জীবননগর অফিস:
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডে পণ্য তোলা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগে রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ শাহ, ৯নং ইউপি সদস্য মানিক ও আবু তাহের জবাকে অবরুদ্ধ করে রাখে ক্ষুব্ধ জনতা। গতকাল বুধবার বিকেলে রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে এই ঘটনা ঘটে। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) তিথি মিত্র ঘটনাস্থলে পৌঁছে উত্তেজিত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় জবাকে পরিষদ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নেয়া হয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার দেশের স্বল্প আয়ের মানুষের কথা খেবে এমন মহতি উদ্যোগ নিয়েছে। তবে রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ শাহ ও ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য মানিক টিসিবির কার্ডের মালামাল লুটপাট শুরু করেছে। সে (মানিক) একাই ৫০টি কার্ডের পণ্য তুলে জবার গাড়িতে করে পাচার করবে বলে জবাকে ইউনিয়ন পরিষদের নিয়ে আসে। মানিক টিসিবির গাড়ির থেকে মাল নেওয়ার সময় আমরা ও ২ নং ওয়ার্ডের সদস্য মাহবুবুর রহমান আকবারসহ স্থানীয় জনগণ মানিনকে ৫০টি টিসিবির কার্ডসহ অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
পরে ঘটনাস্থলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) তিথি মিত্র ঘটনাস্থলে পৌঁছালে রায়পুর ইউনিয়নবাসী বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এসময় তিনি উত্তেজিত জনগনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে মানিকের কাছে থাকা কার্ড গুলো জব্দ করেন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় অবরুদ্ধ জবাকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়ে যান।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা রাসেল হোসেন বলেন, রাশিদ চেয়ারম্যান ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মানিককে দিয়ে ৫০টি কার্ডের পণ্য তুলছিলেন। জনগণ দেখে তাঁদের কাছ থেকে কার্ডগুলো কেড়ে নিয়েছে। তাঁরা টিসিবির পণ্য জবার গাড়িতে করে নিয়ে যেত। এ জন্য সবাইকে ইউনিয়ন পরিষদে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আকবার হোসেন বলেন, ‘মানিক মেম্বার যখন গাড়ি থেকে একবারে ৫০টি কার্ড দিয়ে টিসিবির পণ্য নিতে যাচ্ছিল তখন জনগণ কার্ডগুলো কেড়ে নেয়। মানিক মেম্বার টিসিবির পণ্য তুলে আবু তাহের জবার গাড়িতে নিয়ে যাবে বলে জবা এখানে এসেছিলেন।’
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে আবু তাহের জবা বলেন, ‘আমি ইউনিয়ন পরিষদে ট্রেড লাইসেন্স নিতে এসেছিলাম। ইউনিয়ন পরিষদে টিসিবির পণ্য দেবে আমি জানতাম না। আমি ইউপিতে আসার পর ওই পক্ষ আন্দোলন করছে। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।’
আর ইউপি সদস্য মানিকের দাবী, ‘আমি চেয়ারম্যানের কক্ষে বসে কার্ড বিতরণ করছিলাম। এ সময় আমার কাছ থেকে ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আকবার কিছু কার্ড ছিনিয়ে নিয় যান। পরে তারা দাবি করছেন আমরা টিসিবির পণ্য নিয়ে অনিয়মন করছিলাম।’
একই সুরে কথা বলছেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ শাহ। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে সেগুলো মিথ্যা। রায়পুরের কৃষ্ণপুরের সোলার প্যানেলের জমি নিয়ে ঝামেলার কারণে প্রতিপক্ষ এই ঘটনা ঘটিয়েছে। টিসিবির পণ্য সুষ্ঠু ভাবে জনগনের মাঝে বিতরন করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জীবননগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তিথি মিত্র বলেন, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই। উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে ২৫টি কার্ড জব্দ করা হয়েছে। উত্তেজিত জনগণের থেকে জবাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় পরিষদ থেকে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে আনা হয়েছিলো। তার জবানবন্দি নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হবে ।