দামুড়হুদা অফিস:
দামুড়হুদা উপজেলার গাছে গাছে শোভা পাচ্ছেন দেশি খেজুর ফলের কাঁদি। বর্তমানে সময়ে উপজেলার বেশির ভাগই খেজুরের গাছের ফলগুলোতে সবুজ রঙ থেকে হলুদ বর্ণ ধারণ করে প্রাকৃতিকভাবে বাড়িয়েছে শোভা। প্রাচীনতম ফলের মধ্যে অন্যতম এ দেশি খেজুরের স্বাদ অনন্য হওয়ায় গাছে গাছে ফল পাকা শুরু হলেই বেড়ে যায় শিশু-কিশোরদের দুরন্তপনা। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যেই জৈষ্ঠ্যের শেষের দিকে এ খেজুর ফল পাকা শুরু করবে।
দামুড়হুদা উপজেলাটি সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এক সময় এ উপজেলার সকল গ্রাম্য এলাকার যেদিকেই চোখ যেতো সেদিকেই দেখা মিলতো একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি খেজুরের গাছ। এ গাছ থেকে শীতের মৌসুমে খেজুর গাছের মাথায় মাটির হাঁড়ি (ভাঁড়) টাঙ্গিয়ে সুমিষ্ট স্বাদের রস সংগ্রহ করতেন চাষিরা। আর ওই রস আগুনে জ্বালিয়ে তৈরি করতেন খেজুরের গুড়, পাটলি। উপজেলার অসংখ্য গাছি রসের গুড়, পাটালি বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বি হয়েছেন। লেখাপড়া করিয়েছেন সন্তানদের, চাহিদা মিটিয়েছেন সংসারের। শীতের ঋতু চলে যাবার পর এ গাছটির মাথা জুড়ে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকতেন খেজুর ফল। এসময় ছোট শিশু-কিশোরা দলবেঁধে খেজুর গাছের নিচ থেকে পাকা খেজুর কুড়ানোর মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা মিলতো সচারচর। তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হতো কে কয়টা খেজুর পেয়েছে। পাশাপাশি মাঠ থেকে বাড়ি ফেরার পথে চাষিরা গাছ থেকে খেজুরের কাঁদি কেটে নিয়ে আসতেন তাদের সন্তানদের জন্যে। এরপর খেজুরে কাঁদিতে লবন পানি ছিটিয়ে বস্তা, ধানের গোলায় রেখে দিলেই তা পেকে যেতো। পরবর্তী সময়ে বাসা বাড়ির ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা তৃপ্তির সঙ্গে খেয়ে থাকতো। বিদ্যালয়ে যাবার সময় শহরের বন্ধুদের জন্যে নিয়ে যেতেন। এমনকি গ্রাম পর্যায় থেকে শহরের আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে গেলেও এ খেজুর ফল নিয়ে যাওয়া হতো। অথচ কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে খেজুর গাছ ও ফল। পাশাপাশি হারিয়ে যাচ্ছেন প্রাকৃতিক ভারসম্য। এখন আর আগের মতো দেখা মেলে না এমন দৃশ্য, আর পড়লেও কম।
সরেজমিনে দেখা যায়, দামুড়হুদা উপজলার দেউলী-বদনপুর, কানাইডাঙ্গা, কাঞ্চনতলা সড়কে রাস্তার দু’পাশে প্রায় দুইশতাধিক খেজুর গাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। প্রায় গাছের মাথার উপরে ঝুলছে সবুজাভ ও হলুদ বর্ণের খেজুরের কাঁদি। পাশাপাশি উপজেলার চিৎলা, কেশবপুর, পারদামুড়হুদা, হাউলী, জয়রামপুর, লোকনাথপুর, দুধপাতিলা, জুড়ানপুর, মোক্তারপুর বড়বলদিয়া, কার্পাসডাঙ্গা-মুজিবগর সড়কসহ বিভিন্ন স্থানের সড়কের দুপাশ, পুকুর পাড়, পতিত জমি, জমির আইলে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে গাছটিতে বিপুল পরিমাণে খেজুর। এসকল গাছের ফলগুলো জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষের দিকে পাকতে শুরু করবে বলে স্থানীয় চাষিদের মাধ্যমে জানা যায়। সেমতে এখনো প্রায় ১৫-২০ দিনের মধ্যে এ গাছগুলো থেকে ফল পাকা শুরু হবে।
দেউলী গ্রামের ভ্যানচালক যুবক আব্দুর সামাদ জানান, গ্রামের গাছগুলোর কাঁদিতে ঝুলছে খেজুর। সামনে মাসের মধ্যে এ গাছগুলিতে খেজুর পাকা শুরু হবে। গাছের সব খেজুর একসাথে না পাকার কারনে অনেকেই গাছ থেকে খেজুরের কাঁদি কেটে বাড়িতে লবন পানি মিশিয়ে বস্তা চাপা দিয়ে পাকতে শুরু করেছে। এসময় গাছগুলো থেকে গাছে পাকা খেজুর গাছের নিচে পড়ে। ছোট বেলার আমিও বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে খেজুর কুড়িয়ে খেতাম, পাকা খেজুর কুড়িয়ে খাওয়ার মজাই আলাদা।
উপজেলার কানাইডাঙ্গা গ্রামের ইমরান হোসেন, তিনি জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সহকারী প্রকৌশলী পদে কর্মরত রয়েছেন। তিনি ছোটবেলার স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, ছোট বেলাতে গ্রামের মেঠোপথ পেরিয়ে দলবেঁধে একসাথে মাঠে যেতাম। গাছের তলায় পড়ে থাকা পাকা খেজুর কে কার আগে কুড়াতে পারেন এমন প্রতিযোগিতা চলতো।
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন জানান, পাখ-পাখি ও কাঠবিড়ালি খেজুর গাছের চারা বিস্তারে মূল ভূমিকা পালন করে। এ গাছটির তেমন যত্ন নেওয়া লাগে না, কোন খরচ হয়না এমনকি তেমন রোগ বালাইও নেই।
খেজুর ফলের উপকারীতা সম্পর্কে দামুড়হুদা উপজেলর ইউনানী মেডিকেল অফিসার ডা: সোহরাব হোসেন জানান, অবহেলিত এ খেজুর গাছের ফলটি মানবদেহের জন্য একটি শক্তিবর্ধক ফল। আমাদের অঞ্চলের দেশি খেজুর পেটব্যথা, হৃদরোগ ও জ্বরের জন্য উপকারী বটে। পাশাপাশি ফলটি কাঠাবিড়ালী, পাখ-পাখিদেরও প্রিয় খাদ্য।