নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশকে ডিজেল চালিত ২০টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) অনুদান হিসেবে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভারত। সেই প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ওই ২০টি লোকমোটিভ গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা রেলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এরমধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রেলবহরে যুক্ত হলো ২০টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ।
গতকাল বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে ব্রডগেজ লোকোমোটিভগুলো দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলওয়ে স্টেশনে এসে পৌঁছালে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। পরে ইন্ডিয়া রেলওয়ে বোর্ডের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর অশোক কুমার বিশ্বাস বাংলাদেশের ঈশ্বরদী লোকোমোটিভ বিভাগের সিনিয়র সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সরেক জামালের কাছে বুঝিয়ে দেন। ইঞ্জিনগুলো বুঝে নিয়ে স্বাক্ষর করেন দু দেশের প্রতিনিধিরা।
লোকোমোটিভ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ও ভারতের রেলমন্ত্রী শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। একই সাথে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা ও ভারতের গেদে অংশে হস্তান্তর অনুষ্ঠান ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়। এসময় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদার, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান মঞ্জু, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজমুল হামিদ রেজা, দামুড়দা উপজেলা চেয়ারম্যান আলী মনসুর বাবু, দর্শনা পৌর মেয়র আতিয়ার রহমান হাবু, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তারেকসহ দু’দেশের রেলওয়ে কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদার জানান, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সম্পাদনের পর ব্রডগেজ ইঞ্জিনগুলোর সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের বিস্তারিত (স্পেসিফিকেশন) যাচাই, আমদানি ছাড়পত্র গ্রহণ, কাস্টমস ডিউটি, ভ্যাট ও ট্যাক্স প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দেশে আনা হয়েছে। ঈশ^রদী থেকে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে ইঞ্জিনগুলো পণ্য পরিবহনে ব্যবহার করা হবে।
অপরদিকে, রেল ইঞ্জিন হস্তান্তর উপলক্ষে রাজধানী ঢাকার রেলভবনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। অন্যদিকে অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে নয়া দিল্লির রেলভবন থেকে যুক্ত হন ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। এ সময় বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ভারত বিনা পয়সার ২০টি পুরোনো ব্রডগেজ লোকোমোটিভ উপহার দিয়েছে। ইঞ্জিনগুলো গড়ে আট বছরের পুরোনো। এই ইঞ্জিনগুলো দেশের রেলের বহরে যুক্ত হবে। মন্ত্রী নূরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরের সময় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর যৌথ বিবৃতিতে ভারতীয় রেলওয়ে থেকে ২০টি ইঞ্জিন অনুদান হিসেবে দেওয়ার বিষয়টি আলোচনা হয়। তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে আটটি পথে রেল-সংযোগ রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হবে আখাউড়া-আগরতলা পথ।
অনুষ্ঠানে ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, যেসব ইঞ্জিন দেওয়া হয়েছে সেগুলো আধুনিক ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন, ৩ হাজার ৩০০ অশ্বক্ষমতাসম্পন্ন। দুই দেশের মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময়সহ নানা বিষয় সহযোগিতা বিদ্যমান। বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে ২০টি ইঞ্জিন দেওয়া হয়েছে, যা বাংলাদেশের মানুষের রেলভ্রমণে স্বাচ্ছন্দ্য আনবে।
ঢাকায় রেল ভবনের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মুস্তাফিজুর রহমান দিল্লির রেল ভবন থেকে যুক্ত হন।
হস্তান্তর করা লোকোমোটিভ নম্বর হচ্ছে- ১১৫৪৫, ১১৪০৩, ১১৪৪১, ১১৫৪৭, ১১৫৭২, ১১৫৩৫, ১১৫৩৮, ১১৫৪৮, ১১৫৬৮, ১১৪১২, ১১৫৮১, ১১৪১৯, ১১৪২০, ১১৪২২, ১১৪৮২, ১১৪৯৪, ১১৩৬৯, ১১৩৭৮, ১১৩৭৯ এবং ১১৩৩৬।
উল্লেখ্য, গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় ভারত এই রেল ইঞ্জিন সরবরাহ করতে সম্মত হয়। এ নিয়ে গত তিন বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশকে লোকোমোটিভ দিলো ভারত। এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে ভারত ১০টি লোকোমোটিভ দিয়েছিল।