নিজস্ব প্রতিবেদক:
পাসপোর্টের নির্বিঘ্ন সেবা দিতে ব্যর্থ হওয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ সাড়ে ১১ কোটি নাগরিকের দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে / একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। যেহেতু বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সেহেতু এর সার্বভৌম ক্ষমতা জনগণের হাতেই ন্যস্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রায়শই এ কথা বলে থাকেন। সে অনুযায়ী সরকারি সব অফিস-আদালত এবং সেসব অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দেশের জনগণকে সেবা দিতে বাধ্য। কিন্তু বাস্তব চিত্রটা একটু ভিন্ন।
দেশের সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পাসপোর্ট অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), স্থানীয় সরকার বিভাগের জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন), জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ (এনআইডি) উল্লেখযোগ্য। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সাধারণ জনগণের নির্বিঘ্নে সেবা পাওয়ার কথা। উল্টো সাধারণ মানুষকে নানারকম হয়রানি করছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের অন্যান্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠান থেকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্যক্রম বেশ স্বচ্ছ। মাত্র ১৫ বছর আগে এর যাত্রা। ইতোমধ্যে সব কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতিতে (অনলাইন) সম্পন্ন হচ্ছে। ভোটার তালিকায় যুক্ত হওয়া প্রায় সাড়ে ১১ কোটি নাগরিককে পদ্ধতিগত উন্নয়নের মাধ্যমে খুব সহজেই সেবা দিয়ে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। মাঠপর্যায়ে কিছু ভোগান্তি থাকলেও নির্বাচন কমিশনের অধীনে এনআইডি’র কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে ভালোভাবেই। কিন্তু হঠাৎ করে এর ওপর নজর পড়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের!
দেশব্যাপী নিজস্ব অফিস ও জনবল দিয়ে পাসপোর্টের নির্বিঘ্ন সেবা দিতে ব্যর্থ হওয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ সাড়ে ১১ কোটি নাগরিকের দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে! এতে জনভোগান্তি যেমন বাড়বে, তেমনি প্রতি বছরই সরকারের গচ্ছা দিতে হবে কয়েক হাজার কোটি টাকা । দেশব্যাপী নিজস্ব অফিস ও জনবল দিয়ে পাসপোর্টের নির্বিঘ্ন সেবা দিতে ব্যর্থ হওয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ সাড়ে ১১ কোটি নাগরিকের দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে! এতে জনভোগান্তি যেমন বাড়বে, তেমনি প্রতি বছরই সরকারের গচ্ছা দিতে হবে কয়েক হাজার কোটি টাকা— বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
মাঠপর্যায়ে কিছু ভোগান্তি থাকলেও নির্বাচন কমিশনের অধীনে এনআইডি’র কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে ভালোভাবে— দাবি সংশ্লিষ্টদের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগ (এনআইডি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে স্থানান্তরের জন্য গত বছর (২০২১ সাল) টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের আদেশ জারি করা হয়। প্রায় এক বছর পর গত ২১ জুলাই সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমানকে টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক করা হয়।
গত ৭ আগস্ট সুরক্ষা সেবা বিভাগের সাংগঠনিক কাঠামোতে ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন’ অনুবিভাগ গঠন এবং এর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় পদ সৃজনের যৌক্তিকতা নির্ধারণের লক্ষ্যে মিটিং করেন সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব। গত ১১ আগস্ট সুরক্ষা সেবা বিভাগের এ সংক্রান্ত আরেকটি সভা হওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে তা বাতিল করা হয়।
