কমেডিয়ান ও লেখক জর্জ চার্লিন কমেডি করে বলেন, “বিজ্ঞানীরা আজ ঘোষনা করেছে-তারা অনীহা /উদাসীনতার ঔষধ আবিষ্কার করতে পেরেছে; কিন্তু কেউ তাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।” এক দম্পতির সুখেই দিন কাটছিল। হঠাৎ স্ত্রী খেয়াল করে-তার স্বামী দিন দিন তার প্রতি আগ্রহ কম দেখাচ্ছে। এর মাঝে স্বামীর চোখে সমস্যা হলো। স্ত্রী ভাবলো-তার জমানো টাকা দিয়ে স্বামীর চোখের অপারেশন করাবে। অপারেশন হলো-অপারেশন সাকসেসফুলও হলো। ব্যান্ডেজ খোলার পর-স্বামী সবকিছু পরিস্কার দেখতে পেল। কিন্তু স্ত্রী খেয়াল করলো-চার হাজার ডলার খরচ করে -সে যে আশায় অপারেশর করিয়েছে-তা ঠিক হয়নি। স্বামী-স্ত্রীকে আগের মতোই অনীহার দৃষ্টিতে দেখছে।
৪০ জন অফিসারের বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্সের শেষ সপ্তাহে কোর্স কো-অর্ডিনেটর সাহেব ইনস্ট্রাকটরদের মূল্যায়ন সীটের একটা করে কপি বিতরণ করলেন। তাতে প্রত্যেক ইনস্ট্রাকটারদের নামের পাশে নাম্বারের ঘর রয়েছে। প্রত্যেক ইনস্ট্রাকটরকে ২৫ নাম্বারের জন্য মার্কিং করতে হবে। মূল্যায়ন সীট পূরণ করে সবায় জমা করলেন। দেখা গেল ১০ জন ইনস্ট্রাকটরের মাত্র ২ জন মার্জিনাল নাম্বার পেয়ে পাশ করলেন। বাকীরা সব ফেল করলেন। কোর্স কো-অর্ডিনেটর প্রচন্ড রাগারাগি করতে লাগলেন এবং বললেন,“আমরা যদি আপনাদের এইভাবে যাচাই করে নাম্বার দেই-তাহলে আপনারা কয়জন পাশ করতে পারবেন? এ অব¯থায় ৪০ জন অফিসারই তাদের ভুল বুঝতে পারলেন এবং সবাইকে পূর্ণ নাম্বার দিয়ে দিলেন। কিছু মানুষ আছে-কোন কিছুই শিখতে চায় না। সে যা জানে-সেটাই সঠিক এবং পর্যাপ্ত। রোয়েনা বললো,“এটাকে ‘অনীহা’ বলে। উপরের গল্পের (দম্পতি) স্ত্রী ভেবেছিল চোখ অপারেশন করার কাজে বিশাল একটা অর্থ খরচ করলে-স্বামীর সহানুভূতি পাবে। কিন্তু সহানুভূতি অনীহাকে তাড়াতে পারে না। বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্সের ঘটনা দেখ-কোর্স কো-অর্ডিনেটর একবারও ভাবলো না যে-কেন তারা শিক্ষার্থীদের দেওয়া মূল্যায়নে ফেল করছে। তারা একে অপরের সাথে কম্প্রোমাইজ করে ‘মূল্যায়ন নাম্বার’ ভাগাভাগি করে নিল। মূলত: শেখায় অনীহা। রোয়েনা বললো,“ধর, আমি একটা সেমিনারে আছি। ‘কাস্টমার সার্ভিস ও আমাদের অঙ্গীকার’ আলোচনার বিষয়বস্তু। সকল বক্তা কথা বলার পর আমি স্পেশালি সময় চেয়ে নিয়ে পাঁচ মিনিট কথা বললাম। এর উপরে আমার দেশী-বিদেশী অনেক জার্নাল, ফিচার, বই, প্রবন্ধ পড়া আছে। সেটাই আমি শেয়ার করলাম। এই বিষয়টা দু’একজন বাদে সবায় তীব্র সমালোচনায় ফেটে পড়বে।” রোয়েনা বললো,“আমরা কোন কিছু শিখতে চাই না। আবার নতুন কিছু শুনতেও চাই না। এই অনীহার মূল কারন হলো-কার কাছ থেকে শিখছি?” আমি বললাম, এই ধরণের উদাসীন মানুষকে সঠিক পথে আনা একজন টীম লিডারের কাজ। ‘সব কিছু জানে’ বা ‘সব করে দেখেছে’-কোন ফল পায়নি এমন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মানুষ থাকতে পারে। তাদের ভুল হচ্ছে-তারা হাল ছেড়ে দিচ্ছে। নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে। তুমি দেখ-কোন রাজনৈতিক আন্দোলনকেই মানুষ প্রথম থেকে সমর্থন করে না । মানুষ আন্দোলনকে ঝামেলা মনে করে, কিন্তু এটা যে দরকার সেটা অস্বীকারও করে না। শুধুমাত্র নিরবিচ্ছিন্ন শান্তি খুঁজলে তো-তা পাওয়া যায় না। সব পরিবর্তনেরই একটা ঝাঁকুনি আছে। অফিস আদালতের পরিবর্তন আনতে গেলেও তোমার বিরুদ্ধে উদাসীন বা আত্মকেন্দ্রিক মানুষগুলো প্রথমে একজোট হবে। এই উদাসীন মানুষগুলো মধ্য গগনের সূর্যের আলোতে আর নিজেদেরকে লুকিয়ে রাখতে পারবে না। আলোচ্য রাস্তায় সামিল হবে। হয়তো একটু সময় লাগতে পারে। নেলসন ম্যান্ডেলা বলেন, “তুমি যদি শ্রোতা বোঝে এমন ভাষায় কথা বল, তাহলে সেটা তার মাথায় গিয়ে লাগবে, আর যদি তুমি তার ভাষায় কথা বল, তাহলে সেটা তার হৃদয়ে আঘাত করবে।” আমাদের এই উদাসীন মানুষের ভাষাটা বুঝতে হবে। জর্জ ইলিয়ট এই উদাসীন মানুষদের উদ্দেশ্যে বলেন, “শুধুমাত্র পরিতৃপ্তি এবং নিজের (স্বার্থে) কথা না ভেবে এই বিশাল পৃথিবীকে কেয়ার কর। নিজেরটা ভাবার পাশাপাশি অন্যদের দিকেও তাকাও। দেখ, অন্যরা সমস্যা বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে।” আর তোমাদের জন্য জন সি.ম্যাক্সওয়েল বলেন, “অধিকাংশ মানুষের ক্ষুদ্র অংশ তোমাকে এপ্রিসিয়েট করবে, তারা শুধু দেখে তাদের দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে।” এসো বদলায়, বদলে দেই আমাদের অফিসকে [পৃথিবীকে] -ইয়োর ড্রিম ইজ ইয়োর সিগনেচার। (চলবে)
মোঃ বশির আহম্মেদ
একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মী