নিজস্ব প্রতিবেদক:
দুই মাসের ছুটি নিয়ে আমেরিকায় পাড়ি জমানো চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হাজরাহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিগার সুলতানার হদিস মেলেনি কোথাও। এদিকে একই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নীনা শাহরিয়ার ও ভিমরুল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আরেক সহকারি শিক্ষক নিপা শাহরিয়ার স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অব্যহতি নিয়েছেন। সম্পর্কে তারা আপন দুই বোন। গত ১৬ আগস্ট তাদের জমা দেয়া অব্যহতি পত্র গ্রহন করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান। সম্প্রতি ওই তিন শিক্ষকের কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা নিয়ে দৈনিক আকাশ খবরসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপরই মূলত ওই দুই শিক্ষক চাকরি ছাড়েন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১ জুলাই চুয়াডাঙ্গা শহরতলীর হাজরহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন নিগার সুলতানা। আত্মীয় স্বজন আমেরিকা থাকার কারণে চার বছর ধরে তিনি নিজের খেয়াল খুশিমতো সেখানে যাওয়া-আসাসহ বিভিন্ন অজুহাতে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত তিন মাসের চিকিৎসাজনিত ছুটির একটি দরখাস্ত নিজ বিদ্যালয়ে রেখে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান তিনি। অথচ এ ধরনের ছুটির জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে মহাপরিচালকের দপ্তর থেকে অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দেশে না এসেই ২০১৯ সালের ১১ মার্চ থেকে ১০ মে পর্যন্ত আরও দুই মাসের জন্য চিকিৎসাজনিত ছুটির একটি দরখাস্ত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠান নিগার সুলতানা। ২ বছর ৯ মাস ৮ দিন অননুমোদিত ছুটি কাটিয়ে ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর তিনি বিদ্যালয়ে যোগ দেন। এরপর ৩ মাস ৭ দিন বিদ্যালয়ে গেলেও চলতি বছরের ২৮ মার্চ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন তিনি। নিগার সুলতানার বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম কুমার কুণ্ডু গত ১৫ জুন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে জানান।
একই বিদ্যালয়েরর সহকারী শিক্ষক নিনা শাহরিয়ার ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ বছর ৬ মাস কোনো প্রকার ছুটি ছাড়াই কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত রয়েছেন। সহকর্মী শিক্ষকদের ভাষ্যমতে, নীনা শাহরিয়ার বর্তমানে ঢাকায় তার স্বামীর সঙ্গে বসবাস করেন। অপরদিকে, শহরের আরেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিমরুল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও একই অবস্থা। সেখানেও নিপা শাহরিয়ার নামে আরেক শিক্ষক কর্মস্থলে অনুপস্থিত। চিকিৎসাজনিত কারণ দেখিয়ে ৬ মাসের ছুটি নিয়ে ৯ মাস ধরে বিদ্যালয়ে আসেন না তিনি। তাদের অনুপস্থিতির বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসলে দুই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই দুই সহকারি শিক্ষক স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেন।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম কুমার কুণ্ডু বলেন, ওই তিন শিক্ষকের অনুপস্থিতিরি বিষয় উল্লেখ করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছিল। সে চিঠিতে তাদের চাকরির বিধান পরিপন্থীর বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সে অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এরইমধ্যে দুই সহকারী শিক্ষক নীনা শাহরিয়ার ও নিপা শাহরিয়ার স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অব্যহতি নিতে আবেদন জমা দিয়েছিলেন। গত ১৬ আগস্ট সে আবেদন গ্রহন করেছি। তারা এখন আর ওই পদে বহাল নেই। ওই দুটি পদ শুণ্য ঘোষণা করে পরবর্তি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া হাজরাহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিগার সুলতানার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান আছে। তার কোন হদিস মিলছে না। তার বিরুদ্ধে রায় ঘোষনা হলেই পরবর্তি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শামীম ভূইয়া জানান, শিক্ষকদের কাছ থেকে এমন কান্ড কখনই কাম্য নয়। ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নিতে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে। সেই পত্র জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।