নিজস্ব প্রতিবেদক:
শোক, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে চুয়াডাঙ্গায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল সোমবার সকাল ৭টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছার ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে জেলা প্রশাসনের পক্ষে জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খান, পুলিশ বিভাগের পক্ষে পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষে যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে এক বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে সকাল ৭টায় জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয় চত্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। এরপর সকাল সাড়ে ১০টায় ডিসি সাহিত্য মঞ্চে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এঁর জীবন ও আদর্শের উপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাজিয়া আফরিনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, জাতির পিতার দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাঙালি জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ছিনিয়ে এনেছিল আমাদের মহান স্বাধীনতা। সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে বঙ্গবন্ধু যখন সমগ্র জাতিকে নিয়ে সোনার বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে নিয়োজিত, তখনই স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী চক্র তাকে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ হত্যা করে। এই হত্যার মধ্য দিয়ে তারা বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করার অপপ্রয়াস চালায়। ঘাতকদের উদ্দেশ্যই ছিল অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামাকে ভেঙে আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে ভূলুণ্ঠিত করা। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি, আর কখনো হবেও না।
তিনি আরও বলেন, তার আত্মত্যাগের মহিমা এবং দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনাদর্শ আমাদের কর্মের মাধ্যমে প্রতিফলিত করে সবাই মিলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তেব্য পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বিপিএম সেবা বলেন, ‘শোষক ও শোষিতের সংগ্রামে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে বঙ্গবন্ধু পালন করেছেন ঐতিহাসিক ভূমিকা। পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শক্তির শৃঙ্খল থেকে তিনি বাঙ্গালি জনগোষ্ঠীকে মুক্ত করতে চেয়েছেন, চেয়েছেন দেশকে স্বাধীন করতে। এ মুক্তির সংগ্রামে তিনি নিজের জীবনকে তুচ্ছ ভেবে জনগণের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, কিশোর বয়স থেকেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে উচ্চারণ করেছেন প্রতিবাদ, সর্বদা বলেছেন সত্য ও ন্যায়ের কথা এবং হয়ে উঠেছেন স্বাধীনতার মূর্ত প্রতীক। শোষিত মানুষের পক্ষে বঙ্গবন্ধুর এ নির্ভীক অবস্থানের কারণে তিনি কেবল বাংলাদেশই নয়, শোষিত-নির্যাতিত বিশ্বমানব সমাজেও অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু আজীবন স্বপ্ন দেখেছেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে হলে, শোষণমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হলে, প্রকৃত দেশপ্রেম নিয়ে সচেতনতার সঙ্গে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। সেটিই হবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের শ্রেষ্ঠ উপায়।’
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন পৌর মেয়র জাহাঙ্গির আলম মালিক খোকন, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর রেজাউল করিম, সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল ইসলাম মালিক প্রমুখ। আলোচনা সভা শেষে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়।