিমাণ্ড শুরুর পর আবারও শুরু হয় নির্যাতন। এক পর্যায়ে আসামি সুজাত গুরুতর আহত হয়ে গত ২৫ আগস্ট দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে ও ২৬ তারিখ ২য় দফায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পুলিশি পাহারায় ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহন করেন।
এ পিটিশনের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ জিয়া হায়দার আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেন।
পিটিশনের বাদিপক্ষের আইনজীবি অ্যাড. মশিউর রহমান পারভেজ বলেন, এই মামলায় পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের যথেষ্ট প্রমানাদি বিজ্ঞ আদালতে পেশ করেছি। আমরা আশা করছি ন্যায়বিচার পাব।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএইচএম লুৎফুল কবীর বলেন, আলোচিত ডাকাতির মামলাটি জেলা গোয়েন্দা শাখার কাছে হস্তান্তর হয়েছে। ওই মামলার ৪ আসামী আমার বিরুদ্ধে সিনিয়র ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে পিটিশন দায়ের করলে বিজ্ঞ বিচারক সেটি নামঞ্জুর করেন। পরে চুয়াডাঙ্গা দায়রা জজ আদালতে পিটিশন গ্রহন করে নথিভুক্ত হওয়া এবং শুনানির দিন ধার্যের বিষয়টি আমার জানা নেই। আর আসামীদের এসব অভিযোগও ভিত্তিহীন।