শেখ লিটন:
চুয়াডাঙ্গার সড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ধারণ ক্ষমতার তুলনায় বেড়েছে মোটরসাইকেল চলাচল। সক্ষমতার থেকে সংখ্যায় বেশি এসব মোটরসাইকেলের বেপরোয়া গতির কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, ঝরছে প্রাণ। অনেকে চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। কয়েকটি সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে, গেল ৬ মাসে শুধু চুয়াডাঙ্গার সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬৩ জন। এদের মধ্যে উঠতী বয়সী যুবকের সংখ্যাই বেশি। নিরাপদ সড়ক চাই, বিআরটিএ ও জেলা পুলিশের তথ্য সমন্বয় করে এ সংখ্যা পাওয়া গেছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের বিভিন্ন সড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গার বড়বাজার থেকে ঝিনাইদহ সড়কে দ্রুত গতিতে চলাচল করছে শত শত মোটরসাইকেল। একই অবস্থা আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা-দর্শনা ও মেহেরপুরের আঞ্চলিক মহাসড়কে। সম্প্রতি দামুড়হুদার জয়রামপুর সড়কে একজন ও জাফরপুরের যুব উন্নয়ন ভবনের সামনে দুটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় আরও তিনজন। পঙ্গু হন বাকি জন। তবুও কমেনি মোটরসাইকেল চালকদের বেপরোয়া চলাচল। হেলমেট ও লাইসেন্স না থাকায় মোটরসাইকেল আটক করে ট্রাফিক পুলিশ। কাউকে কাউকে মামলা দেয়া হলেও, ছেড়ে দেয়াও হয় অনেককে।
মোটরসাইকেলের গতি নিয়মের মধ্যে রেখে চালনার জন্য একাধিকবার সচেতন করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গা তথ্য অফিস থেকে। এতে কোন সমাধান আসেনি। জেলা আইন-শৃঙ্খলার মাসিক আলোচনায় সভায় একাধিকবার মটরসাইকেল দুর্ঘটনা হ্রাসের করণীয় এ বিষয় আলোচনা করলেও তা-ও কোন কাজে আসেনি।
স্থানীয় সচেতন মহলের মতে, যে সকল ছেলেদের বয়স ১৮ বছরের নিচে তাদের হাতে কোন ভাবে মোটরসাইকেল দেওয়া যাবে না। কোন প্রকার যদি কেউ অতি দ্রুত মটরসাইকেল চালায় তাহলে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে জরিমানা করতে হবে। শহরের ওপর যে সকল ট্রাফিক পুলিশদের আরও দায়িত্ববান হতে হবে।
কথা হয় চুয়াডাঙ্গার এক পথচারি ফরিদ হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। বেশির ভাগই দেখা যায় ১৮ বছরের ছেলেরা সড়কের ওপর দিয়ে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে। এতে আমরা সাধারণ যারা আছি তারা রাস্তায় চলাচল করতে পারি না।
চুয়াডাঙ্গার রেলপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোকলেচুর রহমান বলেন, এখন সড়কের চলাচল করা খুবই মারাত্মক ব্যাপার হয়ে গেছে। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সড়কের প্রতিনিয়ত প্রাণ ঝরছে। যে সেব অল্প বয়সী ছেলেরা গাড়ি চালায় এদের কোন নিয়ম কানুন ছাড়াই অদক্ষতার সাথে গাড়ি চালায়। এদের একটা প্রশাসন থেকে ব্যবস্থা করা উচিত।
এ ব্যাপারে কথা হয়, চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাকির হোসেনের সাথে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, জেলায় মোটরসাইকেলের সংখ্যা অনকেগুণে বেড়ে গেছে। এতে সড়কে নিয়মিত ঝরছে তাজা প্রাণ। এ ব্যাপারে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করা গেছে, সেগুলো হচ্ছে- কিশোর-তরুণদের অনেকে নিয়ম না মেনে বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালায়, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করে। এ ছাড়া মহাসড়কে ধীর গতির যানবাহন চলাচল বন্ধ না হওয়া, চালকদের বিরতিহীনভাবে একটানা যানবাহন চালানো, ফাঁকা সড়কে বেপরোয়া গতি। এছাড়া মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক ও গ্রামীণ সড়কে মোটরসাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে অধিকাংশ চালক নিয়ম মানেন না। এক মোটরসাইকেলে দুজনের বেশি না ওঠার নিয়মটিও মানা হয় না। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অনিবন্ধিত মোটরসাইকেলও অহরহ চলে। অনেকেরই মোটরসাইকেল চালানোর কোনো প্রশিক্ষণ থাকে না। এসব বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করা গেলেই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের চুয়াডাঙ্গা জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারি পরিচালক সৈয়দ আইনুল হুদা চৌধুরী বলেন, চুয়াডাঙ্গায় গেল বছরের থেকে মোটরসাইকেল চলাচল গতি বেড়ে গেছে। নিয়মিত ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে সড়কে নিয়মিত প্রাণ ঝরছে। চুয়াডাঙ্গা যে সকল গাড়ি অল্প বয়সের ছেলেরা সড়কে চালায় তাদেরকে আমরা হেলমেট ও লাইসেন্স না থাকায় তাদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানার আওতায় নিয়ে আসছি। তবে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। আর যারা দ্রুত গতিতে গাড়ি চালায় তাদেরকে আমরা সচেতন করছি ও পরামর্শ দিচ্ছি।