নিজস্ব প্রতিবেদক:
*বিএনপি জোট ছেড়েই জামায়াতের ১২০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা
*চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে জামায়াতের প্রার্থী রুহুল আমিন
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণার মাস খানেক আগ থেকেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জোরেশোরে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এর অংশ হিসেবে প্রায় ১২০টির বেশি আসনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। বিএনপির সাথে প্রায় ২৪ বছরের রাজনৈতিক সম্পর্কের বিচ্ছেদের সংবাদে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এর মধ্যেই আসে প্রার্থী চূড়ান্তের ঘোষনা। চুয়াডাঙ্গা দুইটি সংসদীয় আসনের একটিতে প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে দলটি। এতে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে অ্যাড. মোহাম্মদ রুহুল আমিনকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করছেন।
জামায়াতের সর্বোচ্চ ফোরাম নির্বাহী পরিষদের একজন সদস্য জানান, আগামী নির্বাচনে জামায়াত একা নির্বাচন করার প্রস্তুতি হিসেবেই প্রার্থী ঘোষণা করছে। জামায়াত নির্বাচনমুখী দল তাই আগে থেকেই প্রার্থীদের মাঠে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছে। তিনি বলেন, আগামীতে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির মতো কোনো দলের ক্ষমতায় যাওয়ার সিড়ি হবে না তারা। একক নির্বাচন করলেও আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনে জামায়াত অংশ নেবে না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে সক্রিয় থাকবে। এর আগে গত রবিবার (২৮ আগস্ট) নিজেদের সাংগঠনিক ভার্চ্যুয়াল প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে প্রায় ২৪ বছরের রাজনৈতিক সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটলো। ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পরই রাজনৈতিক অঙ্গনে বিষয়টি আলোচনা কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। সূত্র জানায়, একদিকে সরকার বিরোধী আন্দোলন অন্যদিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি করছে। আগামী নির্বাচনে ১২০টি আসনের কর্মপদ্ধতিও গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে বিএনপি অধ্যুষিত হিসেবে পরিচিত বগুড়ার সাতটি আসনের মধ্যে পাঁচটিতেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে। অন্য দুটিতেও প্রস্তুতি শুরু করেছে জামায়াত। তবে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বলেও স্পষ্ট ঘোষণা করেছে দলটি।
নির্বাচনের প্রস্তুতি: জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন আসনে জরিপ পরিচালনা করছে জামায়াত ইসলামী। জরিপের রিপোর্ট অনুযায়ী দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটি দেশের বিভিন্ন আসনে প্রার্থী নির্বাচন করতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি জেলায় আসন এবং প্রার্থীর নাম নির্বাচন করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মাঠে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাঁচ সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ ইজ্জত উল্লাহ। আরো রয়েছেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরোয়ার, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আজাদ ও সাবেক শিবির সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত। দলটির সূত্র জানায়, আগামীতে ১২০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বেশ কিছু আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা-২ (দামুড়হুদা-জীবননগর): অ্যাড. মোহাম্মদ রুহুল আমিন, ঝিনাইদহ-৩ অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, মেহেরপুর-১, কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) মুহাম্মদ আবদুল গফুর, যশোর-১ (শার্শা) কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আজীজুর রহমান, যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা)-কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আরশাদুল আলম, যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) অধ্যাপক গোলাম রসুল। যশোর-৫ (মনিরামপুর)-অ্যাডভোকেট গাজী এনামুল হক। যশোর-৬ (কেশবপুর)-অধ্যাপক মোক্তার আলী। বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দীন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য। বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) শাহাদাতুজ্জামান সাবেক এমপি। বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা তায়েব