নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘রাজপথ’ চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এখন থেকে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে নিয়মিত শো-ডাউন করবে ক্ষমতাসীন দলটি। নেতাকর্মীদের বক্তব্য- আগামী নির্বাচন পর্যন্ত তারা রাজপথ দখলে রাখবে। ১৭ই আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদ জানাতে রাজপথে যে শোডাউন করা হয়েছে তা অব্যাহত থাকবে। যারা সরকার পতনের জন্য আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের জন্য প্রস্তুত তারা। বিরোধীদের রাজপথের প্রতিবাদের জবাব রাজপথেই দেয়া হবে বলে তাদের মন্তব্য। আওয়ামী লীগের বেশ কয়েক সিনিয়র নেতা মানবজমিনকে বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা বারবার বলছেন, দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগ রাজপথে আন্দোলন করতে ভুলে গেছে। এটা ভুল। আওয়ামী লীগ রাজপথের দল। সংগ্রাম করে দলটি আজ এ পর্যন্ত এসেছে। রাজপথে লড়াইয়ের বহু ইতিহাস রয়েছে দলটির। তাই আমাদের রাজপথ আন্দোলন শেখাতে হবে না। এরইমধ্যে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের যেকোনো সময় আন্দোলন ঠেকাতে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। জেলা, থানা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত ওই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকরা এসব তত্ত্বাবধান করছেন। অন্যদিকে ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ড মনিটরিং করছেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতারা। এজন্য তারা আলাদাভাবে প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করেছে। সিটি করপোরেশন এলাকার নেতাদের ভাষ্য- আন্দোলনের নামে রাজধানীতে কোনো ধরনের অরাজকতা বা জানমালের ক্ষতি করতে দেয়া হবে না। এজন্য প্রতিটি নেতাকর্মী প্রহরীর ভূমিকায় রয়েছে। রাজপথ আন্দোলন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াতের সব অপপ্রচারকে প্রতিহত করতে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ। তাদের সব গুজব আমাদের প্রতিহত করতে হবে। এর সঙ্গে তাদের ষড়যন্ত্রের রাজনীতিকে প্রতিহত করতে হবে। এজন্য প্রস্তুত রয়েছি। তিনি বলেন, আমরা আমৃত্যু যেকোনো অপশক্তির বিরুদ্ধে, যেকোনো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যেকোনো অগ্নিসন্ত্রাসী, বোমাবাজদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের শান্তি সমৃদ্ধি অক্ষুন্ন রাখার জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বে লড়াই করে যাবো। দেশে কোনো অশুভ, অগণতান্ত্রিক শক্তি বা যারাই স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করার জন্য কোনো ষড়যন্ত্র করবে তাদের সেই ষড়যন্ত্রের নীলনকশা আমরা ভেঙে দেবো। দলের অপর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, লাখ লাখ নেতাকর্মী রাজপথে নেমে এসেছে। যেকোনো মূল্যে উন্নয়ন অগ্রগতি অব্যাহত রাখবে আওয়ামী লীগ। যারা উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে চায় তাদের সমূলে উৎপাটন করা হবে। একই প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ মানবজমিনকে বলেন, রাজধানীতে ১৭ই আগস্টের শোডাউনের মধ্যদিয়ে বিরোধীদের আমরা রাজপথের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছি। আমরা যে ঘরে বসে নেই তা দেখিয়ে দিয়েছি। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথ আমরা দখলে রাখবো। আন্দোলনের জবাব আন্দোলনেই দেয়া হবে। তিনি বলেন, বিরোধীদের বলবো- ঘরে বসে ফেসবুক, ইউটিউবে সরকার পতনের ডাক না দিয়ে রাজপথে আসুন। দলটির বেশ কয়েক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ রাজপথ থেকে ক্ষমতায় এসেছে। সরকারবিরোধী শক্তিগুলো যেভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ রাজপথ ভুলে গেছে। আর ছাড় দেয়া হবে না। এখন থেকেই আমরা রাজপথ দখলে রাখবো। আগস্ট মাস এলে শোকের কর্মসূচি ছাড়া রাজনৈতিক কার্যক্রম সচরাচর পালন করে না আওয়ামী লীগ। তবে ১৭ই আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে মিছিলে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে শোডাউন করে দলটি। সরকারবিরোধীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, খেলা হবে সবাই প্রস্তুত থাকেন। খেলা হবে নির্বাচনে, খেলা হবে রাজপথে। ফখরুল সাহেব বলেন, আওয়ামী লীগের পায়ের নিচে মাটি নেই। দেখেছেন? বঙ্গবন্ধুর মাজারে জনতার ঢল, সমাবেশে জনতার ঢল। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কর্মীরা মাঠে নামলে রাজপথ নয়, বিএনপি অলিগলিও খুঁজে পাবে না। বর্তমান পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, জ্বালানি ও দ্রব্যমূল্যের ইস্যুতে জনগণকে বিভ্রান্ত করে ফায়দা লুটতে চাচ্ছে বিএনপি। এ ছাড়া কয়েকটি প্রভাবশালী দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চাচ্ছে। তাই আন্দোলনের নামে সরকারবিরোধীরা দেশের অভ্যন্তরে কী পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে সে বিষয়ে নজর রাখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। যদি আন্দোলনের নামে গুজব, হামলা, নৈরাজ্য, মানুষের জানমালের ক্ষতি, তথা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হয় তবে কড়া জবাব দেয়া হবে। কিন্তু গণতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলন-সংগ্রাম, মিছিল-মিটিং ও সভা-সমাবেশ হলে সহনশীল থাকবে ক্ষমতাসীনরা।