টেকনিক্যাল কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছিল, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের পরিবর্তে সুরক্ষা সেবা বিভাগে আনয়নের লক্ষ্যে কারিগরি বিষয় যাচাইপূর্বক স্থানান্তরের পদ্ধতি/প্রক্রিয়া সম্পর্কে সুপারিশ প্রণয়ন, স্থানান্তর যোগ্য অবকাঠামো/জনবল চিহ্নিত করে স্থানান্তরের পদ্ধতি সম্পর্কে সুপারিশ প্রণয়ন, এতদসংক্রান্ত আনুষঙ্গিক বিষয়াদি, নির্বাচন কমিশন হতে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরের জন্য একটি সুপরিকল্পিত রোডম্যাপ প্রণয়ন করা। এছাড়া বলা হয়, কমিটি প্রয়োজনে সদস্য কো-অপট করতে পারবে।
চাকরিজীবীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন আসে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও বিজিবি’র। যেকোনো সরকারি চাকরিজীবী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথাযথ ডকুমেন্ট দিতে ব্যর্থ হন। ফলে সেগুলো আর সংশোধন হয় না। এ কারণে তাদের মন খারাপ হওয়ার কথা । এনআইডি’র এক কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)তিনি বলেন, গত বছরের ১৭ মে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের পরিবর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে ন্যস্ত করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর চিঠি দেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-১০ এ কে এম ফজলুর রহমান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এনআইডি চাইলেই নিতে পারবে না। কারণ, এর (এনআইডি) নিজস্ব কিছুই তো নেই। ভোটার তালিকা থেকে সবাইকে এনআইডি দেওয়া হয়। এর কোনো আলাদা ডাটাবেজ নেই বা নিজস্ব জনবলও নেই। নির্বাচন কমিশনের জনবলেই চলছে এনআইডি কার্যক্রম। এছাড়া, প্রকল্পের মাধ্যমে আউটসোর্সিং থেকে কিছু জনবল নিয়ে এনআইডি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ইসি থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কী নেবে?
পাসপোর্ট খাতে যে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়, সেটার অন্যতম হচ্ছে পুলিশ ভেরিফিকেশন। নির্বাচন কমিশনের পরে পুলিশের কাছে
কর্মকর্তারা আরও বলেন, স্বরাষ্ট্র এনআইডি নিতে চাইলে ভোটার তালিকার মূল ডাটাবেজ বা কপি নিতে পারবে। তবে এখানে কথা থাকে, নির্ভুল ভোটার তালিকা ও ডাটাবেজ সংরক্ষণ করা নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সেক্ষেত্রে ভোটার তালিকার ডাটাবেজ নির্বাচন কমিশন ছাড়া অন্য কারও কাছে থাকতে পারবে না। এছাড়া, স্বরাষ্ট্র যদি এনআইডি নিয়েই নেয়, তাহলে তারা নিশ্চয়ই এনআইডি সংশোধনের বিভিন্ন ধরনের আবেদন থাকে যেগুলো তাদের সংশোধন করতে হবে। এক্ষেত্রে দেখা যাবে, নির্ভুল ভোটার তালিকার সঙ্গে সংশোধন হওয়া এনআইডি’র দূরত্ব বাড়বে। মানে, স্বরাষ্ট্র জোর করে এনআইডি নিলেও নানামুখী সমস্যায় পড়তে পারে। যার প্রভাব সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে সরকারের ওপর পড়বে।
আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর এটা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা হয়নি। আমাদের কর্মকর্তারা মাঝে মাঝে বলেন, সেগুলো শুনি। তারা নাকি এত কষ্ট করে এটা করেছেন, এখন এটা চলে গেলে তাদের জন্য মানসিক কষ্টদায়ক হবে। স্বরাষ্ট্র বা নির্বাচন কমিশন কেউই এ বিষয়ে কোনো ফরমাল বা ইনফরমাল চিঠি আমাদের দেয়নি ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনআইডি’র এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অস্বাভাবিক পরিশ্রমের মাধ্যমে তিল তিল করে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করি। পরবর্তীতে ওই তালিকার তথ্যানুযায়ী নাগরিকদের এনআইডি ও স্মার্টকার্ড দেওয়া হয় এবং হচ্ছে। বর্তমানে এনআইডি ছাড়া সরকারি বা বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানই সেবা দেয় না। এনআইডি’র গুরুত্ব