আলী। বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দবিবুর রহমান। বগুড়া-৬ (সদর) বগুড়া শহর আমির ও সাবেক উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান আবিদুর রহমান সোহেল। এছাড়া ঠাকুরগাঁও- ২ মো. আব্দুল হাকিম, দিনাজপুর-৪ (খানসামা-চিরিরবন্দর): মাওলানা আফতাব উদ্দিন মোল্লা, দিনাজপুর-৬ (নবাবগঞ্জ, বিরামপুর, হাকিমপুর এবং ঘোড়াঘাট) মো. আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী- ২ মো. মনিরুজ্জামান মন্টু, নীলফামারী- ৩, লালমনিরহাট-১ (পাটগ্রাম-হাতিবান্ধা), রংপুর- ৫ মো. গোলাম রব্বানী (রংপুরে আরো আসন নির্দিষ্ট করবে।), কুড়িগ্রাম-১ (ভুরঙ্গমারি-নাগেশ্বরী): আজিজুর রহমান স্বপন, কুড়িগ্রাম-৪ (রৌমারী-রাজীবপুর): নুর আলম মুকুল, গাইবান্ধা- ১ (সুন্দরগঞ্জ) মাজেদুর রহমান, গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ী): মাওলানা নজরুল ইসলাম, গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্ধগঞ্জ): ডা. আবদুর রহীম, জয়পুরহাট-১ (সদর-পাঁচবিবি): ডা. ফজলুর রহমান সাঈদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) ড. কেরামত আলী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ড. মিজানুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ নুরুল ইসলাম বুলবুল, রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী -তানোর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, রাজশাহী-৩ অধ্যাপক মাজেদুর রহমান, সিরাজগঞ্জ-৪ মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালি): অধ্যক্ষ আলী আলম, পাবনা-১ ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন, পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আবু তালেব মন্ডল, পাবনা-৫ মো. ইকবাল হোসেন, কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) মুহাম্মদ আবদুল গফুর, বাগেরহাট-৩ মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ শেখ, বাগেরহাট-৪ মো. আব্দুল আলীম, খুলনা-৫ মিয়া গোলাম পরোয়ার, খুলনা-৬ মো. আবুল কালাম আজাদ, সাতক্ষীরা-১ (কলারোয়া-তালা): অধ্যক্ষ ইজ্জতুল্লাহ; সাতক্ষীরা-২ (সদর), সাতক্ষীরা-৩ (আশাশুনি-দেবহাটা): মুফতি রবিউল বাশার; সাতক্ষীরা-৪ (কালিগঞ্জ-শ্যামনগর): গাজী নজরুল ইসলাম, পটুয়াখালী- ২ ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, বরিশালে একটি, পিরোজপুর-১ শামীম সাঈদী, শেরপুর- ১, ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া): অধ্যাপক জসিম উদ্দিন, ঢাকা- ১৫ ডা. শফিকুর রহমান, সুনামগঞ্জের একটি আসন, সিলেট- ৫, সিলেট-৬, মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ি), মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া), কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ), কুমিল্লা-১০ নাঙ্গলকোট-সদর দক্ষিণ-লালমাই): মোহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত, কুমিল্লা-১১ সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, ফেনী-৩ (সোনাগাজী-দাগনভুঞা): ডা.ফখরুদ্দিন মানিক, লক্ষীপুর-২ (রায়পুর-সদর আংশিক): মাস্টার রুহুল আমীন, চট্টগ্রাম-১০: আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া): মাওলানা শামসুল ইসলাম, চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী): মাওলানা জহিরুল ইসলাম, কক্সবাজার-২ (কুতুবদিয়া-মহেশখালী): হামিদুর রহমান আজাদ, কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ)। জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, জামায়াত সবসময়েই নির্বাচনমুখী ও গণতান্ত্রিক দল। নির্বাচনের প্রস্তুতি কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়। তবে এ সরকারের অধীনে তারা কোনা নির্বাচনে যাবে না। সেটা স্থানীয় সরকার কিংবা জাতীয় নির্বাচনই হোক না কেনো। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে তারা আন্দোলন করছেন। এ অন্দোলনকে সফল করার পর নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আসবে। ১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ৭৬টি আসনে মনোনয়ন দিয়েছিল। ওই নির্বাচনে দলটি ১০টি আসনে বিজয়ী হয়। ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে জামায়াত। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে জামায়াত ১৮টি আসনে বিজয়ী হয়। এই নির্বাচনে দলটি ২২২ জন প্রার্থী দিয়েছিল। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত ৩টি আসনে জয়ী হয়। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনে জামায়াত ১৭টি আসন পায়। মহিলা আসনগুলো থেকে ৪টি আসনে জয়ী হয় তারা। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত ২টি আসনে বিজয়ী হয়। ওই নির্বাচনে দলটি জোটগতভাবে ৩৯টি ও ৪টিতে এককভাবে নির্বাচন করে।