বাড়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কু-নজর পড়েছে। ফলে নির্বাচন কমিশনে সেভাবে কিছু না জানিয়েই তারা এনআইডি নেওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যারা এখানে (এনআইডি) দায়িত্ব পালন করছি, সবাই যথাযথ ডকুমেন্ট না থাকলে এনআইডি সংশোধনের আবেদন নিষ্পত্তি করি না। বিশেষ করে চাকরিজীবীদের সংশোধনী আবেদনে অনেক কাগজপত্র দিতে হয়। চাকরিজীবীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন আসে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও বিজিবি’র। যেকোনো সরকারি চাকরিজীবী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথাযথ ডকুমেন্ট দিতে ব্যর্থ হন। ফলে সেগুলো আর সংশোধন হয় না। এ কারণে তাদের মন খারাপ হওয়ার কথা। মূলত, এনআইডি নেওয়ার পেছনে অনেক ষড়যন্ত্র কাজ করছে। এগুলো চাইলেও বলা সম্ভব নয়।
স্বরাষ্ট্রের অধীনে এনআইডি গেলে জনভোগান্তি যেমন বাড়বে, তেমনি প্রতি বছর সরকারের গচ্ছা দিতে হবে কয়েক হাজার কোটি টাকা— বলছেন ইসি কর্তারা । নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে এনআইডি সেবায় নিজস্ব কোনো বরাদ্দ বা বাজেট নেই। নির্বাচন কমিশনের বাজেটেই দেশব্যাপী এনআইডি সেবাকার্যক্রম চলছে। তবে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এনআইডি নিয়ে গেলে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা জনবলের বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় হবে। এর বাইরেও সার্ভার ও অবকাঠামো উন্নয়নে অনেক বড় প্রকল্প হাতে নিতে হবে। অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশনের অধীনে এনআইডি থাকায় সংস্থাটির লাভের অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা হচ্ছে। কিন্তু স্বরাষ্ট্রের অধীনে চলে গেলে প্রতি বছরই কয়েক হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে সরকারকে। বর্তমানে অর্থনৈতিক সংকটে টালমাটাল দেশ। সরকারকে আরও অর্থনৈতিক চাপে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছে কিছু স্বার্থান্বেষী আমলা। ফলে এনআইডি নিয়ে এত তোড়জোড়।
এনআইডি নিয়ে গেলে একটা বিশাল বিনিয়োগ ও নিজস্ব জনবল লাগবে। এসব জনবলের আবার ট্রেনিং দিতে হবে। এছাড়া, তাদের প্রত্যেক উপজেলা, থানা, জেলা ও বিভাগ-পর্যায়ে অফিস লাগবে। দেশ বর্তমানে সংকটে আছে বলে আমার ধারণা। আমি মনে করি, এ সময়ে বিনিয়োগ, জনবল, প্রশিক্ষণ ও নিজস্ব অফিস নির্মাণের মতো কাজগুলো করার আগে এটা নেওয়া ঠিক হবে না । এ প্রসঙ্গে টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমানকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি। নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি যতটুকু শুনেছি এবং পত্রিকায় দেখেছি, নির্বাচন কমিশন অনেক আগে থেকেই কাজটা করে আসছে। প্রথমে এটা ভোটার লিস্ট বেজড ছিল। এরপর কিন্তু এনআইডি’র জন্ম হয়। আমি নির্বাচন কমিশনে দায়িত্ব নেওয়ার পর শুনছি এটা নাকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চলে যাবে। তবে, এ সম্পর্কিত এখনও কোনো কাগজপত্র দেখিনি। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর এটা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা হয়নি। আমাদের কর্মকর্তারা মাঝে মাঝে বলেন, সেগুলো শুনি। তারা নাকি এত কষ্ট করে এটা করেছেন, এখন এটা চলে গেলে তাদের জন্য মানসিকভাবে কষ্টদায়ক হবে। স্বরাষ্ট্র বা নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কেউই এ বিষয়ে কোনো ফরমাল বা ইনফরমাল চিঠি আমাদের দেয়নি।’
সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গোড়ার ইতিহাস হলো এটা (এনআইডি) আদৌ নির্বাচন কমিশনের করার কথা ছিল না। সত্যিকার অর্থে, জাতীয় পরিচয়পত্রটা নির্বাচন কমিশনের অধীন হওয়ারও কথা ছিল না। এটা সরকারি কার্যক্রমের একটা অংশ। প্রথমে ১৯৯৬ সালে ভোটার কার্ড করা হয়। এরপর ২০০৭ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখন আমি প্রকল্প পরিচালক হিসেবে ফিজিবিলিটি স্টাডি করি। সর্বপ্রথম গাজীপুরের দুটি জায়গায় এর মডেল করি। ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্টে দেখা যায়, ফুল সেট-আপ নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারের ছবি তোলা সম্ভব নয়। এরপর এটা কীভাবে প্রয়োজনীয় করা যায়, তার উপায় বের করলাম। ভোটাররা যেন তাদের নিজ প্রয়োজনে ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়ে ছবি তোলেন, সেই ব্যবস্থা করলাম। বিশেষ করে কিছু সেবা এনআইডিতে যুক্ত করে আইন করা হয়। যেহেতু নির্বাচন কমিশনের অধীনে এনআইডি রেখে আইন করা হয়, সেজন্য এটা নির্বাচন কমিশনের অধীনে আছে।
বাস্তব অর্থে সরকার চাইলে এটা নিয়ে যেতে পারে। কারণ, এটা সরকারের জিনিস, নির্বাচন কমিশনের নয়। কিন্তু ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব জনবল, নিজস্ব যন্ত্রপাতি, নিজস্ব টেকনোলজি, নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য দিয়ে যে জিনিসটা গড়ে তোলা হয়েছে সেটা যদি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান নিয়ে যায় তাহলে বাস্তবে অনেক অসুবিধার সৃষ্টি হবে। এনআইডি নিয়ে গেলে একটা বিশাল বিনিয়োগ ও নিজস্ব জনবল লাগবে। এসব জনবলের আবার ট্রেনিং দিতে হবে। এছাড়া, তাদের প্রত্যেক উপজেলা, থানা, জেলা ও বিভাগ-পর্যায়ে অফিস লাগবে। দেশ বর্তমানে সংকটে আছে বলে আমার ধারণা। আমি মনে করি, এ সময়ে বিনিয়োগ, জনবল, প্রশিক্ষণ ও নিজস্ব অফিস নির্মাণের মতো কাজগুলো করার আগে এটা নেওয়া ঠিক হবে না। ব্যাপারটা আরও ভেবে দেখা উচিত সরকারের।’
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভোটার তালিকার নির্ভরশীলতা নষ্ট হলে বিরাট সমস্যা সৃষ্টি হবে। গত কমিশন তাদের শতভাগ পক্ষপাতদুষ্টতা সত্ত্বেও নামকাওয়াস্তে এনআইডি স্থানান্তরের বিরোধিতা করেছে। আমি আশা করব, এই নির্বাচন কমিশনও তাদের স্বাধীনতার স্বার্থে, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে এবং নির্ভরশীলতার স্বার্থে তারা যেন সোচ্চার ভূমিকা পালন করে
,সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমান এনআইডি যদি অকার্যকর হয়, সেটা ভিন্ন বিষয়। নির্বাচন কমিশন যদি এনআইডি না চালাতে পারত, সেটাও ভিন্ন হতো। যদিও কিছু সমস্যা আছে, যেগুলো সমাধান করতে হবে। আমি মনে করি, এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। সম্পদটা ২০০৭ সালে সৃষ্টি করেছে নির্বাচন কমিশন। এনআইডি’র ভিত্তি হলো ভোটার তালিকার ডাটাবেজ। এখন কেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটা নিয়ে যাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে? স্বরাষ্ট্রের এ কাজটা আমাদের ‘ভোটার তালিকার শুদ্ধতা’ প্রশ্নের মধ্যে ঠেলে দেবে। আমাদের কাছে বিষয়টা উদ্বেগজনক মনে হয়, আসলে উদ্দেশ্যটা কী? কাজটা নির্বাচন কমিশন করলে ক্ষতি কোথায়? আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি একান্ত করতে চায় তাহলে যেন নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেজ ও জনবল হস্তান্তর না করা হয়।
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভোটার তালিকার নির্ভরশীলতা নষ্ট হলে বিরাট সমস্যা সৃষ্টি হবে। গত কমিশন তাদের শতভাগ পক্ষপাতদুষ্টতা সত্ত্বেও নামকাওয়াস্তে এনআইডি স্থানান্তরের বিরোধিতা করেছে। আমি আশা করব, এই নির্বাচন কমিশনও তাদের স্বাধীনতার স্বার্থে, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে এবং নির্ভরশীলতার স্বার্থে তারা যেন সোচ্চার ভূমিকা পালন করে।’
এনআইডি স্বরাষ্ট্রের অধীনে চলে গেলে নির্বাচন কমিশন অস্তিত্ব সংকটে পড়বে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে সুজনের সম্পাদক বলেন, নির্বাচন কমিশনের অস্তিত্ব সংকট তো এমনিতেই আছে। কারণ, তাদের ওপর জনগণের ব্যাপক অনাস্থা রয়েছে। অস্তিত্ব সংকট মানে হচ্ছে ভোটার তালিকার নির্ভরশীলতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। মানুষের মাঝে একটা অনিশ্চয়তা দেখা দেবে।
নির্বাচন কমিশনের অস্তিত্ব সংকট তো এমনিতেই আছে। কারণ, তাদের ওপর জনগণের ব্যাপক অনাস্থা রয়েছে। অস্তিত্ব সংকট মানে হচ্ছে ভোটার তালিকার নির্ভরশীলতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। মানুষের মাঝে একটা অনিশ্চয়তা দেখা দেবে ।
স্বরাষ্ট্র যদি এনআইডি নিয়ে যায় তাহলে নির্বাচনে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারবে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা তো সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায় না। তবে, এরকম একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে এটা নেওয়ার উদ্যোগ অত্যন্ত নেতিবাচক।’ তিন কোটি পাসপোর্টধারীর সেবা দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হিমশিম খায়। সেক্ষেত্রে সাড়ে ১১ কোটি মানুষের সার্ভার তাদের কাছে গেলে কীভাবে সামলাবে— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার কথা হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যে কাজটা (পাসপোর্ট) আছে, সেটা তারা ঠিক মতো করতে পারছে না। এখন কেন তারা এনআইডি নিতে চায়? প্রশ্ন তো থেকেই যায়।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এনআইডি নির্বাচন কমিশনের অধীনে আছে। এখন অনুবিভাগটি কোন যুক্তিতে স্বরাষ্ট্র নিতে চাইছে, সেটা যৌক্তিক কি না— এটা দেখতে হবে। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে এত অবকাঠামো ও জনবল নেওয়ার মতো সক্ষমতা আছে কি না— সেটাও দেখা দরকার। এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে গেলে এটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে চলে যাবে। বাংলাদেশে যেসব সেবা খাত রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পাসপোর্ট খাত। পাসপোর্ট খাতে যে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়, সেটার অন্যতম হচ্ছে পুলিশ ভেরিফিকেশন। নির্বাচন কমিশনের পর পুলিশের কাছে এনআইডি হস্তান্তরের ফলে কি শুদ্ধাচার বাড়বে? আসলে শুদ্ধাচার ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং দুর্নীতি ও অনিয়ম আরও বেশি বিস্তৃত ও গভীরতা লাভ করবে। এই প্রশ্নগুলো খতিয়ে দেখা দরকার। এটা হয়ে যাবে, এটা কিন্তু আমি বলছি না। দেখতে হবে এই সমস্যাগুলো সৃষ্টি হবে কি না এবং এনআইডি-কে কেন্দ্র করে মানুষের আরও হয়রানি, অনিয়ম ও দুর্নীতি বাড়বে কি না— এটা সবার আগে দেখা দরকার।’
পাসপোর্ট খাতে যে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়, সেটার অন্যতম হচ্ছে পুলিশ ভেরিফিকেশন। নির্বাচন কমিশনের পরে পুলিশের কাছে এনআইডি হস্তান্তরের ফলে কি শুদ্ধাচার বাড়বে? আসলে শুদ্ধাচার ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং দুর্নীতি ও অনিয়ম আরও বেশি বিস্তৃত ও গভীরতা লাভ করবে ।
উল্লেখ্য, ২০০৭-০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকার কাজ শুরু করে নির্বাচন কমিশন। ভোটার তালিকার সঙ্গে এনআইডি দেওয়ার কাজটিও করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১০ সালে নির্বাচন কমিশনের অধীন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ হিসেবে এটি আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পায়।
নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশে ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০ জন। এর মধ্যে পাঁচ কোটি ৭৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ জন পুরুষ, পাঁচ কোটি ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ২৭ জন নারী এবং ৪৫৪ জন তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য রয়েছেন। প্রথম থেকে এনআইডি হারানো ও সংশোধন সংক্রান্ত সেবা বিনামূল্যে দিলেও ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ফি নেওয়া শুরু করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ।